দাম নিয়ন্ত্রণের নামে আলুর রফতানি বন্ধ করতে তৎপর রাজ্যপুলিশ, ক্ষেপে লাল ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড
সুত্রের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত থেকেই আলু রফতানি বন্ধ করতে শুরু হয়েছে পুলিশের কড়া টহলদারি। এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চকে বাজারে বাজারে নজরদারি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নজরজারি বাড়ানো হয়েছে সীমান্ত অঞ্চলে। পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা সীমানায় বেশকয়েকটি আলু বোঝাই লরি আটক করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন : দাম বাড়ছে, তাই আলুর রফতানি বন্ধ করল রাজ্য সরকার
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে ৩২ লক্ষ মেট্রিকটন আলু মজুদ রয়েছে। ভিনরাজ্যে আলুর রফতানি বন্ধ করা হলে আগামী ৬ মাস মজুত আলুতে রাজ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। কৃষি বিপণন দফতরের কর্মকর্তারা মেনে নিচ্ছেন যে প্রতিবেশী রাজ্যগুলোয় আলু রফতানি বন্ধ করা হলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন ঠিকই, কিন্তু এমুহূর্তে প্রতিবেশী রাজ্য নয়, রাজ্যের সাধারণ মানুষই সরকারের প্রাধান্য বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
রাজ্য সরকারকে এবিষয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। কারণ আলুর দিক থেকে ওড়িশা প্রচন্ডভাবে বাংলা নির্ভর। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবেশী রাজ্যে আলু না পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনড় থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর উপর ক্ষুব্দ ওড়িশা ঝাড়খণ্ডের মতো প্রতিবেশী রাজ্যগুলি। সম্ভবত এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হতে পারেন ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড সরকার।
এর আগেও বহুবার রাজ্য সরকার আলু রফতানি নিষিদ্ধ করায় ওড়িশায় আটকে দেওয়া হত অন্ধ্র ও মহারাষ্ট্র থেকে আসা কলকাতামুখী ট্রাকগুলি। এগুলি মাছ ও পেঁয়াজ নিয়ে আসছে জানতে পেরে রাস্তাতেই আটকে দিত স্থানীয় মানুষরা। তাদের দাবি বাংলা থেকে আলু ঢুকতে না দিলে কলকাতামুখী পণ্যবাহী ট্রাকগুলিকেও ছাড়া হবে না।
বাংলার আলু রফতানি বন্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে পারে ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড
মাঝে রাজ্য সরকার আলু রফতানির অনুমতি দেওয়ায় সে সমস্যা বন্ধ হয়েছিল কিন্তু ফের রাজ্য কড়াকড়ি চালু করলে সেই সমস্যার মুখে আবারও পড়তে হবে বাংলাকে।
গত সপ্তাহে নবান্নয় ব্যবসায়া সমিতি, টাস্ক ফোর্স নিয়ে একটি বৈঠক করেন মমতা। কৃষি বিপণন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। আলু চলে যাচ্ছে বাইরের রাজ্যে। বিভিন্ন জায়গায় আড়তদাররা কৃত্রিম উপায়ে সঙ্কট তৈরি করছে বলে অভিযোগ এসেছে সরকারের কাছে। ফলে আপাতত রফতানি বন্ধ রেখে রাজ্যে আলুর দামে স্থিতিশীলতা আনতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আলুর রফতানি বন্ধ করলে অন্য সমস্যাও হতে পারে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, রাজ্যে যে হারে আলু উৎপাদন হয়, তার কিয়দাংশ যদি রফতানি না করা হয় তাহলে তা হিমঘরে পড়ে থেকেও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংরক্ষণকারীদের কথায়, এমন অনেক ধরণের আলু রয়েছে যার চাহিদা এই রাজ্যে নেই। আলু দীর্ঘকালীন সংরক্ষণের জন্য এরাজ্যে সেহারে পর্যাপ্ত হিমঘরেরও অভাব রয়েছে, ফলে রপ্তানি বন্ধ হলেও তা রাজ্যে আলুর দামে স্থিতিশীলতা কতটা আনতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়ে যাচ্ছে।
যদিও কৃষি বিপণন দফতরের দাবি, আলুর উৎপাদন ও রাজ্যে আলুর চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে। উৎসবের মরশুমে আলুর চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। ফলে হিমঘরে পড়ে থেকে আলু পচে নষ্ট হওয়ার কোনও সম্ভবনাই নেই।