১১ দিনের টানটান নারদ নাটক! একনজরে চার নেতার গ্রেফতারি থেকে জামিন পর্ব
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রকাশ্যে আসে নারদ স্টিং ফুটেজ। ১২ তৃণমূল নেতা এবং এক আইপিএস-এর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিজেপির সদর দফতরে দেখানো ফুটেজ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মা
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রকাশ্যে আসে নারদ স্টিং ফুটেজ। ১২ তৃণমূল নেতা এবং এক আইপিএস-এর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিজেপির সদর দফতরে দেখানো ফুটেজ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়।
দীর্ঘ সওয়াল জবাব শেষে নারদ মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশে ১৭ মার্চ নারদ তদন্ত সিবিআইকে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর একাধিক বার ম্যাথু স্যামুয়েল সহ অভিযুক্তদের জেরা করা হয়।
১৭ মে নারদ-মামলায় গ্রেফতার করা হয় চার অভিযুক্তকে
প্রায় পাঁচবছর পর হঠাত করেই এই মামলায় নয়া মোড়। গত ১৭ মে নারদ-মামলায় গ্রেফতার করা হয় মদন মিত্র-সহ রাজ্যের চার নেতা-মন্ত্রীকে। যা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য-রাজনীতি। তৃণমুলের তিন বিধায়ক সহ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পরেই নিজাম প্যালেসে পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত সেখানে গিয়ে ধর্নায় বসেন তিনি। সিবিআইকে বলেন, আমাকেও গ্রেফতার করতে হবে। এরপর প্রায় ছয় ঘন্টা সিবিআই দফতরে বসেই থাকেন।
হাইকোর্টের নির্দেশে রাতেই জেলে
সিবিআই দফতরের ভিতরে মমতা বাইরে কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মীর ভিড়। এই অবস্থায় ভার্চুয়াল শুনানি হয়। নিম্ন আদালতে গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী। দীর্ঘ সওয়াল জবাব শেষে নিম্ন আদালত থেকে জামিন মঞ্জুর করা হয়। আর এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে যায় সিবিআই। সেখানে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় জামিনের উপর। এরপরেই মধ্যরাতে চার অভিযুক্তকে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়।
রাতে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়
প্রেসিডেন্সি জেলে উত্তম কুমার ব্লকে রাখা হয় চার অভিযুক্তকে। কিন্তু শোভনবাবু জেলে নিয়ে যেতেই ভেঙে পড়েন বান্ধবী বৈশাখী। জেলের বাইরে দীর্ঘক্ষণ কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। অভিযোগ করেন, সিবিআই খেতে পর্যন্ত শোভনবাবুকে দেয়নি। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার রাতেই মদন-সহ চার নেতা-মন্ত্রীকে নিজাম প্যালেস থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মদন-শোভন। তাঁদের তড়িঘড়ি এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। সেই সময় চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মদনের শরীরে কোভিড পরবর্তী সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁর অক্সিজেনের দরকার পড়ছিল। ফুসফুসেও সংক্রমণের চিহ্ন ধরা পড়ে। সেই থেকে তিনি এসএসকেএমেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অসুস্থ হয়ে পড়েন সুব্রত মুখোপাধ্যায়
অসুস্থ হয়ে পড়েন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। একাধিক সমস্যা নিয়ে পরের দিন হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়।
চলে আইনি লড়াই
কেউ হাসপাতালে কেউ আবার জেল বন্দি অবস্থায় থাকেন। আর অন্যদিকে চলে আইনি লড়াই। চার অভিযুক্তের জামিনের আবেদণ করে শুনানি চলে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধাণ বিচারপতির ডিভিশণ বেঞ্চে। প্রায় দুই থেকে তিন দিন টাকা মামলার শুনানি চলে। আর এই শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। ক্যাভিয়েট দাখিল করা হয়। অন্যদিকে হাইকোর্টে দুই বিচারপতির মধ্যে দেখা দেয় দন্দ। জামিন না দিয়ে অভিযুক্তদের গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। গঠন করা হয় বৃহত্তর বেঞ্চ!
একের পর এক ধাক্কা সিবিআইয়ের
একদিকে হাইকোর্টে গঠন করা হয় বৃহত্তর বেঞ্চ অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয় চার অভিযুক্তের জামিন না দেওয়ার জন্যে আবেদন জানায় সিবিআই। কিন্তু একের পর এক আদালতের তোপের মুখে পড়তে হয় সিবিআইকে। শেষমেষ সিবিআই মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সিবিআই। এমণকি হাইকোর্টের বৃহত্তম বেঞ্চেও ধাক্কা খেতে হয় সিবিআই। শেষমেশ দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে জামিন মঞ্জুর চার হেভিওয়েতের। প্রায় ১১ দিন ধরে টানটান নাটক চলে নারদ কাণ্ডে। অবশেষে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর চার অভিযুক্তের কাছে।