আইপিএস অফিসারের নির্দেশেই হামলা মমতার ওপর, বলছেন পুলিশকর্মীরা
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের একটি মিছিলে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। তাতে ১৩ জন মারা যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ছিলেন যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি। তাঁকেও হেনস্থা করে পুলিশ। ব্রাবোর্ন রোডের ওপর এই দৃশ্য দেখেছিল সবাই। ঘটনার তদন্তের দাবি খারিজ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনে ইতিমধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অনেকে। কলকাতা পুলিশে সেই সময় কর্মরত এক ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবলকে সম্প্রতি ডেকে পাঠানো হয়। তাঁরাই বলেন যে, এক আইপিএস অফিসারের নির্দেশেই মমতাকে লক্ষ্য করে সরাসরি আক্রমণ করেছিল পুলিশ। যদিও সেই ব্যক্তি কে, তা জানানো হয়নি তদন্ত কমিশনের তরফে।
তবে ওই কনস্টেবলের দাবি, তিনি নির্দেশ অমান্য করেছিলেন। সত্যিই তিনি তা করেছিলেন নাকি এখন শাস্তির ভয়ে উল্টো কথা বলছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই গুলি চালনার ঘটনায় একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। যেমন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার গুলি চালানো নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবেন। অথচ সেই সময়কার পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার পরে কমিশনকে জানান, গুলি চালানো নিয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। গুলি চালানোর দায় তিন ডেপুটি কমিশনারের ওপর চাপিয়ে দেন তুষারবাবু। এঁরা হলেন মুকুল সেনগুপ্ত, দেবেন বিশ্বাস ও সিদ্ধার্থ রায়। এঁরাই নাকি সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আবার সিদ্ধার্থ রায়কে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তিনি দোষ চাপিয়েছেন মুকুল সেনগুপ্তের ওপর। বলেছেন, রাণী রাসমণি অ্যাভিনিউতে ভবানীপুর ক্লাবের কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন মুকুলবাবু। যুব কংগ্রেসের মিছিল যখন রাইটার্স বিল্ডিংয়ের দিকে আসতে থাকে, তখন তিনি ফোর্স নিয়ে মেট্রো সিনেমার কাছে ডোরিনা ক্রসিংয়ে চলে যান। ওখানেই তাঁর নির্দেশে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ।
এদিকে, মুকুল সেনগুপ্ত এই অভিযোগ স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, মিছিল ঘিরে যখন চরম বিশৃঙ্খলা, তখন তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেতে লালবাজার গিয়েছিলেন। পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদারের সঙ্গে কথা বলতে। অথচ তাঁর দেখা পাননি।
আরও তিন আইপিএস কর্তা দীনেশ বাজেপয়ী, আর কে জোহরি এবং এন কে সিং-কে কমিশনে তলব করা হলেও তাঁরা সাক্ষ্যদানের বিরোধিতা করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। দীনেশ বাজপেয়ী সেই সময় কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ছিলেন।