
এখানে মাত্র ৪০ মিনিটের জন্য সূর্য অস্ত যায়, রাতের বেলাই হয় দিন! জানেন সেই আজব দেশের কথা
এ ভারী আজব এক দেশ। যেখানে রাতের বেলাতেও আপনি দেখতে পাবেন সূর্য। দেখতে পাবেন রোদ ঝলমলে আকাশ। সূর্য ওঠে মধ্যরাতে! স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, এ কেমন দেশ যেখানে রাতের বেলায় দেখা যায় সূর্যোদয়। আর আকাশে যখন সূর্য তখন দিন না হলে রাত কেন, এ তো দিনই! আর মধ্যরাতেই বা সূর্য ওঠে কেন আকাশে?

সূর্য অস্ত যায় মাত্র ৪০ মিনিটের জন্য
পৃথিবীতেই রয়েছে এমন এক দেশ যেখানে রাতের বেলায় সূর্য ওঠে। আর সূর্য অস্ত যায় মাত্র ৪০ মিনিটের জন্য। সূর্য অস্ত যাওয়ার ৪০ মিনিট পরেই আবার সূর্যের প্রকাশ ঘটে এই দেশে। আর ঠিক ১২টা ৪৩ মিনিটে সূর্য অস্ত যায়। তারপর ঠিক ১টা ২৩ মিনিটে আবার সূর্যোদয় হয়। রাত ২টোর পর এ দেশে আপনি দেখবেন রোদ ঝলমলে আকাশ। দিনের আলো ফুটে ওঠে রাত দুটোতেই!

মধ্যরাতে সূর্য! এ যে নিশীথ সূর্যের দেশ
রাতের বেলায় সূর্য ওঠে বলে এই দেশকে বলা হয় নিশীথ সূর্যের দেশ। এই দেশটির নাম আসলে নরওয়ে। এখানেই মধ্যরাতে সূর্যকে দেখতে পাওয়া যায়। কেন? মধ্যরাতের সূর্য হল এমন একটি ঘটনা, যখন সূর্য ২৪ ঘণ্টাই দিগন্ত রেখার উপরে থাকে, সেইসময় ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে নরওয়েতে। আবার সূর্য যখন দিগন্ত রেখার নীচে থাকে তখন ২৪ ঘণ্টাই রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকে ওই দেশ।

গোধূলি বেলার মতো সূর্য প্রতীয়মান
নরওয়ে হল আর্কটিক এলাকার দেশ। অর্থাৎ উত্তর মেরুর দেশ। উত্তর গোলার্ধের মেরু অঞ্চলে এই দেশের অবস্থান। এখানকার সূর্যের গনগনে আঁচ মেলে না। এখানকার সূর্য হল গোধূলি বেলার মতো। প্রায় ৭৬ দিন এখানে সেই গোধূলি বেলার মতো সূর্যকে দেখতে পাওয়া যায় টানা। তখন সূর্য অস্ত যায় না নরওয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সারা দিন সারা রাতই সূর্য আকাশে প্রতীয়মান থাকে।

৪০ মিনিটই রাত, বাকি সময় দিন
নরওয়ের হ্যামারফেস্ট ও সাল বোর্ডে মাত্র ৪০ মিনিটের জন্য সূর্যাস্ত হতে দেখা যায়। প্রতিদিন সূর্য ৪০ মিনিটের জন্য অস্তে যায়। অর্থাৎ ওই ৪০ মিনিটই রাত, বাকি সময় দিন থাকে নরওয়ের ওই দুই জায়গায়। হ্যামারফেস্ট নরওয়ের সবথেকে উত্তরের শহর। এখানে যখন স্থানীয় সময় ১২টা ৪৩ মিনিট। তখন সূর্য ডুবে রাত হয়। ফের ৪০ মিনিট পর সূর্য উঠে সকাল হল। ১০ এপ্রিল থেকে ২৩ অগাস্ট আবার সালবার্ডে সূর্য একেবারেই অস্ত যায় না।

২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে যখন
নরওয়েতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে। গ্রীষ্মকালীন সময়ে নরওয়ের বেশ কিছু অঞ্চলে ২ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত একটানা সূর্য থাকে আকাশে। রাতের অন্ধকার নামে না, সর্বদাই গোধূলি বেলার আবেশ নরওয়ের আকাশে। সূর্যের আলোয় এক মোহময়ী রূপের ছটা থাকে টানা ২ থেকে ৪ মাস। একেবারেই অনন্য রূপে প্রতিভাত হয় উত্তর গোলার্ধের ওই দেশ।

নরওয়ে ছাড়াও আরও ৩ দেশে এক দৃশ্য
শুধু নরওয়ে বললে ভুল হবে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ডেও এই একই দৃশ্য দেখা যায় বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে। নরওয়ের বেশিরভাগ অঞ্চল উত্তর গোলার্ধের মেরু প্রদেশে অবস্থিত হওয়ায় সূর্যের আলো সবথেকে বেশি সময় ধরে থাকে। উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল তখনই সূর্যের আলো বেশি সময় ধরে থাকে। এমনও অঞ্চল রয়েছে যেখানে ৬ মাস সূর্য আলো দেয়। আর ৬ মাস অন্ধকার থাকে। নরওয়ের সালবার্ডে একটানা প্রায় চার মাস সূর্য আলো দেয়।

নরওয়ের হোয়াইট নাইট বা শ্বেতরাত্রি
মধ্যরাতে সূর্যের আলো সবথেকে ভালো দেখা যায় ২১ জুন। ওই দিনটিকে বলা হয় হোয়াইট নাইট বা শ্বেতরাত্রি। এই সময় সূর্য অস্ত না গিয়ে দিগন্তরেখার উপরে অবস্থান করে। ফলে রাতের বেলাও সূর্যের আলো দেখা যায়। নরওয়ে বছরের আটমাস বরফে ঢেকে থাকে। আর দু-মাস এখানে সূর্য ওঠে না। নভেম্বরের ২১ থেকে জানুয়ারির ২১ পর্যন্ত সময়টিকে বলা হয় ডার্ক পিরিয়ড।

ডার্ক পিরিয়ডে দেখা যায় অরোরা বুরিয়াল
এই দু-মাসের ডার্ক পিরিয়ডে নরওয়ের আকাশে নর্দান লাইট বা অরোরা বুরিয়াল দেখা যায়। আকাশে লাল, সবুজ রঙের আলোর খেলা চলে। এই অরোরা বুরিয়াল দেখতে অনেক পর্যটক এই সময়ে নরওয়ে আসেন। আর বছরের দু-মাস নরওয়েতে কোথাও সূর্য অস্ত যায় না। ২১ মে থেকে ২১ জুলাইয়ের এই সময়টাকে বলা হয় মিডনাইট সান। অর্থাৎ মধ্যরাতের সূর্য।
ছয় মাসের মহাকাশ অভিযানে হাড়ের ক্ষয় বার্ধক্যের ১০ বছরের হাড়ের ক্ষয়ের সমতুল্য, দাবি গবেষণায়