পুরসভায় কর্মী বদলিতে প্রভাব খাটানোয় অভিযুক্ত বিধায়ক, চাঞ্চল্য বর্ধমানে
ভুয়ো আইএএসের ভ্যাকসিন দুর্নীতিতে যখন কলকাতা কর্পোরেশনকে নিয়ে অস্বস্তিতে শাসক দল, তখন আরও এক পুরসভায় তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ালেন দলীয় বিধায়ক। বিধায়ক বেআইনি কাজ করছেন এই অভিযোগে বিজেপি সরব হওয়ার আগে ক্ষোভে ফুঁসছে শাসক দলের একাংশই। ঘটনা বর্ধমানের।
বর্ধমান পুরসভার চিত্র
২০১৮ সালের অক্টোবরে বর্ধমান পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তারপর থেকে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী আধিকারিক বা এগজিকিউটিভ অফিসার পুরসভা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসক দলেরই এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের অভিযোগ, বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও পুরসভাতেই একটি ঘর আগলে অফিস বানিয়ে রেখেছেন খোকন দাস। যিনি এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছেন।
মারাত্মক অভিযোগ
পুরসভার কাজকর্মে আইনকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোকন দাস নানাভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ এবং তার সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে। বিধায়কের এই ভূমিকায় ক্ষোভ জন্মেছে শাসক দলের অন্দরেও। সাত দিনের ব্যবধানে দুটি ঘটনা অস্বস্তিতে ফেলেছে বিধায়ক ও তৃণমূলকে। অভিযোগ বেশ গুরুতরও বটে।
কর্মী বদলিতে প্রভাব খাটানো
বর্ধমান পুরসভায় ১৫ জুন দুই কর্মীকে বদল করা হয়। এগজিকিউটিভ অফিসারের সই করা সেই আদেশনামায় বলা হয়, ১৪ তারিখ পুরসভাতে একটি সভা হয়েছিল যাতে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক, পুরসভার প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন। সেই সভাতেই আলোচনা করে ১৫ জুন থেকে শেখ আজহারউদ্দিনকে লাইসেন্স থেকে ট্যাক্স এবং সজল কুমার রায়কে ট্যাক্স থেকে লাইসেন্স বিভাগে তিন মাসের জন্য বদলি করা হল। শাসক দলের একাংশের দাবি, যাঁদের বদলি করা হয়েছে তাঁরা তৃণমূলেরই সক্রিয় কর্মী। এই বদলিতে বিধায়ক প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, পুরসভার কর্মী বদলিতে বিধায়কের পরামর্শ নেওয়ার কী প্রয়োজন বা আদেশনামাতে তার উল্লেখ করারই বা কী প্রয়োজনীয়তা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলেরই প্রাক্তন এক কাউন্সিলর। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তাঁকে অনেকে সমর্থনও করছেন। একজন বিধায়ক কেনই বা পুরসভার এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে থাকলেন কিংবা তাঁর এক্তিয়ারই বা কতটা সে সব প্রশ্নের উত্তর অজানা শাসক দলের কাছেই।
টেন্ডার মিটিংয়ে বিধায়ক!
অভিযোগ আরও রয়েছে। ২২ জুন বর্ধমান পুরসভার কনফারেন্স হলে বিকেল ৩টেয় টেন্ডার কমিটির একটি বৈঠক হয়। অম্রুত প্রকল্পের কাজের টেন্ডার সংক্রান্ত এই বৈঠকে যে ১০ জনের উপস্থিত থাকার প্রমাণ মিলেছে সেই তালিকায় প্রথম স্বাক্ষরটিই করেছেন বিধায়ক! একজন বিধায়ক পুরসভার টেন্ডার কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কীভাবে হাজির থাকতে পারেন তা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশ বিধায়কের এমন ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি গোটা ঘটনা পরম্পরার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে সব কাজে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন, সেখানে বিধায়কের প্রভাব খাটানো-সহ নানা ভূমিকা আখেরে দলের ভাবমূর্তিকেই ধাক্কা দিচ্ছে। বিশেষ করে সামনেই যখন পুরভোট।
বিধায়কের সাফাই
তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ নিয়ে ওয়ানইন্ডিয়া বাংলার তরফে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিযুক্ত বিধায়কের সঙ্গে। বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক খোকন দাস বলেন, পুরসভার কাজে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিধায়ক হিসেবে আমি পুরসভার কাজকর্মে আমার হস্তক্ষেপ করার প্রশ্নই নেই। দুটি সভাতেই আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এগজিকিউটিভ অফিসার। সেই আমন্ত্রণপত্র আমার কাছে রয়েছে। মহকুমাশাসক, এগজিকিউটিভ অফিসার ওই সভাগুলিতে উপস্থিত ছিলেন। যা সিদ্ধান্ত হয়েছে তাঁদের কথামতোই। মহকুমাশাসক যেখানে পুরসভা চালাচ্ছেন সেখানে আমি কেনই বা কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করব? আর গৃহীত সিদ্ধান্তে আমার কোনও মতামতের ব্যাপার নেই।
দায় ঝাড়ছে তৃণমূল
বিধায়কের কথা অনুযায়ী কর্মী বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর মতামতের ব্যাপার নেই। কিন্তু তাহলে এগজিকিউটিভ অফিসারের জারি করা আদেশনামায় কেন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধায়কের নামের উল্লেখও রইল, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। গোটা বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। মহকুমাশাসকই সঠিক কথা বলতে পারবেন।