চোখের জলে উমা বিদায় দশমীতে, জানেন কি বিজয়া দশমীর তাৎপর্য কি
জানেন কি বিজয়া দশমীর তাৎপর্য কি
দুর্গাপুজো দোরগোড়ায়। পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। নিম্নচাপের ভ্রুকুটির মাঝেই দুর্গাপুজো নিয়ে সকলেরই উত্তেজনা তুঙ্গে। মোটামুটি পঞ্চমী থেকেই বাঙালির পুজো শুরু হয়ে যায়। এরপর ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমী। চারদিনের পর আমাদের বাড়ির উমা দশমীতে সকলকে চোখের জলে কাঁদিয়ে বিদায় নেন। এই দিনটিকে অনেকেই বিজয়া দশমী বলে থাকেন। তবে এই দিনটিকে বিজয়া দশমী বলার সঠিক অর্থ আজও জানেন না অনেকেই।
দশমীতে স্বামীগৃহে ফিরে যান উমা
'দশমী' কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ ও মনখারাপ মিশ্রিত একটি অনুভূতি। দশমী এলেই বাঙালির মনে আসে মায়ের ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটা বছর। সাধারনত দুর্গাপুজো শেষ হয় দশমীর মাধ্যমেই। এই দিনেই মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। 'দশমী' কথাটির সাধারন অর্থ খুবই সহজ। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে পিতৃগৃহ ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে পাড়ি দেন দেবী। সেই কারণেই এই তিথিকে 'বিজয়া দশমী' বলা হয়।
বিজয়া দশমার তাৎপর্য
তবে দশমীকে 'বিজয়া' বলার কারণ খুঁজলে অনেক পৌরাণিক কাহিনী পাওয়া যাবে। পুরাণের মহিষাসুর বধ কাহিনীতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তাঁর বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিলেন মা দুর্গা। তাই তাকে 'বিজয়া' বলা হয়। এছাড়াও শ্রীশ্রীচণ্ডী কাহিনী অনুসারে, দেবীর আবির্ভাব হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে। পরে শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর বধ করেছিলেন তিনি। তাই বিজয়া দশমী এই বিজয়াকেই চিহ্নিত করেন।
দশেরা উদযাপন
বাংলায় যেমন 'দশমী'কে বিজয়া দশমী বলা হয় তেমনি উত্তর ও মধ্য ভারতে এই দিনে দশেরা উদযাপিত হয়। তবে তার তাৎপর্য সম্পূর্ণ আলাদা। 'দশেরা' শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ 'দশহর' থেকে। যার অর্থ দশানন রাবণের মৃত্যু। বাল্মীকি রামায়নে বলা হয়েছে, আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতেই লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করেছিলেন রাম। কথিত আছে, রাবণ বধের পরে আশ্বিন মাসের ৩০ তম দিনে অযোধ্যা প্রত্যাবর্তন করেন রাম, সীতা, ও লক্ষণ। রাবণ বধ ও রামচন্দ্রের এই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যেই যুথাক্রমে দশেরা ও দীপাবলি পালন করা হয়ে থাকে।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে অন্য কথা
তবে দুর্গাপুজোর শেষ দিন হিসাবে দশমী শোকের ছায়া বহন করলেও শাস্ত্রে এই বিষয়টিকে সেই ভাবে দেখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের একটি কাহিনী উল্লেখযোগ্য। রানী রাসমণীর জামাতা মথুরবাবু একসময় আবেগপ্রবন হয়ে দশমীর দিনেও মা দুর্গাকে বিসর্জন দেবেন না বলে জেদ ধরে বসেন। তখন রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বোঝান, বিজয়ার অর্থ দেবীমা ও সন্তানের বিচ্ছেদ নয়। তিনি আরও বলেন যে, মা কখনও তার সন্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন না। এতদিন মা দালানে বসে পুজো নিয়েছেন এরপর মা হৃদয়মন্দিরে বসে পুজো নেবেন। এরপরেই মথুর শান্ত হন এবং বিসর্জন হয় মা দুর্গার প্রতিমা।
বিজয়া দশমীতে মিষ্টিমুখের চল
মা দুর্গার বিসর্জনের পরই বাংলায় প্রচলিত রীতি মেনে ছোটরা বড়দের পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নেন, সমবয়সীরা কোলাকুলি করেন। সঙ্গে চলে দেদার মিষ্টিমুখ। ঘরে ঘরে তৈরি হয় নারকেল নাড়ু, মুড়কি। বিভিন্ন মিষ্টি সহযোগে চলে খাওয়া-দাওয়া। আর তারই সঙ্গে অপেক্ষা থাকে পরের বছর মায়ের আসার।