কে কীভাবে ভোটে জিতেছে জানি, দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে মন্তব্য শুভেন্দুর
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে যাঁরা ব্যর্থ নায়ক, তাঁদের ওপরে শাস্তির খাঁড়া নামিয়ে এনেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যেমন মালদহের সাবিত্রী মিত্র কিংবা আসানসোলের মলয় ঘটক। এঁরা নিজেদের এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে ব্যর্থ হওয়ায় খাপ্পা হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই তালিকায় শুভেন্দু অধিকারী আসেন না। তিনি নিজে কাঁথি আসনে দু'লক্ষের বেশি ভোটে জেতেন। তাঁর বাবা শিশির অধিকারীও তমলুক থেকে জিতেছেন। তবুও বাবা-ছেলের ডানা ছাঁটা হয়েছে। গত শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের পর তাঁদের ডানা ছাঁটার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। শুভেন্দু অধিকারী এতদিন ছিলেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি। সেই পদে এখন বসানো হয়েছে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সৌমিত্র খানকে। পাশাপাশি, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর ক্ষমতা খর্ব করার লক্ষ্যে কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে অখিল গিরিকে। অখিলবাবু অধিকারী পরিবারের কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত।
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর অবস্থা হবে কুণাল ঘোষের মতোই, বললেন মহম্মদ সেলিম
এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার নন্দকুমারে দলীয় কর্মীসভায় শুভেন্দু অধিকারী ক্ষোভ ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, "দলের কেউ কেউ বলছেন, আমার জনপ্রিয়তায় নাকি ভাঁটা পড়েছে। কিন্তু নিন্দুকদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে আমি এ বার দু'লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতেছি। মানুষ স্বেচ্ছায় আমায় ভোট দিয়েছেন। দলের কেউ কেউ প্রচুর ভোটে জিতেছেন। কিন্তু তাঁরা কী কায়দায় জিতেছেন, আমি জানি। মুখ খুলতে চাই না।" বোঝা যাচ্ছে, বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছে, তা কিছুটা সত্যি! অন্তত শুভেন্দুবাবুর কথা থেকে সেটা মালুম হচ্ছে।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্যের পিছনে ছিল শুভেন্দু অধিকারীর অবদান
যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি তিনি। শুধু অভিমানের সুরে জানান, "দলের দুঃসময়ে আমি কঠিন দায়িত্ব সামলেছি। কী পদ পেলাম, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।"
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন বলেই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে এত দ্রুত উঠে আসা সম্ভব হয়েছে। কারণ যে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সূত্র ধরে দল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এত জনপ্রিয়তা লাভ করেন, তার পিছনে ছিল শুভেন্দুর অবদান। পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের 'মুকুটহীন সম্রাট' লক্ষ্মণ শেঠের দাপট চুরমার করেছিলেন এই শুভেন্দু অধিকারী। তখন ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কঠিন সময়। অথচ এখন দলের সুসময়ে সেই শুভেন্দুই ব্রাত্য হয়ে গেলেন।
শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষমতা খর্ব করায় সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। অনুগামীরা তাঁকে বিদ্রোহ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এখনই সেই পথে যেতে নারাজ তিনি। আর কিছুদিন দেখতে চান, দল তাঁর সঙ্গে কী ব্যবহার করে! তার পর সিদ্ধান্ত নেবেন। শুভেন্দুবাবু, শিশিরবাবুরা বুঝতে পারছেন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এটাই সহ্য হয়নি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। পাশাপাশি, অধিকারী পরিবার বনাম মুকুল রায়ের লড়াই দলে সর্বজনবিদিত। ফলে, অধিকারী পরিবারের ডানা ছাঁটায় মুকুল রায়ের রাশ আরও শক্তপোক্ত হল। আগামী দিনে মুকুলবাবু ও তাঁর অনুগামীরা অধিকারী পরিবারকে আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা চালাবে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাসপেন্ড হওয়া তথা কারাবন্দি সাংসদ কুণাল ঘোষ ভূয়সী প্রশংসা করলেন শুভেন্দু অধিকারীর। শিলিগুড়ির ভক্তিনগরে আদালতে তোলা হয়েছিল কুণালবাবুকে। বেরিয়ে আসার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, "শুভেন্দু অধিকারী একজন গ্ল্যামারাস নেতা। কেন ওঁর সঙ্গে এই ব্যবহার করা হল, জানি না।"