মানস প্লাস-মুকুল মাইনাস, সবং-যুদ্ধ দেখাল পঞ্চায়েতে বাংলার ভবিতব্যে কী আছে
তৃণমূলের লেজটুকুও ছুঁতে পারল না তাঁরা। বরং হেরে গেল সিপিএমের কাছেও। সিপিএমকে হারিয়ে কাঁথিতে তবু দ্বিতীয় হয়েছিল বিজেপি। এবার তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল।
মুকুল-ফ্যাক্টরে শুধু ভোট বাড়াতেই সমর্থ হল বিজেপি। যা হয়েছিল কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে, সবংয়ের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। তৃণমূলের লেজটুকুও ছুঁতে পারল না তাঁরা। বরং হেরে গেল সিপিএমের কাছেও। সিপিএমকে হারিয়ে কাঁথিতে তবু দ্বিতীয় হয়েছিল বিজেপি। এবার তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল। লাভ এটুকুই যে, বিজেপির ভোট ২ শতাংশ থেকে বেড়ে হল প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু তা বাংলা দখলের মাপকাঠি নয়।
সেইসঙ্গে এটাও প্রমাণ হয়ে গেল বিজেপি এখনও বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসকে লড়াই দেওয়ার জায়গায় আসেনি। এমনকী মুকুল রায় আসার পরেও নয়। শুধু কর্মীদের যোগদানের ছবি দেখিয়ে যে ভোটে জেতা যায় না তা দেখিয়ে দিয়েছে সবংয়ের মানুষ। সবং প্রমাণ করে দিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষেই তারা। মুকুলের পাশে নেই তাঁরা।
২০১৬-য় বাম-কংগ্রেস সম্মিলিত যে ভোট পেয়েছিল, তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী তথা মানস-জায়া গীতারানি ভুঁইয়া। তৃণমূল ভোটের ব্যবধান বাড়িয়েছে। প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৫০ শতাংশ ভোটই গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। গীতারানি ভুঁইয়া ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৬ হাজারেরও বেশি ভোট যে কেন্দ্র কংগ্রেসের গড় বলে এতদিন প্রচার হত, সেখানে কংগ্রেস চতুর্থ হয়েছে। আদতে তা প্রমাণিত হয়েছে, সবং মানসের গড়। মানস যেদিকে, সেদিকেই সবং।
বিজেপি ২০১৬ সালে মাত্র আড়াই শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার বিজেপি প্রার্থী অন্তরা ভট্টাচার্যের প্রাপ্ত ভোট ৩৭ হাজার ৪৭৬। প্রদত্ত ভোটের প্রায় ২০ শতাংশ। ফল বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে শনিবারই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোঘ কার্যত হার স্বীকার করে নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সবংয়ে লাভবান হবে বিজেপি। বিজেপির ভোট বাড়বে। তা-ই হয়েছে।
এই কেন্দ্রে বাম ও কংগ্রেসের মোট প্রাপ্ত ভোট ৬০ হাজার। গত নির্বাচনে ৪৯ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। এবার কংগ্রেসের ভঙ্গুর দশায় তা পুরোপুরি ঘুরে গিয়েছে। মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে সবংও ঘুরে গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। যেমন মানস প্লাস হয়েছে, মাইনাস হয়েছেন মুকুল রায়। বিজেপি ভেবেছিল তৃণমূলের 'সেকেন্ড'কে নিয়ে ধাক্কাটা দেওয়া যাবে তৃণমূলকে। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছেন 'একা' মানস। সবং দেখিয়ে দিয়েছে আসন্ন পঞ্চায়েতের বাংলার ভবিতব্যে কী লেখা আছে!