
জানেন কি কৌশিকী অমবস্যার রাতে কিছুক্ষণের জন্যে খুলে যায় স্বর্গের দরজা! রইল সেই ভয়ঙ্কর কাহিনী
তন্ত্র ও শাস্ত্র মত অনুযায়ী কৌশিকী অমবস্যার গুরুত্ব অন্যান্য সমস্ত অমাবস্যার থেকে একটু আলাদা থাকে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন রীতি নীতি মেনে এই অমাবস্যার পুজো করা হয়। মা কালীকে এই অমাবস্যা তিথিতে বিশেষভাবে বীরভূমের তারাপীঠ মন্দিরে পুজো করা হয়।
মূলত, এই কৌশিকী অমাবস্যা ঘিরে বহু ঘটনার কথা শোনা যায়। ২০২১ সালে কৌশিকী অমাবস্যা ৭ সেপ্টেম্বর পড়েছে। মূলত , বাংলা সময় ২১ ভাদ্র ১৪২৮ সালে এই দিনক্ষণ পড়েছে।
কৌশিকী অমাবস্যার মূল তিথি ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭:০৭ মিনিট থেকে শুরু হবে। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালের সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে ছাড়বে এই অমাবস্যা।

রাতে খুলে যায় স্বর্গের দরজা!
এই অমবস্যা অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা। অনেকে বলেন, এই অমবস্যা তিথি নাকি অনেক জাগ্রত। আর অমবস্যাতে সিদ্ধি লাভ হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, পুণ্য অর্জনও হয়ে থাকে। আর সেই কারনে এই তিথিতে বহু মানুষ সিদ্ধি লাভের আশাতে তারাপীঠে ছুটে যান।
কিন্তু এবারও করোনা পরিস্থিতিতে কৌশিকী অমবস্যা তিথিতে এবার বন্ধ থাকছে তারাপীঠ মন্দির। শুক্রবার থেকে মন্দির বন্ধ রাখা হয়েছে। অমাবস্যা কেটে গেলে ফের খুলবে মন্দির। তবে প্রত্যেক বছরের মতো এবারও তান্ত্রিকরা এই অমবস্যাকে তন্ত্র সাধনার জন্যে বেছে নেবেন।
এই সাধনা গোটা রাত জুড়ে চলে। আর এই সাধনাতে সংসারি তাঁদের মনস্কামনা পূরণ করতে আসেন। অনেকে বলেন, কৌশিকি অমবস্যার রাতে নাকি কিছু সময়ের জন্যে খুলে যায় স্বর্গের দরজা!

সিদ্ধ হওয়ার জন্যে এই অমবস্যাকে বেছে নেওয়া হয়
কঠিন একটি সাধনা তন্ত্র। আর তন্ত্রের মাধ্যমে সিদ্ধি পাওয়ার জন্যে সাধকরা গোটা রাত ধরে শস্মানে কাটান। সেখানে তন্ত্র সাধনাতে মগ্ন হন সাধকরা।
অনেকে বলেন, সারা রাত ধরে শ্মশানে চলা সাধনা ফলদায়ী হয়। অনেকে বলেন মণিকর্ণিকা ঘাট নাকি জাগ্রত শশ্মানের মধ্যে একটি। আর বাংলাতে বীরভূম জেলাতে তারাপীঠে শশ্মানকে মহাশশ্মান বলা হয়ে থাকে।
এই শশ্মানে বসে সাধনা একটা উচ্চস্তরে গিয়ে পৌঁছয়। তারাপিঠে মা তাঁরা রয়েছেন। প্রচলিত রয়েছে ভগবান রাম, বুদ্ধ, মহাবীর, ঋষি বৈরিষ্ঠ, দেবগুরু বৃহস্পতি, মহর্ষি দধীচি সহ একাধিক গুণী মানুষরা এই জায়গাতে সাধনার মাধ্যমে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
তারাপিঠে বামা ক্ষ্যাপা সাধনার মাধ্যমে এখানে সিদ্ধি লাহ করেছিলেন। এমনকি মা তাঁরা স্তন্য পান করিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, এই তারাপীঠকে ঘিরে একাধিক কাহিনী রয়েছে।

কৌশিকী অমাবস্যার কাহিনি
শাস্ত্র মতে, পুরাকালে একবার একবার কঠিন সাধনা শক্তিতে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করেন অসুর শুম্ভ ও নিশুম্ভ। ব্রহ্মা তুষ্ট হতেই তাঁদের বর দেন। তিনি বলেন, জগতে কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারেবন না। কোনও অ-যোনি থেকে বিমূর্ত হওয়া নারীশক্তির হাতেই শেষ হবে শুম্ভ নিশুম্ভ। যে নারী মাতৃ গর্ভ থেকে দন্ম নেননি , তিনিই দমন করতে পারবেন এই দুই অসুরকে।

শিবকে দুধ পান করানো হয়
সতী রূপে পার্বতীর আত্মাহুতির পর তিনি কালো বর্মে কালিকা রূপ ধারণ করেন। অন্যদিকে অসুর শুম্ভ নিশুম্ভের সংহারে ত্রস্ত তখন ধরনী। এই অবস্থায় স্বয়ং শিব , তখন পার্বতীকে বলেন এই অসুরদের হত্যা করার। তখনই কালিকা তাঁর শক্তি নিয়ে শুম্ভ নিশুম্ভকে দমন করতে উদ্যত হন।
সেই সময় মানস সরোবরে দেহের সমস্ত কালো ধুয়ে দেবী কৃষ্ণবর্ণ নিয়ে কৌশিকী রূপে অবতীর্ণ হন। আর শুম্ভ নিশুম্ভকে বিনাশ করেন। অন্যদিকে আরও প্রচলিত রয়েছে যে, ভগবান শিব সমুদ্র মন্থনের সমুদ্র থেকে উঠে আসে বিষ। আর সেই বিষ পান করেন মহাদেব। আর সেই সময়ে মাতা স্বরূপে শিবকে অমৃতময় দুগ্ধ স্তন পান করিয়েছিল।