হাসি দিয়ে দিন শুরু করুন, শুতে যাওয়ার আগেও হাসুন, কী ফল পাবেন, জানুন
'রামগরুড়ের ছানা, হাসতে তাদের মানা, হাসির কথা শুনলে বলে, হাসব না-না, না-না।'- সুকুমার রায়ের এই ছড়ার কথা অধিকাংশ বাঙালির কাছে অপরিচিত নয়।
'রামগরুড়ের ছানা, হাসতে তাদের মানা, হাসির কথা শুনলে বলে, হাসব না-না, না-না।'- সুকুমার রায়ের এই ছড়ার কথা অধিকাংশ বাঙালির কাছে অপরিচিত নয়। হাসলে যে কত ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সমাধান হয়, তা এখনও অনেকেই বোঝেন না। বিশেষ করে মানসিক চাপমুক্তির ক্ষেত্রে হাসির নাকি কোনও বিকল্প নেই। বলা হচ্ছে দিন ও রাতের দুটো সময় হাসতে পারলে এবং হাসার সাধনা করতে পারলে সেই মানুষের থেকে সুখি মানুষ আর কেউ নন। তিনি নাকি নিজেই বুঝতে পারবেন তাঁর জীবনের পরিবর্তনগুলিকে।
বলা হচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘরের মেঝেতে বসে পড়তে। বসাটা এমন হতে পারে যাতে সেটা ঘরের সেন্টার পয়েন্ট হয়। এবার এমন একটা অনুভূতি মনের মধ্যে আনতে হবে যাতে মনে হয় পায়ের নিচ থেকে হাসিটা শরীরের উপরের দিকে উঠে আসছে। এরপর আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করতে হবে। মনের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে এমন এক অনুভূতি যাতে মনে হয় পা-এর নিচ থেকে হাসিটা উঠে আসছে। মনে হবে যেন সরীসৃপের মতো হাসির অনুভূতিটা শরীর বেয়ে উঠে আসছে। এই অনুভূতি যত উপরের দিকে উঠবে ততই তা চোখের সামনে ভেসে উঠবে। পেটটা একটা অস্বাভাবিকরকমের ঝাঁকুনি দিতে থাকবে। অনুভব করা যাবে হাসিটা ক্রমেই হৃদয় ছুঁয়ে আরওউপরের দিকে উঠছে। গলা, ঠোঁঠ-এ এর প্রভাব অনুভব করা যাবে।
অনেকেই 'লাফিং ক্লাব'-এর কথা বলবেন এক্ষেত্রে। কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের মতে জোর করে চিৎকার করে করে হাসা-র মধ্য়ে শরীর ও মনে স্বাভাবিক প্রতিবর্তক্রিয়াগুলো কাজ করে না। ফলে এই হাসি একটা যান্ত্রিক হিসাবেই থেকে যায়। শরীর ও মন সেভাবে হালকা হয় না। চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘরের মেঝেতে বসে যখন হাসিকে ঠোঁটের কাছে অনুভব করবেন তখন দেখা যাবে ঠোঁট কাঁপছে এবং আপনি হাসার চেষ্টা করছেন। হাসি না আটকানোরই কথা বলা হচ্ছে এক্ষেত্রে। বরং আস্তে ঠোঁটকে স্বাভাবিক হাসির মধ্যে পর্যবসিত করুন। চোখ বন্ধই রাখতে হবে। হাসতে শুরু করলে আস্তে আস্তে নিজের চেতনায় একটা শিশুকে জাগিয়ে তুলতে। এমন শিশুর ছবি প্রত্যক্ষ করুন মনে মনে যে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। এই প্রক্রিয়াটাকে অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য চালিয়ে যেতে হবে।
প্রথম তিন দিনে কিছু পরিবর্তনই খেয়াল করা যাবে না। এই অভ্য়াসের পরিমাণ যত বাড়বে ততই বোঝা যাবে শারীরিক ক্রিয়া ও মনের পরিবর্তনকে। যখনই এই অভ্য়াস কেই করবেন তখন তাঁকে বারবার হাসি-র অনুভূতিকে পা-এর নিচে থেকে জাগিয়ে মাথায় নিয়ে আসতে হবে। এটাও একধরনের মনসংযোগ বা মেডিটেশন। মনে করা যেতে পারে একটা গাছের জন্ম থেকে তাতে ফুঁটে ওঠা ফুল যেভাবে বিকশিত হয় সেভাবেই হাসির অনুভূতি-কে মনের মধ্যে প্রবাহমান করতে হবে। এই অনুভূতি যখন ১০০ শতাংশ সফল হবে তখন নিজে থেকেই বোঝা যাবে যেন একটা গাছের উপরে একটা ফুলের অবশেষে বিকাশ ঘটল।
যখনই এই অভ্য়াস-এ বসবেন তখন যেন শরীরের ভিতরে হয়ে চলা ঝাঁকুনি-কে অনুভব করতে পারেন। এই ঝাঁকুনির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক প্রতিবর্ত ক্রিয়াগুলো জাগিয়ে হাসা-টাকেও অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
সকালে ওঠে এই অভ্য়াসটা রোজ অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য করুন। এমনকী রাতে শুতে যাওয়ার আগে ১০ মিনিট এই অভ্য়াসটা করুন। সকালের এই হাসির অভ্যাস দেখবেন আপনার দিনটাকে ঝলমলে করে তুলবে। চারিদিকের সবকিছু-কেই খুব সহজে গ্রহণ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা গোটা দিনটাকেই প্রবল উপভোগ্য বলে মনে হবে। আর রাতে শুতে যাওয়ার আগে এই অভ্য়াস সারা দিনের ক্লান্তি ও দ্বেষকে শরীর ও মন থেকে দূরে ছুড়ে ফেলবে। ঘুম-ও ভালো হবে এবং রাতের স্বপ্নও হবে অনেক সুখকর। তাই দেরি না করে আজ থেকে শুরু করে দিন হাসির-এর মেডিটেশন যাতে জুড়ে দিন শরীর ও মনকে। ওসো ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডশেন সম্প্রতি একটি বই প্রকাশ করেছে, যার নাম 'দ্য বুক অফ লাফটার'। সেখানেও হাসির এই মহাষৌধের কথা বর্ণিত করা হয়েছে।