শালবনির জমি ফেরাতে আগ্রহী জিন্দাল গোষ্ঠী, কিন্তু কী হবে সেখানে
শালবনির বাড়তি জমি সরকারকে ফিরিয়ে দিতে আগ্রহী জিন্দাল গোষ্ঠী। তারা রাজ্য সরকারকে ওই জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরিতে সাহায্য করতে চায়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে,জানিয়েছে গোষ্ঠী
শালবনির বাড়তি জমি রাজ্য সরকারকে ফিরিয়ে দিতে আগ্রহী জিন্দাল গোষ্ঠী। তারা রাজ্য সরকারকে ওই জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরিতে সাহায্য করতে চায়। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে জিন্দাল কর্তৃপক্ষ। শিল্পমহলের একাংশের মতে, এ ধরনের প্রস্তাব নজিরবিহীন।
বুধবার জেএসডব্লিউ সিমেন্টের তৈরি পণ্য কলকাতার বাজারে ছাড়লেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ জিন্দাল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, জমি আঁকড়ে রাখার নীতিতে বিশ্বাসী নন তাঁরা। বরং বাড়তি জমি শিল্পায়নের কাজে লাগলে খুশি হবেন জিন্দলরা।
শালবনিতে ইস্পাত কারখানা তৈরির প্রকল্প বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেখানে জিন্দাল গোষ্ঠীর বিদ্য়ুৎকেন্দ্র, সিমেন্ট ও রং তৈরির কারখানার জন্য ১৫০০ একরের বেশি জমি লাগবে না। এই জমিতে বাড়তি ২৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে চায় সজ্জন জিন্দালের নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠী। সোলার প্যানেল, সিমেন্ট কারখানার সম্প্রসারণ এবং রং কারখানার জন্য এই টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে জিন্দাল গোষ্ঠী। এর বাইরেও সংস্থার হাতে প্রায় ৩০০০ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকছে। এই বাড়তি জমি রাজ্য সরকারকে ফিরিয়ে দিতে আগ্রহী জিন্দাল গোষ্ঠী। শুরু ফিরিয়ে দেওয়া নয়, সেই জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করতে রাজ্য সরকারকে সাহায্য করতে চায় জেএসডব্লু গ্রুপ। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাদের কথা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ জিন্দাল।
২০০৮ সালে মোট ৪৩৩৪ একর জমি হাতে পায় জিন্দাল গোষ্ঠী। সেখানে ৩৫০০০ কোটির ইস্পাত এবং বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ইস্পাত প্রকল্পের মন্দার কারণে জিন্দাল গোষ্ঠী সেই প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসে। পার্থ জিন্দাল জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে থাকা মোট ৪৩৩৪ একরের মধ্যে ১৩৫ একর জমিতে তৈরি হয়েছে সিমেন্ট কারখানা। এই কারখানা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজন আরও ৭৫ একর। রং কারখানার জন্য ৩০ একর জমি বরাদ্দ হয়েছে। এ ছাড়া, 'ফিনিশিং স্টিল', সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্মী আবাসন ইত্যাদি মিলিয়ে আরও ১২০০ একর জমি লাগবে। মোট ১৫০০ একর হাতে রেখে বাকি ২৮৩৪ একর ফিরিয়ে দিতে চান তাঁরা।
এবছরের ৬ জানুয়ারি সিমেন্ট কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২.৪ মিলিয়ন টনের এই সিমেন্ট কারখানা এমাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করেছে। জিন্দাল গোষ্ঠী প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এই কারখানার জন্য। এই কারখানায় উৎপাদিত সিমেন্টের পরিমাণ শীঘ্রই দ্বিগুণ করার জন্য আরও বিনিয়োগ করবে জিন্দাল গোষ্ঠী।
২০১৮ সালে রং কারখানার জন্য প্রায় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ জিন্দাল। ২০১৯-২০-র মধ্যে সেই রং কারখানা উৎপাদন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ২০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথাও জানিয়েছেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর। প্রথম পর্যায়ে ১০০ মেগাওয়াটের ইউনিট স্থাপন করা হবে। সেই প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৮০০ থেকে ৮৫০ কোটি টাকা।
শালবনি প্রকল্পের জমিদাতারা কিন্তু কারখানা তৈরির পক্ষেই মত দিয়েছেন। তাঁদের মতে স্থানীয় মানুষ শিল্পের আশাতেই জমি দিয়েছিলেন। সেই জমিতে তাঁরা শিল্প চান বলেই জানিয়েছেন। একই সঙ্গে জমিদাতাদের পরিবার পিছু একজনের চাকরির দাবিও করেছেন তাঁরা।
বছর তিনেক আগে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কেনা জমি সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা প্রথম বলেন জিন্দাল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দল। তখন সজ্জনের এই সিদ্ধান্তকে 'বিগ মেসেজ' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার কিংবা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শিল্প দফতর সূত্রের খবর, বাড়তি জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব এখনও সরকারের কাছে জমা পড়েনি।