দৌড়ে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর পা-য়ে আছাড় যুবতীর, হেমতাবাদের ঘটনায় চাঞ্চল্য, দেখুন ভিডিও
বৃহস্পতিবার হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছিল। সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রায় তাঁর বক্তব্য শেষ করে এনেছেন। এমনি সময়ে মঞ্চের সাইড থেকে দৌঁড়ে এসে সোজা মুখ্যমন্ত্রী পায়ে আঁছড়ে পড়েন রাবেয়া।
যাকে বলে ময়দান ফাঁকা পেলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়া। আর সেটাই করলেন হেমতাবাদের বাসিন্দা রাবেয়া। বছর ২৫-এর এই যুবতীর কর্মকাণ্ডে এখন ঘাম ছুটেছে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসাররা। এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও গোটা ঘটনায় বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। হেমতাবাদের এই ঘটনায় মমতা অনুরাগীরা পুলিশকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। নিরাপত্তা বূহ্য ভেঙে কী করে রাবেয়া মঞ্চে চলে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
[আরও পড়ুন:দল ছেড়ে যা খুশি বলুন, তৃণমূলের এই সাংসদকে 'রাস্তা' দেখালেন পার্থ]
বৃহস্পতিবার হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছিল। সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রায় তাঁর বক্তব্য শেষ করে এনেছেন। এমনি সময়ে মঞ্চের সাইড থেকে দৌঁড়ে এসে সোজা মুখ্যমন্ত্রী পায়ে আঁছড়ে পড়েন রাবেয়া। দর্শকদের দিকে মুখ করে থাকায় মুখ্যমন্ত্রীও টের পাননি যে রাবেয়ে দৌড়ে মঞ্চে উঠে এসেছেন। পা-এর উপরে রাবেয়াকে আঁছড়ে পড়ে থাকতে দেখে মমতা কয়েক ধাপ পিছিয়ে মঞ্চের মাঝখানে চলে যান। মুখ্যমন্ত্রীর দেহরক্ষীরাও প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কিন্তু, বিষয়টি কী হয়েছে বুজতে পেরে একজন নিরাপত্তা রক্ষী রাবেয়াকে ধরে ফেলেন। এরপরই চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মহিলা পুলিশ কর্মী। সকলে মিলে রাবেয়াকে মঞ্চের সাইডে থাকা বেঞ্চে বসান।
ঘটনায় বিব্রত মুখ্যমন্ত্রী ততক্ষণে মাইকে জানিয়ে দিয়েছেন, এভাবে দৌড়ে এসে পা-য়ে আঁছড়ে পড়েন তাহলে তা ভালো নয়। যে ভাববনে সেই এভাবে দৌড়ে এসে মঞ্চে উঠে পড়বেন তা ঠিক নয়। এবাবে কাজ তো পাওয়াই যাবে না উল্টে যে কাজ পাওয়ার কথা ছিল তাও বন্ধ হয়ে যাবে। রাবেয়া কেন এমন কাণ্ড করল তা জানতে ইন্দ্রনীল সেনকে নির্দেশ দেন মমতা।
কাঁদতে কাঁদতে রাবেয়া জানায়, তিনি ও তাঁর বোন রাকেয়া দু'জনেই মমতার সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ-এর চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের বাবার জন্য ন্যায় বিচার চাইতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আসা বলে জানান রাবেয়া। যদিও, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, জেলা শাসকের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন রাবেয়াদেরকে প্রশাসন বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। এমনকী রাবেয়াদের চাকরির ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের জেলা শাসকও জানান যে রাবেয়া ও তাঁর বোন রাকেয়া এর আগে পাঁচবার জেলাশাসকের দফতরে এসেছিলেন। প্রশাসন থেকে রাবেয়া ও রাকেয়াদের সব ধরণের সাহায্য করা হয়েছে বলেও জেলা শাসক জানিয়ে দেন।
গোটা ঘটনায় যে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ তা বুঝিয়ে দেন। নিরাপত্তার ফাঁক গলে কী ভাবে রাবেয়া মঞ্চে উঠে পড়লেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, মঞ্চের সামনে দ্বিতীয় ব্যারিকেড যেখানে সেখানে বসেছিলেন রাবেয়া। অন্য আরএক প্রান্তে বসেছিলেন রাবেয়ার আরএক বোন রাকেয়া। দর্শকদের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর ডানদিকে ছিলেন রাবেয়া, আর বাম দিকে ছিলেন রাকেয়া। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার দিকে ব্যারিকেডের সামনে নিরাপত্তা একটু ঢিলে ঢোলা ছিল। আর সেই সময় রাবেয়া ও রাকেয়া বাঁশের ব্যারিকেড টপকে প্রথম ব্যারিকেডের সামনে চলে যান। বিনা বাধায় সেই ব্যারিকেডও টপকে ফেলেন রাবেয়া ও রাকেয়া। দু'জনেই ততক্ষণে ঢুকে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার জন্য চিহ্নিত ডি-জোনে। রাকেয়াকে মঞ্চের সামনেই ধরে ফেলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কিন্তু, রাবেয়া নিরাপত্তার ফাঁক গলে মঞ্চে উঠে পড়তে সমর্থ হয়েছিলেন।
রাবেয়া জানিয়েছেন, তাঁদের বাবা জেলা। সংসারে তাঁরা পাঁচ-ভাই বোন। বাবার যাতে ন্যায় বিচার পান তার জন্য মালদহে মুখ্যমন্ত্রীর সভাতেও গিয়েছিলেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে পেলেও ভিড়ের চাপে কথা বলতে পারেননি। তাই হেমতাবাদ ছিল দুই বোনের মূল টার্গেট। যে কোনওভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পা-য়ে আছড়ে পড়াটি ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। গোটা ঘটনায় অবশ্য নিরাপত্তার গাফিলতির দিকেই সকলে আঙুল তুলেছেন।