চোখধাঁধানো ফলাফলের পরও কেন মমতার হরিষে বিষাদ?
তবে জম্মু-কাশ্মীর, বিহার ও অসমের মুখ্যমন্ত্রীরা তাঁদের দলের বিপর্যয়ের নৈতিক দায় মেনে নিয়েছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তো পদত্যাগও করেছেন। যদিও শোনা যাচ্ছে, দলের বিধায়কদের চাপে পড়ে তিনি পদত্যাগ পুনর্বিবেচনার কথা চিন্তভাবনা করছেন।
চমকপ্রদ ফল, তবুও ডগমগ নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কোনও কোনও মুখ্যমন্ত্রী আবার অন্য রকম ভাবছেন। এমনই একজন হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস বাংলায় বিপুলভাবে সফল। ৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনই দখল করেছে। প্রাপ্ত ভোটেকর ৩৯ শতাংশ পেয়েছে। জয়ললিতার এআইএডিএমকে-র পর তৃণমূল কংগ্রেস হল দ্বিতীয় আঞ্চলিক দল, যারা বিপুলভাবে সফল। প্রসঙ্গ, জয়ললিতার এআইএডিএমকে তামিলনাড়ুর ৩৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৭টি পেয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থা বড় অদ্ভুত। তিনি ওমর আবদুল্লা, নীতীশ কুমার, অখিলেশ যাদব কিংবা তরুণ গগৈয়ের মতো হেরোদের দলে নেই, আবার জয়ললিতার মতো নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভালো সম্পর্কও বজায় রাখেননি।
তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে-মুখে সেই খুশির ঝিলিক অনুপস্থিত, যা ভোটে বিপুল সাফল্যের পর সাধারণত প্রত্যাশিত ছিল। এতদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করছিলেন বামেদের মুছে দিতে। এবার বামেরা রাজ্য থেকে সত্যি-সত্যিই মুছে গেল। তাতে অবশ্য হাসির কারণ ঘটল না। কারণ নতুন দুশমনের আবির্ভাব ঘটেছে, আর সেটা হল বিজেপি।
বাংলায় বিজেপি-র উত্থান
বিজেপি দু'টি আসন পেয়েছে এবং তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার হল ১৭ শতাংশ। অনেকগুলি কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে হেরে গিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে তারা এগিয়ে গিয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভবানীপুর হল তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের বিধানসভা কেন্দ্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, ২০১৬, কঠিনতর হল
আর ঠিক দু'বছর পরই বাংলায় বিধানসভা ভোট। যে ৬১ শতাংশ ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গেল, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার জেরে তা কিন্তু আরও বাড়তে পারে। বামের এখন মুছে গিয়েছে। কংগ্রেস শেষ। এই অবস্থায় তৃণমূল-বিরোধী ভোট বিজেপি-র ঝুলিতে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। এই লোকসভা ভোটেই আমরা দেখলাম, কীভাবে বিজেপি বামেদের পতনের ফায়দা তুলে নিল।
৩৪টি আসন পেয়েছেন, তবুও কেন্দ্রে একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় মমতার গুরুত্ব কমল
এই বার কেন্দ্রে একদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠিত হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন সুবিধা নিতে পারবেন ভেবেছিলেন, সেটা আর এ বার হল না। বরং সারদা কেলেঙ্কারি ঘিরে তিনি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন।
এমনতর আশঙ্কার জেরে দিল্লিতে মোদী সরকার আর রাজ্যে মমতা সরকারের মধ্যে প্রতিকূল সম্পর্ক বজায় থাকবে, এমনটা মনে করছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বারবার অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, রাজ্য কেন্দ্রের কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছে না। রাজ্যের স্বার্থকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবার যে মোদী সরকারের সঙ্গেও এ নিয়ে সংঘাত চলবে, সেটাই স্বাভাবিক।
মোদীর ব্যাপারে মমতা কি এখনই শোধরাবেন?
কিন্তু জয়ললিতার মতো মমতা কি নির্বাচনকালীন মতভেদ দূরে সরিয়ে রেখে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নেবেন? তাঁর নড়বড়ে রাজ্যের কথা কি চিন্তা করবেন? আসনসোল থেকে বিজেপি টিকিটে জেতা বলিউডি গায়ক বাবুল সুপ্রিয়ও এই প্রশ্ন তুলেছেন।
সংখ্যালঘু ভোটের খাতিরে মমতা সন্ধি করবেন না বলেই অনুমান
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট যেমন হবে বলে মনে করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার চেয়েও অনেক কঠিনতর হবে। তিনি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বাছা বাছা বিশেষণ ব্যবহার করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন, কারণ ভোটারদের মেরুকরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন। তাতে তিনি সফল। সংখ্যালঘু ভোট তাঁর দিকে এলেও বিপুল পরিমাণ হিন্দু ভোট তিনি হারিয়েছেন। এখন নরেন্দ্র মোদীর প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে তিনি সংখ্যালঘু ভোট হারাতে পারেন।
১৬ মে-পরবর্তী সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ শক্ত হল। অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের ভোটে ভালো ফল করলেও তাই অনেক উত্তরই এখনও পাওয়া বাকি।