জগন্নাথ দেবের প্রসাদকে কেন ‘মহাপ্রসাদ’ বলা হয়? জানুন অবাক করার মতো কারণ
আষাঢ় মাসে ওড়িশার পুরীর রথযাত্রার বিশ্বজুড়ে নাম রয়েছে। এই সময় জগন্নাথ দেবের রথ বের হয়। ভগবান বিষ্ণুর একাধিক অবতারের মধ্যে ভগবান জগন্নাথের এই রথযাত্রা খুবই জনপ্রিয়। এতে যোগ দেওয়ার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে লোক আসে। রথযাত্রার মতো পুরীর প্রসাদও খুব বিখ্যাত। একে 'মহাপ্রসাদ' বলা হয়। আজ ১ জুলাই থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে গিয়েছে যা চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। রথযাত্রার দিন জেনে নিন যে কেন জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদকে মহাপ্রসাদ বলা হয় এবং এটা তৈরি করার প্রক্রিয়ার বিশেষত্ব কী?
গঙ্গা–যমুনার জল দিয়ে তৈরি হয় এই ‘মহাপ্রসাদ’
জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরে তৈরি প্রসাদ তৈরিতে শুধু বিশুদ্ধতারই খেয়াল রাখা হয় না, এটি তৈরিতে বিশেষ ধরনের জলও ব্যবহার করা হয়। রান্নাঘরের কাছে দুটি কূপের জল থেকে ঈশ্বরের ভোগ প্রস্তুত করা হয় এবং এই কূপের নাম গঙ্গা-যমুনা। এই ভোগ তৈরিতে শুধুমাত্র এই গঙ্গা-যমুনা কূপের জল ব্যবহার করা হয়, যা প্রচুর পরিমাণে প্রস্তুত করা হয়।
৮০০ জন মিলে তৈরি করে এই ‘মহাপ্রসাদ’
জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রান্নাঘর বলা হয়। এখানে প্রচুর পরিমানে রোজ ভোগ (মহাপ্রসাদ) তৈরি করা হয়। ভোগের পরিমাণ এতটাই বেশি হয় যে এটাকে তৈরি করার জন্য একবারে রান্নাঘরে কমপক্ষে ৮০০ জন লোককে কাজ করতে হয়। এরমধ্যে প্রায় ৫০০ জন রাধুঁনি থাকেন এবং তাঁদের সহায়তা করার জন্য আরও ৩০০ জন কর্মী রান্নাঘরে থাকেন।
মহাপ্রসাদ রান্না করার পদ্ধতি আজব
জগন্নাথ মন্দিরে তৈরি মহাপ্রসাদ রান্নায় শুধুমাত্র মাটির পাত্র ব্যবহার করা হয়। এ জন্য এই পাত্রগুলো একটির ওপরে আরেকটি রাখা হয় এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো ওপরে রাখা পাত্রের খাবার প্রথমে রান্না হয় এবং নিচের দিকে রাখা পাত্রের খাবার শেষ পর্যন্ত রান্না হয়। মনে করা হয়, জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরে মা লক্ষ্মীর তত্ত্বাবধানে পুরো খাবার তৈরি করা হয়। এই মহাপ্রসাদের মহিমা এমন যে, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তা পাওয়ার জন্য আসেন।
রান্নাঘরে নেই বিদ্যুৎ
এই রান্নাঘরে রান্নার জন্য কোনও বিদ্যুৎ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর অনেকগুলি তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয়। রান্নার ঠাকুররা সেখানে এসেই রান্না করেন। প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষের রান্না হয় এখানে । কিন্তু এই মহাপ্রসাদের এমনই গুণ যে, কোনও দিন সেখানে প্রসাদ বাড়তিও হয় না, আবার নষ্টও হয় না। সে ১০ হাজার লোকই খান, আর ২ লক্ষই হোন না কেন।
জগন্নাথ দেবকে রথের দিন দেওয়া হয় ৫৬ টি পদ
সেবকরা এখানে বংশানুক্রমে কাজ করেন । ১২ বছর হলেই ট্রেনিং শুরু হয়ে যায় । এরপর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জগন্নাথের ভোগ রান্নায় নিজেদের জীবন অতিবাহিত করেন তাঁরা । প্রতিদিন রান্না হয় ১০০-র বেশি পদ । তবে রথের দিন জগন্নাথের ভোগে থাকে বিশেষ এই ৫৬টি পদ ।