বিজেপিকে মোক্ষম ধাক্কা, বিহারকে মহারাষ্ট্র হওয়া থেকে কীভাবে বাঁচালেন নীতীশ কুমার
বিজেপিকে মোক্ষম ধাক্কা, বিহারকে মহারাষ্ট্র হওয়া থেকে কীভাবে বাঁচালেন নীতীশ কুমার
বিহারকে আর একটা মহারাষ্ট্র করতে চেয়েছিল বিজেপি। খুঁজে পেয়েছিল বিহারের একনাথ শিন্ডেকেও। কিন্তু বিপক্ষে যে ছিলেন নীতীশ কুমার! পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। পরিষদীয় রাজনীতিতে তিনি তুখোড়। পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রীকে টলানো কি এত সহজ! বিজেপির নোংরা রাজনীতিকে রুখে দিয়ে বিহারে ফের পালাবদল ঘটিয়ে দিলেন তিনি।
মহাজোটে উন্মুক্ত হলেন বিজেপি-মুক্ত নীতীশ
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কালক্ষেপ না করে বিজেপির সঙ্গে পাঁচ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি বিহারের রাজনীতির ব্যাটন নিজের হাতেই রাখলেন। বিজেপিকে মাত দিলেন অনায়াসেই। ফের বিজেপির সঙ্গে পাঁচ বছরের সম্পর্কে ইতি ঘটিয়ে মহাজোটের পথে পা বাড়ালেন জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার। এক লহমায় সমীকরণ বদলে গেল বিহারে। বিজেপির খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে মহাজোটে উন্মুক্ত হলেন নীতীশ।
নীতীশের ‘শিক্ষা’ বিজেপিকে
বিজেপি নীতীশের উপর চাপ সৃষ্টি করে বিহার দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। বিহারকেও মহারাষ্ট্র করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু মোক্ষম চালে বিজেপিকে মাত দিয়েছেন নীতীশ কুমার। বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি উদ্ধব ঠাকরে নন। তিনি বিহারের পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। কী করে কুর্সি রক্ষা করতে হয় তা তিনি জানেন।
সেনিয়ার সঙ্গে বৈঠক, তেজস্বীর সঙ্গে সেটিং
প্রায় ১৬ বছর তিনি বিহারের কুর্সি সামলেছেন। বিজেপিকে তাই এবার কোনও সুবিধা করতে দিলেন না নীতীশ। জোটসঙ্গী ব্যাগরবাই করতেই কালবিলম্ব না করে জোট ছেড়ে তিনি নতুন আশ্রয়ে ফিরে গেলেন। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ তড়িঘড়ি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করে তাঁর ফেরার রাস্তা তৈরি করে রেখেছিলেন। তারপর ভাতিজা তেজস্বীর সঙ্গে সেটিং করতে আর বেশি দেরি হয়নি নীতীশের।
বিজেপির ঘোড়ার চাল রুখে দেন নীতীশ
নীতীশের চালে হালে পানি পায়নি বিজেপি। বিহারকে মহারাষ্ট্র করতে তারা জেডিইউয়ের সাংসদ আরসিপি সিংকে ভাঙিয়ে একটা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আগে থেকেই জেডিইউ সুপ্রিমো বুঝে গিয়েছিলেন বিজেপি কোন খেলা খেলতে চাইছে। তাই পাল্টা চালে বিজেপির ঘোড়ার চাল রুখে দেন নীতীশ। বিহারের পালাবদল ঘটিয়ে দেন মুহূর্তের ঈশারায়। বিহারে দখলদারি চালাতে ব্যর্থ হল বিজেপি।
বিজেপির দাদাগিরি ভালোভাবে নেননি নীতীশ
২০১৭ সালে নীতীশ কুমার মহাজোট ছেড়ে বিহারের কুর্সি ধরে রেখেছিলেন বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে। এবার ঠিক তার উল্টোটা ঘটল। তা কিন্তু মুহূর্তের সিদ্ধান্তে হয়নি। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকেই বিজেপির সঙ্গে খিটিরমিটির চলছিল। জেডিইউয়ের অভিযোগ ছিল, বিজেপি এমজেপিকে দিয়ে তাঁদের আসনসংখ্যা কমিয়ে দিয়েছিল। বিজেপি হয়ে উঠেছিল দলের বৃহত্তর শক্তি। তার ফলে বিজেপি সরকারে দাদাগিরি চালিয়ে যাচ্ছিল। যা ভালোভাবে নেননি নীতীশ।
মহাজোটে ফের জোড়া লাগল ২০২৪-এর আগে
সেই কারণেই আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে ফের গাঁটছড়া বেঁধে মহাজোটকে শক্তিশালী করে তুললেন। ২০১৭ সালে যে মহাজোটকে ছত্রখান করে নীতীশ কুমার বেরিয়ে গিয়েছিলেন, সেই মহাজোটে ফের জোড়া লাগল। ২০২৪-এর আগে বিরোধী ঐক্যের শক্তিবৃদ্ধি হল। একইভাবে বিজেপির শক্তিক্ষয় হল। রাজ্য রাজনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
বিজেপি বনাম বিরোধী ঐক্যের ফলাফল এক-এক
মহারাষ্ট্রে মহাজোটকে ভেঙে বিজেপি ক্ষমতার অলিন্দে এসেছিল। বিহারের বিজেপিকে ভাগিয়ে মহাজোট ক্ষমতায় এল। সেই নিরিখে এখন বিজেপি বনাম বিরোধী ঐক্যের ফলাফল এক-এক। যত ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসবে, ততই আরও রাজনীতির খেলা চলবে রাজ্যে রাজ্যে, তা বলাই যায়। আপাতত বিহারকে মহারাষ্ট্র করতে গিয়ে মোক্ষম ধাক্কা খেল বিজেপি। নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে এবং মহাজোটকে আশ্রয় করে নিজের কুর্সি বাঁচালেন।
২০১৭-র পুনরাবৃত্তি ২০২২-এ! বিজেপি ধরাশায়ী নীতীশের 'নীতি’তে, অভিমুখ শুধু ভিন্ন