জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুল? সৌগতকে উষ্মা প্রকাশের পর বিজেপি নেতার সঙ্গে ফোনালাপ শুভেন্দুর!
তৃণমূলের সুখের সংসার তছনছ করে বুধবার রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তোলেন শুভেন্দু অধিকারী। সৌগত রায়কে পাঠানো শুভএন্দুর এসএমএস সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতেই হতাশ হয় জোড়াফুল শিবির। হঠাৎই আনন্দের মুহূর্তে নেমে আসে আশঙ্কার কালো ছায়া। এরই মধ্যে ফের শুভেন্দুর বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জল্পনা তীব্র হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক নেতার সঙ্গে শুভেন্দুর দীর্ঘ ২০ মিনিট ফানালাপ ঘিরে জোর জল্পনা শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে।
মিহির গোস্বামীর সঙ্গে কথা হয় শুভেন্দু অধিকারীর
জানা গিয়েছে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ক মিহির গোস্বামীর সঙ্গে বুধবার দীর্ঘ ২০ মিনিট ফেনে কথা হয় শুভেন্দুর। এই বিষয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ক মুখ না খুললেও মিহিরবাবু এই প্রসঙ্গে বলেন, শুধুমাত্র সৌজন্য বিনিময়ের লক্ষ্যেই ফোনে কথা হয় দুই জনের। তবে কি ২০ মিনিট ধরে দুই জনের মধ্যে শুধুই সৌজন্য বিনিময় হয়, নাকি তাছাড়াও 'রাজনৈতিক রেফারেন্স'-এর প্রসঙ্গও উঠে আসে?
শুভেন্দুকে বিজেপিতে যোগদানের আহ্বান
মিহির গোস্বামী শুভেন্দুকে বিজেপিতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বাংলার স্বার্থে এই আহ্বান জানিয়েছেন বলে দাবি মিহিরবাবুর। অবশ্য ফোনে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে কোনও পোক্ত আলোচনা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
কী বললেন মিহির গোস্বামী
মিহিরবাবু বলেন , 'শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী সম্পর্কে আমার কাকাবাবু হন। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ ৩৫ বছরের সম্পর্ক। অধিকারী পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের জেরে শুভেন্দুকে সন্ধেয় ফোন করেছিলাম। আমি যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি সে কথা বললাম। এছাড়া অন্য অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিষয়ে তেমন কিছু আলোচনা হয়নি।'
শুভেন্দুকে দলে পেতে আগ্রহী বিজেপি
উত্তরবঙ্গের বর্ষীয়ান নেতা মিহিরবাবু দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তাঁর আলাপ থাকার দরুণ এই সৌজন্য বিনিময়। যদিও এই ফোনালাপের নেপথ্যে শুভেন্দুর বিজেপি যোগের গন্ধ পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপিতে যে শুভেন্দুকে তৃণমূলে থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে যেতে খুবই আগ্রহী, তা পদ্ম শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের কথায় প্রকাশ পেয়েছে বারংবার।
শুভেন্দুর বাড়িতে অনুগামীদের আনাগোনা
এদিকে বুধবার থেকেই শুভেন্দু অধিকারীদের বাড়িতে অনুগামীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর আজ সকাল থেকে কাঁথির শান্তিকুঞ্জে অধিকারী বাড়িতে ভিড় জমতে শুরু করেছে। সকাল থেকে বাড়িতে একাধিক অনুগামীরা হাজির হন। তাঁদের প্রশ্ন করা হলে তাঁরা জানান, দাদার সঙ্গে দেখা করতে চান৷ তবে কি বিষয়ে দেখা করবেন তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। এইসব অনুগামীরা মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন বলে জানা যায়।
শুভেন্দুর একরাশ অভিমানের নেপথ্যে কোন কারণ?
বেশ কিছু সময় ধরে তৃণমূলের অন্দরে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে চাপানউতর চলছিল। দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল অধিকারী পরিবারের বড় ছেলের। শুভেন্দুর একরাশ অভিমানের পিছনে নাকি তৃণমূল কংগ্রেসের স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা ছিল। সঙ্গে অবশ্যই অভিষেকের সঙ্গে ক্ষমতা দখলের লড়াই এবং 'ইগো'। তবে মঙ্গলবার রাতের এক বৈঠকের পর সৌগত রায়ের তরফে দাবি করা হয়েছিল, সব ঠিক আছে। শুভেন্দু জোড়াফুল শিবিরেই থাকবেন। তবে সৌগতকে বিব্রত করে বুধবারই 'মত বদলান' শুভেন্দু।
যা নিয়ে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে
দলের অন্দরে কান পাতলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের মাথার উপর পিকে-র চেপে বসা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না শুভেন্দু। যা নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতানৈক্য হয় তাঁর। একসময় শুভেন্দুর অরাজনৈতিক সভা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। শেষপর্যন্ত পরিবহণ মন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। তারপর সৌগত রায়ের মধ্যস্থতার পর গতকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন শুভেন্দু।
মমতার সভার আগে আজই পশ্চিম মেদিনীপুরে শুভেন্দু, ভূমিপুত্রের সফর ঘিরে জোর জল্পনা