অধীর কি পা বাড়াচ্ছেন, লোকসভায় বহরমপুর সাংসদের মন্তব্যে জোর জল্পনা
লোকসভা নির্বাচনের আগে কি মোদী বিরোধী জোটে পেরেকটা পুঁতে দিলেন অধীর? এই প্রশ্ন উঠল সংসদ অধিবেশনের শেষদিনে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে কি মোদী বিরোধী জোটে পেরেকটা পুঁতে দিলেন অধীর? এই প্রশ্ন উঠল সংসদ অধিবেশনের শেষদিনে। যে ভাবে অধীররঞ্জন চৌধুরী বুধবার লোকসভায় চিটফান্ড বিল-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন তাতে হতবাক রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এটাকে আত্মঘাতী বলেই মনে করছে। কংগ্রেস এখন যতই 'ড্যামেজ কন্ট্রোল'-এর চেষ্টা করুন না কেন তাতে যে ইউনাইটেড ফ্রন্টের ভাবমূর্তি-তে যে ধাক্কা লেগেছে তাতে সন্দেহ নেই।
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাচূত্য হওয়ার পর থেকেই এই রাজ্যে কংগ্রেসের রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণ হয়েছে জাতীয় রাজনীতির সমীকরণ মেনে। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের যতই বিভেদ থাক রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধীরা চান মোদী বিরোধী জোটে তৃণমূলকে সঙ্গে নিতে। জাতীয় রাজনীতির স্বার্থ মেনে চলা কেন্দ্রীয় কংগ্রেস কমিটির নীতিতে মোটেও খুশি নন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। এই পরিস্থিতি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কংগ্রেস থেকে মৌসম নূর-কে ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্বভাবতই রাহুল, সনিরা-রা যতই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে তাদের কাছের বলে দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা তাতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে নিজেদের বিরুদ্ধবাদীর জায়গাটা ছাড়তে রাজি নন। কিন্তু, প্রদেশ স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের যতই বিরোধিতা থাক, সংসদে দাঁড়িয়ে অধীর যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস-কে 'চোর মাচায়ে শোর' বলে আক্রমণ করেছেন তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
রাজনৈতিক মহলের একটি অংশ আবার এর পিছনে অন্য ইঙ্গিত খুঁজছেন। কারণ মুকুল রায় বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সময় থেকেই অধীর চৌধুরীর দলত্যাগ নিয়ে নানা সময়ে নানা কথা উঠেছে। এমনকী, বেশকিছু সূত্রে দাবি করা হয়েছিল কংগ্রেস সাংসদ বিজেপি-র নেতাদের মধ্যে বৈঠকের কথা। যদিও, অধীর চৌধুরী বারবার কংগ্রেস ছেড়ে অন্য দলে যাওয়ার খবরকে উড়িয়ে দিয়েছেন। যারা এই ধরনের খবর পরিবেশন করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অধীর চৌধুরীর এই অবস্থানকে বারবারই সন্দেহের চোখে দেখে রাজনৈতিক মহল। কারণ রাহুল গান্ধীরা যে নীতিতে কংগ্রেস দলকে পরিচালনা করছেন তাতে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যে কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি কমনেছে অধীর গড় বলে খ্যাত বহরমপুরেও। অধীর চৌধুরীর টিমের অনেকেই পা বাড়িয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক বছর ধরে অধীর নিজেও অধিকাংশ সময় দিল্লিতে থাকেন। বহরমপুরে আগের মতো সময় তিনি দিচ্ছেন না। ফলে, অধীরের গড়েও এখন দল ভেঙে তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক। এই পরিস্থিতিতে ক্রমশই তাৎপর্য হারাচ্ছে অধীর চৌধুরীর মমতা বিরোধী লাইন। এমনটা হলে অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক অস্বিস্তেও ক্রমশ সঙ্কট ঘনিয়ে আসার আশঙ্কা এক্কেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাহলে, রাজ্য় রাজনীতিতে ঠিকে থাকতে হলে অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক শিবির বদলানো কি অবশ্যাম্ভাবি? এমন প্রশ্ন উঁকি মারছে রাজ্য-রাজনীতির মহলে।
বুধবার অধীর যেভাবে সংসদে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও তাঁর সরকারকে আক্রমণ করেছেন সেটাই আসল তাঁর রাজনৈতিক লাইন। যে লাইন অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক কেরিয়ারের মূল উপজীব্য। সুতরাং, মমতা বিরোধিতায় অধীর নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মমত বিরোধিতায় অবতীর্ণ হবেন সেটাই স্বাভাবিক। কারণ অধীরের রাজনৈতিক লাইফ-লাইন নির্ভর করছে রাজ্যের নীতির উপরে। জাতীয়স্তরের নীতিতে নয়। সুতরাং, অধীরের মমতা বিরোধিতা মানেই যে জোট বিরোধী তা নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অধীরের এই স্টান্টে লোকসভায় বিজেপি-র বেঞ্চে হাততালির রোল উঠলেও তাতে যে অধীর মোদী, অমিত শাহদের হয়ে গলা ফাটাবেন এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। কারণ, লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে অধীর নিজেই সেটা স্পষ্ট করে দেবেন।