জমি রক্ষার পঞ্চায়েত বিজয়কে ধাক্কা দিতেই কি অলীক গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা
ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বলে রাজ্য সরকার এই অলীক চক্রবর্তীকে বিবৃত করেছে। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে ২০১৬ সালে যখন ভাঙড় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে তখন সামনে এসেছিল অলীক চক্রবর্তীর ন
পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য বেনজির সন্ত্রাসের সাক্ষী হয়েছিল। শাসক দলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধেও এই সন্ত্রাসে যোগসাজোশের অভিযোগ ওঠে। সন্ত্রাসের হাত থেকে বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের বাঁচাতে পুলিশের নিস্ক্রিয়তা নিয়ে বারবার নানা প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু, সদ্য সমাপ্ত মহেশতলা উপনির্বাচনে সেই সন্ত্রাসের ছিটে-ফোঁটা চিহ্নও ধরা পড়েনি। রাজনীতির আঙিনায় থাকারা স্বস্তির হাঁফ ছেড়েছিলেন। কিন্তু, তাঁদের এই ধ্যান-ধারনাতেই হয়তো এবার আঘাত দিল অলীক চক্রবর্তীর গ্রেফতার।
ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বলে রাজ্য সরকার এই অলীক চক্রবর্তীকে বিবৃত করেছে। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে ২০১৬ সালে যখন ভাঙড় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে তখন সামনে এসেছিল অলীক চক্রবর্তীর নাম। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর থেকেই প্রায় বছর দুয়েক ধরে খোঁজ চলছিল ভাঙরের গণ আন্দোলনের এই নেতার। নানা সময়ে পুলিশ ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের বহুজনকে গ্রেফতার করেছিল। এমনকী, আন্দোললেন আরও এক মাথা শর্মিষ্ঠা চৌধুরীকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু, পুলিশের নাগালে আসেননি অলীক। প্রায় বছর দুয়েক ধরে ভাঙড়ের নানা স্থানে আত্মগোপন করেছিলেন তিনি। কিন্তু, ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের বহু গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে প্রায়ই তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। পুলিশ সে সময় প্রায় নাগালে থাকা অলীককে কেন ধরল না তা নিয়ে অনেক প্রশ্নই উঠেছিল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে অলীক প্রায়ই প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসে মিটিং-মিছিল করেছেন। যদিও, পুলিশ তাঁর নাগাল পায়নি। ভাঙড় আন্দোলনের নেতা অলীক যে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূল বিরোধী হাওয়াকে শক্তিশালী করে ফেলতে পারবেন তা আঁচ করতে ভুল করেছিল পুলিশ প্রশাসনও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাঝেও ভাঙড়ের বুক থেকে অলীককে গ্রেফতার করতে চেষ্টাও করেছিল পুলিশ। সফল হয়নি তাঁদের সেই প্রয়াস। ভাঙড়ের রবীনহুডে পরিণত হওয়া অলীককে পুলিশের নাগালের বাইরে রাখতে তৎপর ছিল সাধারণ মানুষ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ের বুকে জমি রক্ষা কমিটির পাঁচটি পঞ্চায়েত আসন জয়ের পর পুলিশ-প্রশাসনের উপর চাপ বেড়েছিল বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর। শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্য প্রশাসনের কাছেও ভাঙড়ের গণ আন্দোলনের মুখ অলীককে ধরতে না পারা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। তাঁদের মত ছিল অলীক গ্রেফতারিতে বছরখানেক ধরে যথেষ্ট ঢিলেমি দেওয়া হয়েছিল। আর এই সুযোগেই অলীকের নেতৃত্বে জমি রক্ষা কমিটি ভাঙড়ের বুকে আন্দোলনের ভিত শক্ত করেছে। এমনকী কৌশলে রাজনৈতিক মোকাবিলায় নেমে তৃণমূলের চালকেও ভোঁতা করে দিয়েছে। অলীকের তৈরি করা ফাঁদে পা রেখে আরাবুল পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে বিপাকে পড়েছিলেন। শেষমুহূর্তে পুলিশ আরাবুলকে গ্রেফতার না করলে হয়তো গণরোষের শিকার হয়ে পড়তেন আরাবুল।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ধকল যে অলীকের শরীর নিতে পারছে না সে খবর পুলিশের কাছে পৌঁছেছিলো। গোপন ডেরা থেকে আন্দোলনকে পরিচালনা করতে হলে যে তাঁকে সুস্থ হতে হবে তাও বুঝেছিলেন অলীক। চিকিৎসার জন্য তাঁর হায়দরাবাদ বা ভূবনেশ্বরে যাওয়ার কথা ছিল। ২৭ তারিখ নাগাদ চিকিৎসক দেখানোর কথা ছিল তাঁর। সূত্র মারফত এই খবর পেয়ে বারুইপুর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ এবং কাশীপুর থানার পুলিশ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে হায়দরাবাদ ও ভূবনেশ্বর যায়। মোবাইল-এর লোকেশনের টাওয়ার দেখে পুলিশও জানতে পারে ভূবনেশ্বরের কলিঙ্গ হাসপাতালে ভর্তি আছেন অলীক। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে অলীককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, আপাতত অলীককে ভূবনেশ্বরের চন্দ্রশেখরপুর থানায় রাখা হয়েছে। ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে রাজ্যে আনার প্রস্তুতি চলছে। শুক্রবারই তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, অলীকের গ্রেফতারির পর থেকে ভাঙড়ে অবরোধ শুরু হয়ে গিয়েছে। রাস্তার উপর গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করেছে জমি রক্ষা কমিটি। শুক্রবার থেকে ভাঙড়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু হচ্ছে বলেও ঘোষণা করেছে তারা।