মুকুলের পর দায়িত্বে রাজীব! ২০১৮-র ব্যর্থতা কি ঘুচাতে পারবে ২০২৩-এর টিম-টিএমসি
ত্রিপুরায় রাজ্য কমিটি গঠন করে ২০২৩-এর লক্ষ্য স্থির করে দিল তৃণমূল। গোয়ার পর ত্রিপুরাতেও বিধানসভা নির্বাচনী যুদ্ধ নামছে তারা। এবার বাংলার প্রাক্তনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ত্রিপুরার দায়িত্বে রেখে তৃণমূল ঘূঁটি সাজাচ্ছে। ২০১৮-র নির্বাচনের আগে মুকুল রায়ের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় তৃণমূল ইউনিট তৈরি করেছিল। এবার ২০২৩-এর যুদ্ধে তৃণমূলের নেতৃত্বে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাতারাতি তৃণমূল হয়েছিল বিরোধী দল
২০১৬-য় বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর ত্রিপুরা থেকে বাম শাসনের অবসান ঘটাতে তৃণমীলের ইউনিট তৈরি করেছিলেন মমতা বন্যোলপপাধ্যায়। দলের তৎকালীন সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায়কে দিয়েছিলেন দায়িত্ব। মুকুল রায়ের যোগ্য নেতৃত্বে কংগ্রেসের ফুল পরিষদীয় টিমকে ভেঙে রাতারাতি তৃণমূল হয়ে গিয়েছিল ত্রিপুরার প্রধান বিরোধী দল।

মুকুল-সুদীপ ব্যর্থ ২০১৮-র নির্বাচনে
কংগ্রেসকে ভেঙে মুকুল রায়ের পরিচালনায় ও সুদীপ রায় বর্মনের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় তৃণমূল পথ চলা শুরু করলেও ২০১৮-র নির্বাচনের আগে বিজেপির আবির্ভাব হয়। আর পুরো তৃণমূলের প্রায় টিমটাই বিজেপিতে যোগ দেয়। সুদীপ রায় বর্মনরা বিজেপিতে পাড়ি জমানোয়, বিজেপি ইতিহাস গড়ে ২৫ বছরের সিপিএম তথা বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেয়। তৃণমূল ২ বছর আগে টিম গড়েও ফায়দা তুলতে পারেনি। শোচনীয় ব্যর্থ হয় তাদের মনোরথ।

ফের কংগ্রেসকে ভেঙে টিম তৃণমূলের
এবার বাংলায় ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পের তৃণমূল পা রাখে ত্রিপুরায়। ফের কংগ্রেসকে ভেঙে তারা টিম তৈরি করে। সম্প্রতি পুরসভা নির্বাচনেও তৃণমূল অংশ নেয়। বিজেপিকে হারাতে সক্ষম না হলেও, তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ভোটের নিরীখে। কিন্তু বিজেপিকে তারা এখনও ভাঙতে সফল হয়নি।

রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর গুরু দায়িত্ব
উল্টে কংগ্রেসকে ভেঙে তৃণমূল বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে কংগ্রেস ফের ঘর গুছনোর চেষ্টা শুরু করে দেয় ত্রিপুরায়। সুদীর রায় বর্মনদের ঘর ওয়াপসি হয়। তাতে তৃণূমূল ঝটকা খেয়েছে। তবে তৃণমূল রণে ভঙ্গ দিতে নারাজ। তৃণমূল মনে করছে মানুষ তাদের সঙ্গে রয়েছে। এবার তারাই জয়ী হবে। সেইমতো রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইনচার্জ করে রাজ্য কমিটি গঠন করে ফেলল তৃণমূল।

ত্রিপুরা তৃণমূলের ফুল টিম ২০২৩-এর লক্ষ্যে
তৃণমূলের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সভাপতি করা হল ত্রিপুরার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক সুবল ভৌমিককে। ৬ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলীবিশিষ্ট রাজ্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই রাজ্য কমিটিতে মোট সদস্য সংখ্যা ১৩২। আসন্ন ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনকে টার্গেট করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে রাজ্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজ্য কমিটির সম্পাকমণ্ডলীতে রয়েছেন সুস্মিতা দেব, আশিস দাস, আশিসলাল সিং, ভৃগুরাম রিয়াং, মামন খান। মোট ১৩২ জনের রাজ্য কমিটি ঘোষণা করে তৃণমূল বুঝিয়ে দিল ২০২৩-এর যুদ্ধ জয়ের জন্য তারা তৈরি।

২০২৪-এর আগে জাতীয় রাজনীতিতে অক্সিজেন পেতে
মুকুল রায়ের আমলে মাঝপথে তৃণমূল রণে ভঙ্গ সদিলেও এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পিছু হটতে নারাজ। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ত্রিপুরার দায়িত্ব দিয়ে তিনি রাজ্যে বিস্তার লাভের চেষ্টা করছেন। ত্রিপুরা ছোট রাজ্য। তাই ত্রিপুরায় এবার বিজেপিকে হারিয়ে ২০২৪-এর আগে জাতীয় রাজনীতিতে অক্সিজেন পেতে চাইছে তৃণমূল। টিম তৈরি, এবার ফলপ্রাপ্তির অপেক্ষা।

১৩২ জনের টিমে সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি
২৭ জন মহিলাকে কমিটিতে স্থান দিয়ে মহিলাকেন্দ্রিক সমস্যা সমধানে ভূমিকা নিতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্যের মহিলারাই যে তৃণমূলের টার্গেট তা এই পরিকল্পনার মধ্যে বুঝিয়ে দিতে চাইছে তৃণমূল। এছাড়া রাজ্য কমিটিতে অনগ্রসর শ্রেণি, তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মোট ১৬ জন তফশিলি জাতি, ও ১৮ জন তফশিলি উপজাতি প্রতিনিধি রাখা হয়েছে রাজ্য কমিটিতে। অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধি রয়েছেন ৩২ জন। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ১৪ জন।
তৃণমূল ফুল টিম তৈরি করে ফেলল ত্রিপুরায়, রাজীবের নেতৃত্বে কারা পেলেন সুযোগ