চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, অথচ চিটফান্ডের-ই এক চ্যানেলে এক্সপার্ট প্যানেলে বসতেন সুমন
বাংলায় ভাষায় একটা বহুল প্রচারিত শব্দবন্ধ আছে। 'ঠগ বাছতে গাঁ উজার'। রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে এমনই হাল হতে পারে।
বাংলায় ভাষায় একটা বহুল প্রচারিত শব্দবন্ধ আছে। 'ঠগ বাছতে গাঁ উজার'। রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে এমনই হাল হতে পারে। সিবিআই থেকে ইডি- চিটফান্ডের কেলেঙ্কারিতে এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার ঝুলিতে এত সব চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে যে তা প্রকাশ্যে এলে চমকে যেতে হবে। কীভাবে এক ব্যক্তি চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়েও দিনের পর দিন চিটফান্ড নিয়ে চ্যানেলে নীতিকথা শুনিয়েছেন সেটাও এখন তদন্তের আঁতস কাঁচের নিচে চলে আসার সম্ভাবনা।
আইকোর ছাড়াও রাজ্যের আরও এক কুখ্যাত চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের মুখেও পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তার সত্ত্বেও এক চিটফান্ড কর্তার বহুল প্রচারিত টেলিভিশন নিউজ চ্য়ানেলে বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁকে প্য়ানেলে রাখা হয়েছিল। দিনের পর দিন এই ঘটনা ঘটে। যিনি নিজে চিটফান্ড মামলায় অভিযুক্ত এবং তাঁকে সে সময় বার কয়েক সিবিআই-এর জেরার সামনেও পড়তে হয়েছে। সেই ব্যক্তি কী করে এমন প্যানেলে অতিথি হতে পারেন? এর পিছনে কি অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল? কী সেই উদ্দেশ্য? এসবই কি হয়েছিল সুমন চট্টোপাধ্য়ায়কে চিটফান্ডের অভিযোগ থেকে আড়াল করতে? কাদের উপর এর জন্য প্রভাব বিস্তার করেছিলেন সুমন চট্টোপাধ্যায়? কারা সেই ব্যক্তি?
যে চিটফান্ডের টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে এই ঘটনা ঘটেছে তার মালিকও সে সময় জেলে ছিলেন। চিটফান্ডের তদন্তে বারবারই উঠে এসেছে প্রভাবশালীদের বিষয়টি। সবচেয়ে বড় কথা চিটফান্ডে যত ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছেন এখন পর্যন্ত তাঁদের অধিকাংশেরই সমাজে একটা সম্মানজনক স্থান রয়েছে। কেউ প্রাক্তন পুলিশ কর্তা তো কেউ মন্ত্রী ছিলেন, কেউ আবার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাংসদ। সুমন চট্টোপাধ্যায়ের মতো সাংবাদিকেরও যে রাজ্যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সঙ্গে যোগ রয়েছে তা দাবি করছে সিবিআই। আর সেই কারণে ২০ ডিসেম্বর তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
সারদা চিটফান্ড-এর পর্দা ফাঁস হতেই রাজ্য়ে একের পর এক চিটফান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে সিবিআই ও ইডি। তদন্তে দেখা যায় চিটফান্ডের ব্যবসা চালানো অধিকাংশ সংস্থাই কোনও না কোনও ভাবে গণমাধ্যমের অংশীদারিত্ব নিয়ে ফেলেছে অথবা নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া খুলে ফেলেছে। সিবিআই, ইডি, এসএফআইও-র গোপন রিপোর্টে এই তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছিল। মিডিয়া বিজনেসে চিটফান্ডগুলো বিনিয়োগ আসলে যে বেআইনি আর্থিক লেনদেনকে আড়াল করা এবং সংবিধানের চতুর্থ পিলার-কে ব্যবহার করে ক্ষমতা জাহির করা তা-ও এই সব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল। মিডিয়ার ক্ষমতা কারোর হাতের মুঠোয় থাকলে সমাজের একটা প্রভাবশালী অংশের সঙ্গেও খুব সহজে জুড়়ে যাওয়া যায়।
সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে চিটফান্ড-এর দ্বারা পরিচালিত টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলের সংযোগ স্থাপনে এই প্রভাবশালী তত্ত্ব কি কাজ করেছিল? সুমন-এর গ্রেফতারির পর এই সব নিয়েও তদন্তের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে একটা সময় চারিদিকে পরিস্থিতি উত্তাল হয়েছিল। সল্টলেকে একটি চিটফান্ড-এর অফিসে সে সময় প্রায়শই সিবিআই ও ইডির রেইড লেগেছিল। কিন্তু এসবের মধ্যেও সেই চিটফান্ডের চ্য়ানেলে সুমন চট্টোপাধ্যায়ের বিশেষজ্ঞ অতিথির আসন অলঙ্কার করাটা আটকায়নি।
সারদাকাণ্ড সামনে আসার পর থেকেই যত জন প্রভাবশালীর নাম সামনে আসে তারমধ্যে সুমন চট্টোপাধ্য়ায়ের নামও ছিল। কুণাল ঘোষ-এর মতো বিখ্যাত সাংবাদিকের গ্রেফতারির পরও মনে করা হয়েছিল সুমনও হয়তো এবার সিবিআই-এর জালে পড়তে চলেছেন। কিন্তু, আদপে তা হয়নি। দিব্যি বহাল তবিয়তেই তাঁর তৈরি প্রকাশনা সংস্থা এবং তাঁর সম্পাদিত দৈনিককে অন্য একটি চিটফান্ড সংস্থার হাতে বেঁচে দিয়ে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সুমন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, কৌশল যে আর কাজ করছে না তা পুজোর মাসেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। সুমনের গ্রেফতারির পর এবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির লক্ষ্য প্রভাব-প্রতিপত্তির বিষয়টিকেও তথ্য-প্রমাণে সাজিয়ে তোলা।