ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ফলে বাংলার ১৪টি জেলার কৃষিক্ষেত্র সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে
একদিনের বিধ্বংসী ঝড় আম্ফান পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ জেলা তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে ১৪টি জেলায় কৃষিক্ষেত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই রেকর্ড সর্বকালের রেকর্ডকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
হুগলি ও বীরভূম জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি
প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হুগলি ও বীরভূম জেলায় সবচেয়ে বেশি ৬০০ কোটি ও ৪৬২ কোটি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি আরও জানান যে পূর্ব মেদিনীপুর, উপকূলবর্তী জেলায় প্রায় ৪৭,০০০ হেক্টর ফসলের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, অন্যদিকে ৭০ ও ৫০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলাতে। অন্যান্য জেলা থেকেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে কৃষি দপ্তর।
১৪টি জেলার কৃষিক্ষেত্র নষ্ট হয়েছে
আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রায় ১৪টি জেলার কৃষিক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আম্ফানের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহাল হয়ে যাওয়ায় আমরা এখনও সব জেলা থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারিনি। কিন্তু প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে যে এই ক্ষতি সর্বকালের রেকর্ডকে ভেঙে দেবে।' মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদাপ মজুমদার ও রাজ্যের সচিবালয়ের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে শুক্রবার বৈঠক করেন কৃষি মন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ফলে যে উদ্যান ও কৃষিক্ষেত্রে যে ক্ষতি হয়েছে তার রিপোর্ট একসপ্তাহের মধ্যে তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীকে জমা দিতে হবে।
ধান চাষের অধিকাংশ জমি জলের নীচে
কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পূর্ব মেদিনীপুরে এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ৩০,০০০ হেক্টর ধান চায়ের জমি, ১২,০০০ হেক্টর তিল চাষের জমি ও ৫,০০০ হেক্টর সবজির জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি এও জানিয়েছেন, রাজ্যের পান চাষও এই ঝড়ের জন্য ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ওই আধিকারিক বলেন, ‘কৃষকরা আশা করেছিলেন যে লকডাউন উঠলে তাঁরা তাঁদের ফসল বাজারে বিক্রি করে নিজেদের ক্ষতিপূরণ মেটাবেন। কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড় কৃষকদের সব আশায় জল ঢেলে দিল।' বীরভূমের জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তার পরিসংখ্যান তৈরি হয়ে গিয়েছে এবং আর দু-একদিনের মধ্যেই চিত্রটা স্পষ্ট হবে।
নষ্ট হয়েছে বোরো ধান
বর্ধমানে ধানচাষের অধিকাংশ জমি প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। সরকারিভাবে জানা গিয়েছে, ‘আমরা ৩০ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছি। বাকিটা জলের নীচে। পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।' জানা গিয়েছে, বাঁকুড়াতে বোরো ধান ও সবজি ক্ষেতের বিপুল ক্ষতি হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ে। কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘প্রায় ৫০ শতাংশ বোরো ধান ছিল ক্ষেতে। কিন্তু গত দু-তিনদিন ধরে সেগুলি জলের নীচে। পুরোটাই ক্ষতি হয়ে গেল।'
ক্ষতি হয়েছে আম বাগান ও ফুল চাষের
ধানের পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে আম বাগানেরও। এই ঘূর্ণিঝড়ে মূর্শিদাবাদের আম বাগানেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে জানা গিয়েছে, ‘এই ঘূর্ণিঝড়ের দরুণ ৩০ শতাংশ আম গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যায়। কৃষকদের পক্ষে লাভের মুখ দেখা এখন খুবই কঠিন। বরং তাঁরা আরও ক্ষতির মুখে পড়লেন।' হুগলি ও হাওড়ার ফুল চাষিরাও এই ধড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২৬ মে কৃষিমন্ত্রী পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন।