নিরাপত্তার বলয়ে মোড়া পাহাড় সুন্দরী জুলুক পূর্ব সিকিমের প্রাণ
নিরাপত্তার বলয়ে মোড়া পাহাড় সুন্দরী জুলুক পূর্ব সিকিমের প্রাণ
করোনা ভাইরাসের আবহে নিরিবিলি, নিঝুম জুলুক পর্যটকদের জন্য সেরা ঠিকানা হতে পারে। সিকিমের হেলমেট হিসেবে পরিচিত পূর্বের এই অংশ সৌন্দর্য্যে ভুবন ভোলাতে সিদ্ধহস্ত। তবে সমস্যা এখানে নিয়ম। কাছেই ভারত ও তিব্বতের সীমান্ত। ফলে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা বলয়ে মোড়া এ এক ছোট্ট গ্রাম। পূর্ব সিকিমের শেষ প্রান্তের যে স্থানে পৌঁছতে পোড়াতে হয় বিস্তর কাঠখড়। নিতে হয় সেনাবাহিনীর অনুমতি। তারই আড়ালে দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা জুলুক যেন স্বকীয় সৌন্দর্য্যে ভাস্বর।
অবস্থান ও অনুমতি
সমুদ্রতল থেকে ৯৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জুলুক, বিখ্যাত সিল্ক রুটের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পংয়ের সঙ্গে তিব্বতির লাসা সংযোগকারী পথের সেরা সৌন্দর্য্য নিহিত পূর্ব সিকিমের এই স্থানেই। সিকিমের অন্যতম সুন্দর এই স্থান ভারত ও তিব্বত সীমান্তের কাছে দাঁড়িয়ে থাকায়, সেখানে পৌঁছনো যথেষ্ট ঝক্কির কাজ। প্রথমে কলকাতা থেকে ট্রেন, বাস বা বিমানে পৌঁছতে হবে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে বাস বা প্রাইভেট গাড়িতে ডেস্টিনেশন হবে গ্য়াংটক। সিকিমের রাজধানীতে থাকতে হবে অন্তত একরাত্রি। কারণ সেখান থেকেই সোনায় মোড়া জুলুকে পৌঁছনোর বিশেষ অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে। কেউ কেউ রাংলি থেকেও জুলুকে পৌঁছনোর অনুমতি সংগ্রহ করে থাকেন।
কীভাবে পৌঁছবেন
গ্যাংটক থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত জুলুকে সড়ক পথে পৌঁছতে চার ঘণ্টা সময় লাগার কথা। কালিম্পং থেকেও এই স্থানের দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। দুই স্থান থেকেই জুলুকে পৌঁছনোর জন্য গাড়ি বুক করা যায়। যাত্রাপথে সোঙ্গো লেক এবং বাবা হরভজন সিংয়ের মন্দির না দেখলে আক্ষেপ থেকে যাবে।
দর্শনীয় স্থান
১) জুলুক থেকে বিখ্যাত জিক-জ্যাক রাস্তা ধরে ১৪ কিলোমিটার ওপরে উঠলেই পৌঁছে যাওয়া যায় থাম্বি ভিউ পয়েন্টে। সমুদ্রতল থেকে ১১,২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্টভাবে চোখে ধরা দেয়।
২) থাম্বি ভিউ পয়েন্ট থেক চার কিলোমিটার চড়াই পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় লিংথাম গ্রামে। সমতল থেকে ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই স্থানকে সাজিয়ে রেখেছেন তিব্বতীরা।
৩) লিংথাম থেকে রাস্তা দুই ভাগ হয়েছে। বাঁ-দিকের রাস্তা চলে গিয়েছে শান্ত-সমাহিত নাথাং ভ্যালির দিকে। যেখানে রয়েছে বাবা হরভজন সিংয়ের পুরনো মন্দির ও দিগন্ত বিস্তৃত সৌন্দর্য্য। অন্য রাস্তা ধরে পৌঁছে যাওয়া টুকলা। যে স্থান ব্রিটিশ ও তিব্বতীদের মধ্যে ১৯০৩ সালের রক্তক্ষয়ী সমরের সাক্ষী।
৪) সেখান থেকে আরও কিছুটা এগিয়ে পৌঁছে যাবেন কুপুপ। নতুন বাবা মন্দির এবং মেমেঞ্চু লেক এই স্থানের মূল আকর্ষণ।
কখন যাবেন
অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে তীব্র বরফপাতের সাক্ষী থাকে জুলুক। এই সময় এলাকার তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত জুলুকের আবহাওয়া থাকে মনোরম। এই সময়ই সিকিমের হেলমেট পরিদর্শনের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। তবে অনুমতির বিষয়টি যেন মাথায় থাকে।
ছবি সৌজন্য:ইউটিউব