পুনর্মূষিকো ভব! তৃণমূলের ‘রদবদলে’ কি বদলাবে জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ, জল্পনা
পুনর্মূষিকো ভব! তৃণমূলের ‘রদবদলে’ কি বদলাবে জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ, জল্পনা
পুনর্মূষিকো ভব। কার্যত তেমন কোনও বদল চোখে পড়ল না তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির পদবণ্টনে। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রেও রণনীতিতে তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। তবে স্পষ্ট করে দেওয়া হল তৃণমূল জাতীয় ক্ষেত্রে পদক্ষেপ বাড়াবে। তারা এবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক করবে দিল্লিতে। ২০২৪-কে সামনে রেখেই তৃণমূল দিল্লিমুখী হতে চলেছে।
বিজেপি ও কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্বে তৃণমূল!
মনে হয়েছিল, শুক্রবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে তৃণমূল ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের রণনীতি বিষয়ক একটা রূপরেখা প্রকাশ করবে। ত্রিপুরার পর গোয়া ভোটে অংশগ্রহণ করে তাঁদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা মোতাবেক নতুন কোনও অবস্থান নেবে। কিন্তু দেখা গেল তারা পুরনো অবস্থানেই অটল। বিজেপি ও কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্ব রেখে চলতেই তারা পছন্দ করছে।
রাজ্যে রাজ্যে কনভেনর নিয়োগ, বাড়ছে জল্পনা
সেইমতো রাজ্যে রাজ্যে কনভেনর নিয়োগ করে আগামী দিনে দলের বিস্তারের বার্তা নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে শুক্রবার আমন্ত্রিত ছিলেন জাতীয়স্তরের নেতারা। তাঁদেরকে বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয় তৃণমূলের তরফে। কে কোন দায়িত্ব নেবে তা বণ্টন করেন স্বয়ং মমতা।
পদে পুনর্বহাল অভিষেককে, কীসের আভাস
তৃণমূলের খোলনোলচে তেমন বদলালো না। সমস্ত পদের অবলুপ্তি করে নতুন করে যখন পদ বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা, রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল এবার বেশ কিছু বদল আসবে। কিন্তু তা হল না। সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সর্বভারতীয় সাধাকরণ সম্পাদকের পদে পুনর্বহাল করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনজনকে সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদে আনলেন তিনি।
তিন সহ সভাপতি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখে জাতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূলের সংগঠনকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেন মমতা। জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হল যশবন্ত সিনহাকে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি করা হল যশবন্ত সিনহাকে। তাঁর সঙ্গেই একই পদে বহাল হলেন সুব্রত বক্সি ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও।
মুখপাত্র হিসেবে আনা হল নতুনদের
এছাড়া স্থির হল মুখপাত্র। জাতীয় মুখপাত্র হিসেবে সুখেন্দুশেখর রায়কে নিয়ে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যসভাতেও তাঁকে মুখপাত্র করা হল আর লোকসভার মুখপাত্র হলেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এর আগে জাতীয় মুখপাত্র হিসেবে ছিলেন ডেরেক ও'ব্রায়েন। তাঁকে কোনও পদে রাখা হয়নি। জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যও করা হয়নি তাঁকে। কিন্তু কেন হঠাৎ ডেরেক ব্রাত্য, তা স্পষ্ট নয়।
নবীন-প্রবীণ সমন্বয় রক্ষার বার্তা, কিন্তু
অন্যদিকে জাতীয় কর্মসমিতির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবেন ফিরহাদ হাকিম। কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অরূপ বিশ্বাসকে। এছাড়া নীতি নির্ধারণ কমিটি গড়া হয়েছে যশবন্ত সিনহা ও অমিত মিত্রকে মাথায় রেখে। বাংলার নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় ক্ষেত্রে। নবীন-প্রবীণ সমন্বয় রক্ষার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়াতে তৃণমূলী-ভাবনা
২০২৪-এর আগে জাতীয় ক্ষেত্রে গুরুত্ব বাড়াতে এবার থেকে প্রত্যেকদিন দিল্লির তৃণমূল অফিস থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মহুয়া মৈত্ররা নিয়মিত থাকবেন দিল্লির তৃণমূল পার্টি অফিসে। আর ত্রিপুরা, গোয়ার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও মেঘালয় নিয়েও যে তৃণমূল ভাবনা-চিন্তা করছে, তা স্পষ্ট হয়েছে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল
জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে তিনজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সুস্মিতা দেব, সুবল ভৌমিক ও মুকুল সাংমা। এছাড়া উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের কনভেনর করা হয়েছে রাজশপতি ত্রিপাঠীকে আর হরিনায়ার কনভেনর করা হয়েছে অশোক তানওয়ারকে। এদিনের বৈঠকে যশবন্ত সিনহা, অশোক তানওয়ার, সুস্মিতা দেব, সুবল ভৌমিক, মুকুল সাংমা, লুইজিনহো ফেলেইরো থাকলেও ছিলেন না পবন বর্মা বা কীর্তি আজাদরা।
কংগ্রেস বিরোধিতা নাকি সমন্বয়ে তৃণ!মূল
এখন দেখার তৃণমূল কংগ্রেস কী অবস্থান নেয় আগামী লোকসভা ভোটের আগে। তাঁরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়ায়, নাকি কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় তৈরির চেষ্টা করে। তৃণমূল কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোটেরই পক্ষপাতী। পরিস্থিতি অন্য কোনওদিকে মোড় নেয় কি না, তা বোঝা যাবে পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশের পর। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।