শুভেন্দুর প্রতি মমতার ‘সৌজন্যে’র অন্ত নেই! বিধানসভায় পুস্তিকা প্রকাশ করে দেখালেন প্রমাণ
শুভেন্দুর প্রতি মমতার ‘সৌজন্যে’র অন্ত নেই! বিধানসভায় পুস্তিকা প্রকাশ করে দেখালেন প্রমাণ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে্র এক সৌজন্যের এমন ঠেলা যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে পুস্তিকা প্রকাশ করতে হল। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এখন পর্যন্ত কী কী 'সৌজন্য' দেখিয়েছেন তা পুস্তিকা প্রকাশ করে প্রকট করে দিলেন বিরোধী দলনেতা। মমতা-শুভেন্দুর সৌজন্য সাক্ষাতের পর যেভাবে তা রাজ্য রাজনীতিতে ঢিঢি পড়ে গিয়েছে, তাতে অস্বস্তি দূর করতে বিজেপিকে নানা পন্থা নিতে হচ্ছে।
২৫ নভেম্বর বিধানসভার সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানের আগে বিধানসভার প্রথমার্ধের অধিবেশনের পর আচমকাই শুভেন্দু অধিকারীকে ডেকে পাঠান মমতা বন্যো্রপাধ্যায় তারপর তাঁরা পারস্পরিক নমস্কার প্রতি নমস্কার করেন। কিন্তু চর্চা শুরু হয়ে যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্যোক পাধ্যায়কে প্রণাম করেন। তার ফলে বিজেপি অস্বস্তিতে পড়ে।
এই অবস্থায় রাজ্যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে অস্বস্তি দূর করতে বিধানসভায় পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। শুভেন্দু ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তারপর হয় ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন। পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ৩ মে থেকে ২০২২-এর ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মোট ২৬টি মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার। এদিন পুস্তিকায় তা উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যের নমুনা দেখিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
৬ পাতার ওই পুস্তিকায় শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রতিবাদ ও আইনি লড়াই জারি থাকবে। খুব শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর আধিকারিকদের জনগণের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি তিন ভাষাতেই পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তা তিনি শুধু রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের বিরোধী দলনেতাদের কাছে পাঠাবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরূপ প্রকাশ করতেই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় সৌজন্ দেখিয়ে বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়কদের নিজের ঘরে ডাকেন চা খেতে, কিন্তু সরকারি বৈঠকে ডাকেন না, বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেন না। তাই তাঁর স্বরূপ দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করা জরুরি। তাই এই উদ্যোগ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এই উদ্যোগকে মিথ্যা মামলার অভিযোগ করে কটাক্ষ করেন। প্রশ্ন ওটে তিনি মুখ্যমন্ত্রী স্বরূপ প্রকাশ খরতে এতদিন পরে উদ্যোগ নিলেন কেন, তাহলে কি সৌজন্যের রাজনীতিতে গোল খেয়েই এই পন্থা নিলেন শুভেন্দু? প্রশ্ন উঠে পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
মমতা-শুভেন্দু সৌজন্যের পর প্রণাম-তরজা চলেই যাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। পঞ্চায়েতের আগে সৌজন্যের রাজনীতিতে বিজেপির মুখ পুড়তে পারে বলে আশঙ্কা করে রাজনৈতিকভাবে পাল্টা দিতে বিজেপি হন্যে হয়ে একটা ছবি খুঁজে বেড়াচ্ছে বলে জানা যায়। শুভেন্দু অধিকারী কালবিলম্ব না করে সৌজন্যের রাজনীতির ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পাল্টা দিয়ে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করে ছাড়ব। কিন্তু শুধু মুখের কথায় অস্বস্তি এড়ানো যায়নি। তাই বিজেপি সার ভেবেছে, রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলকে পাল্টা দিতে মমতার মোদী-প্রণামের ছবি সামনে আনবে। কিন্তু সেখানেও বেধেছে গোল।
শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাতে তাঁকে সৌজন্যমূলক প্রণাম করেছেন বলে বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়েছে। কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সৌজন্য দেখাতে নমস্কার প্রতি নমস্কার করেই থাকে। তা নিয়ে কেন এত বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠে পড়েছে। কিন্তু সেই প্রশ্নের থেকেও বড় হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার বিষয়টি। তৃণমূল বেশি ফায়দা লুটতে পারে ভেবে তাই বিজেপি এর পাল্টা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে প্রধানমন্ত্রীকে ঢাল করা ঠিক হবে না বলেই একাংশ মনে করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রণামের ছবি প্রকাশ্যে এনে তৃণমূলের হাতিয়ারকে ভোঁতা করার প্রয়াসও তাই বিশ বাঁও জলে। তারপরই পুস্তিকা প্রকাশ করে বিজেপি তৃণমূলকে পাল্টা দিতে চাইছে।
তৃণমূলকে নকল করে জনসংযোগে বিজেপি, নন্দীগ্রামের পাল্টা অনুব্রত-গড়েও উঠোন-বৈঠক