উথাল-পাথাল মহাসমুদ্রের মাঝে দুধের মতো সাদা বিশাল জলরাশি, কী ওটা! প্রশ্ন নাবিকের
উথাল-পাথাল মহাসমুদ্রের মাঝে দুধের মতো সাদা বিশাল জলরাশি, কী ওটা! প্রশ্ন নাবিকের
যেদিকে দু'চোখ যায় জল শুধু দল। ভারত মহাসাগর চিরে তখন এগিয়ে যাচ্ছে জাহাজ। আচমকাই নাবিকের চোখে পড়ল দুধ-সাদা রঙের বিশাল জলরাশি। দুধের সমুদ্র যেন উথাল-পাথাল করছে। স্বপ্ন দেখছেন না তো? নাকি কোনও মায়াজালে বদ্ধ হয়ে গিয়েছে দু'চোখ। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করতে থাকেন নাবিক।
সত্যিই কি দুধ সাগর বা দুধের নদী রয়েছে?
দুধের সাগর বা দুধ-নদী নতুন কিছু নয়, ভারতীয় পুরাণে শোনা যায় এই দুদের নদীর কথা। তবে তা এতদিন রূপক অর্থেই ব্যবহার হয়েছিল। আদৌ দুধ সাগর বা দুধের নদীর কোনও অস্তিত্বের কথা শোনা যায় না। কিন্তু ভারত মহাসাগরে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী থেকেছিলেন নাবিক। তবে কি সত্যিই দুধ সাগর বা দুধের নদী রয়েছে? প্রশ্ন জেগেছিল সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
উথাল-পাথাল দুধের সমুদ্র ভারত মহাসাগরে!
মায়াজাল বা স্বপ্ন- কিছুই নয়। বাস্তবেই ইয়াচের নাবিক গণেশ পূর্ব ভারত মহাসাগরে এমন ঘটনার সাক্ষী ছিলেন। তাঁর চোখে এখনও ছবির মতো লেগে রয়েছে দুধ-রঙা জলরাশি বা উথাল-পাথাল দুধের সমুদ্র। কী সেটা, তা জানা তো পরের কথা। সমুদ্রবক্ষে মহাজাগতিক দৃশ্য দেখে ওই নাবিক চটজলদি ছবি তুলে ফেলেন ওই নান্দনিক দৃশ্যের।
ওই ছবি আসলে মিল্কি সী-এর, গবেষণায় প্রকাশ
২০১৯ সালে ঘটছিল এই ঘটনা। তারপর কেটে গিয়েছে তিন বছর। সমুদ্র বিজ্ঞানীরা এতদিন নাবিকের তোলা ওই ছবি নিয়েই গবেষণা করছিলেন। এতদিন পর তাঁরা জানালেন ওই ছবি আসলে মিল্কি সী-এর। অর্থাৎ দুধ সাগরের। তাহলে ভারতীয় পুরাণের সেই কথাই তো হুবহু মিলে গেল। পুরাণে উল্লিখিত দুধ সাগরও মিলে গেল প্রকৃতির বুকে!
পৃথিবীর বুকে আবিষ্কার হয়ে গেল দুধ সাগর
নাবিক ঠিক কী দেখেছিলেন? তিনি দেখেন- ভারত মহাসাগরের উপরের স্তর হঠাৎ চকচক করছে। আর দুধের মতো সাদা। ফেনার সাদা নয় সেটা, তা আরও গাঢ়। জলটাই সাদা লাগছিল তাঁর চোখে। তাই তিনি অবাক বিস্ময়ে গোটা কয়েক ছবি তুলে ফেলেছিলেন। তা তিনি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার সূত্র ধরেই এই পৃথিবীর বুকে আবিষ্কার হয়ে গেল দুধ সাগর।
দুধ সমুদ্রের দৃশ্য দেখেছিলেন চার্লস ডারউইনও
তবে তিন বছর আগেই যে প্রথম দেখা গেল এই দুধ সমুদ্র বা দুধ সাগর, তা কিন্তু নয়। ১৮৩০ সালে চার্লস ডারউইনও দুধ সমুদ্রের দৃশ্য দেখেছিলেন। তাঁর পাঁচ বছর ব্যাপী সমুদ্র যাত্রার সময়কালেই এই দুধের মহাসাগর তাঁর চোখে পড়েছিল। তিনি তাঁর লেখনীতেও তা উল্লেখ করেছিলেন। উল্লেখ করেছিলেন, গোটা যাত্রাপথে সেটাই ছিল তাঁর দেখা সবথেকে সুন্দর দৃশ্য।
কৌতুহল অবসান, বহু গবেষণার ফল মিলেছে অবশেষে
মানুষ কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন সেই থেকেই। কিন্তু এই দুধের সাগর কোথা থেকে আসে, কীভাবে আসে, কখন দেখা যায়, তার কিছুই অনুসন্ধান করতে পারেননি সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। তা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। ওই অঞ্চলের জলও সংগ্রহ করা হয়েছে, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালানো হয়েছে। অবশেষে সেই গবেষণার ফল মিলেছে।
কেন সমুদ্রের জল দুধ-রঙা সাদা, জানালেন গবেষকরা
গবেষকরা জানান, এক ধরনের 'বায়োলুমিনিসেন্ট ব্যাকটেরিয়া'র জন্য এটা ঘটে। সমুদ্রের উপরিভাগে এক সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ব্যাকটেরিয়ার সমাবেশ ঘটে, তখন তা দুধের মতো সাদা দেখতে লাগে সমুদ্রের জলকে। ওই অংশের জলে 'অ্যালিভিব্রিয়ো হার্ভেই' নামের 'বায়োলুমিনিসেন্ট ব্যাকটেরিয়া'র উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। আবার এই ব্যাকটেরিয়া সমুদ্রজলের উপরিস্তরে একটা নীল আভা বিচ্ছুরিত করে। সেটাই আলোর কারণে অনেক সময় সাদা দেখায়।
প্রতীকী ছবি
পৃথিবীর অদূরেই একটি গ্রহে রয়েছে জল-মেঘ, জেমস ওয়েব স্পেসের টেলিস্কোপে শনাক্তকরণ