ভারতে রয়েছে সাতটি এমন গ্রাম, যেখানে সবাই কথা বলেন সংস্কৃতে, জানেন কোথায় সেই গ্রাম
ভারতে রয়েছে সাতটি এমন গ্রাম, যেখানে সবাই কথা বলেন সংস্কৃতে, জানেন কোথায় সেই গ্রাম
ভারতে রয়েছে এমন গ্রাম, যে গ্রামের সবাই 'দেব-ভাষা'য় কথা বলেন। মানুষের জন্মের পর এই গ্রামের মানুষ বলতে শেখে এই ভাষাই। তারপর যাবতীয় কাজ-কর্ম, শিক্ষা-দীক্ষা সব দেব ভাষা সংস্কৃতেই হয়ে থাকে তাদের। বছরের পর বছর ধরে এই ধারা চলে আসছে। এক-আধটা নয়, ভারতে রয়েছে এমন সাতটি গ্রাম। যা আজও প্রাচীন ভাষার সংস্কৃতিকে বহন করে নিয়ে চলেছে।
দেব ভাষা সংস্কৃত
প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা বিবেবিত হয় দেবতাদের ভাষা হিসেবে। ঈশ্বর বা দেবতারা এই ভাষায় কথা বলতেন বলেই বিশ্বাস মানুষের। সংস্কৃত ভাষার লিপিটিকে বলা দেবনাগরি। এই কথার অর্য ঈশ্বরের শহরে ব্যবহৃত। ভারতের প্রাচীনতম ভাষা ছিল বৈদিক সংস্কৃত। আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এই ভাষা শিক্ষণ বা পঠন-পাঠন শুরু হয়েছিল। তা আজও বহমান।
ভারতে সাতটি সংস্কৃত গ্রাম
ভারতে সংস্কৃত ভাষায়ে গুরুত্ব দেওয়া হগয় এমন অনেক গ্রাম রয়েছে। এমন অনেক এলাকা রয়েছে, যেখানে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক। আবার এ দেশের সর্বত্রই প্রায় হিমঘরে চলে যাওয়া সংস্কৃত ভাষাকে টিকিয়ে রাখার প্রয়াসও লক্ষ্যণীয়। মানুষকে সাধারণভাবে এই ভাষায় আর কথা বলতে দেখা যায় না। এই ভাষাকে শুধু ব্রাহ্মণের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করায় মানুষ এই ভাষা-শিক্ষা থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন।
সংস্কৃত ভাষায় জন্য
তবে আধুনিক ভারতে এমন কিছু গ্রাম রয়েছে, যেখানে এই ভাষায় কথা বলেন মানুষ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এখানকার মানুষ কথা বলেন সংস্কৃতে। শুধু স্কুলে বা টোলে নয়, বাড়িতেও তাঁরা কথা বলেন সংস্কৃত ভাষায়। এই গ্রামের অতিথি বা পর্যটকদেরও তাঁরা সংস্কৃত ভাষায় কথা বলতে অনুরোধ করেন।
কর্নাটকের মাত্তুর
কর্নাটকে মাত্তুর বলে একটি গ্রাম রয়েছে। এ গ্রামটি কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। টুঙ্গা নদী তীরবর্তী এই গ্রামের মানুষ কথা বলে সংস্কৃত ভাষায়। এই মাত্তুরে একটি রাম মন্দির ও শিব মন্দির রয়েছে। সেই মন্দিরকে ঘিরেই এই সংস্কৃত গ্রাম বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।
মধ্যপ্রদেশের ঝিরি
কর্মাটকের মতো মধ্যপ্রদেশেও রয়েছে এমন একটি গ্রাম। সে গ্রামের নাম ঝিরি। ঝিরি মধ্যপ্রদেশের রাজঙর জেলার সারংপুরে অবস্থিত। এ গ্রামের মানুষও কথা বলেন সংস্কৃত ভাষায়। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ফের ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সব কথাই হয় সংস্কৃত ভাষায়।
ওড়িশার সাসানা
ওড়িশার সাসানাও এমন একটি গ্রাম, যে গ্রামের মানুষ সংস্কৃতে কথা বলেন। সাসানা হল ওড়িশার উপকূলীয় অঞ্চলের একট গ্রাম। ওড়িশার গজপতি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম এটি। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে সংস্কৃতভাষায় পারদর্শীদের বাস। পণ্ডিতদের গ্রাম বলেও গর্ব করেন এ গ্রামের মানুষজন।
মধ্যপ্রদেশের বাঘুয়ার
মধ্যপ্রদেশের আরও একটি সংস্কৃত গ্রাম রয়েছে। শুধু ঝিরি নয়। ঝিরির মতে মধ্যপ্রদেশের বাঘুয়ার গ্রামও সংস্কৃত-প্রেমী। এখানকার মানুষও সংস্কৃত কথা বলেন। মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর জেলার কারেলি এলাকায় অবস্থিত এই গ্রাম। এ গ্রামের প্রধান কথোপকোথনের মাধ্যম সংস্কৃত। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই কথা বলেন সংস্কৃতে।
রাজস্থানের গণোডা
রাজস্থানেও এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে মানুষ সংস্কৃতে কথা বলেন। এ গ্রামের নাম হল গণোডা। গণোডা রাজস্থানের বাঁশওয়াড়া জেলার ঘাটোল এলাকার একটি গ্রাম। এখানকার প্রায় সমস্ত শিশুই স্কুলে ভর্তি হয় সংস্কৃত ভাষায় সাবলীল হয়ে উঠতে। সংস্কৃত ভাষায় সঠিকভাবে কথা বলার শিক্ষা নেয় তারা।
মধ্যপ্রদেশের মোহাদ
মধ্যপ্রদেশেরে তিন নম্বর সংস্কৃত ভাষার গ্রাম। মধ্যপ্রদেশের মোহাদ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কথা বলেন সংস্কৃত ভাষা। এই গ্রামটি মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর জেলায় অবস্থিত। এ গ্রামে সংস্কৃতচর্চা বিশেষ মাত্রা পেয়ে আসছে বরাবর। শুধু শিক্ষা-দীক্ষায় নয়, এ গ্রামের কথোপকোথনেও সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
কর্নাটকের হোসাহাল্লি
কর্নাটকের দ্বিতীয় গ্রাম যেখানে প্রধান ভাষা সংস্কৃত। হোসাহাল্লি। কর্নাটকের এ গ্রামেও মুত্তুরের মতো প্রাথমিক ভাষা সংস্কৃত। এই ভাষাতেই লেখা-পড়া, কথা-বার্তা সব হয়। গামাকা নামে জাদুকরী এক গানের মাধ্যমও এই সংস্কৃত ভাষা। সংস্কৃত ভাষাকে এ গ্রামের মানুষ বিশেষ মর্যাদা দিয়ে আসছেন বরাবর।
প্রতীকী ছবি