সুন্দরবনে অবাধে লুট হচ্ছে কেওড়া, নির্বিকার প্রশাসন, পেটের দায়ে চোরা কারবার গ্রামবাসীদের
অবাধে লুট হচ্ছে সুন্দরবনের কেওড়া ও ওই জাতীয় ফলগুলো। যা সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী-প্রজাতির প্রধান খাদ্য।
অবাধে লুট হচ্ছে সুন্দরবনের কেওড়া ও ওই জাতীয় ফলগুলো। যা সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী-প্রজাতির প্রধান খাদ্য। ফলে মূলত দিনকে দিন খাবারের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে জঙ্গলের গহীনে, জীবজন্তুদের। খাবারের অভাবে আগামী প্রজন্মের জীবনযাত্রা বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বনপ্রেমীরা। আগামীতে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে বলেও আশাবাদী তাঁরা। ভেঙ্গে পড়তে পারে বাস্তুতন্ত্র।
মুখ ঘুরিয়ে বন দফতর
কিন্তু বনপ্রেমীদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ বনদপ্তর। সব কিছু জেনেও এই অবাধ লুট রুখতে কোনও উচ্চবাচ্য নেই বনদফতরের, প্রশাসনের তরফেও নেওয়া হয়নি কোনও উদ্যোগ।
চলছে চোরাচালান
দেশ তথা রাজ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই সুন্দরবনাঞ্চল। যার মধ্যে কালিতলা, ঝিঙেখালি, সজনেখালি, শমশেরনগর, গোসাবা, কৈখালি, রায়দিঘি, গদখালি, বনিক্যাম্প, কলসদ্বীপ-এর মতো জায়গা গুলো উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বাঁদরের তৃণভোজী প্রাণী ও হরেক রকমের পাখির মূল খাবার একমাত্র ফল কেওড়া জাতীয় ফল। কিন্তু দিন দিন এই বনজ সম্পদ লুটের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। যার একদিকে রয়েছে সুন্দরবনবাসী, অন্যদিকে চোরাচালানকারী।
প্রকৃতির সঙ্কট
বর্ষার মরশুমে অনাবৃষ্টির ফলে একদিকে যেমন ফলন কম, তেমনই বিপুল পরিমাণে বনভূমি ধ্বংসের ফলে জঙ্গলে গাছের সংকট দেখা দিচ্ছে। অপরদিকে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষেরা জীবন ধারণ করার জন্য নদী পেরিয়ে জঙ্গলের কেওড়া ফলের মতো বিভিন্ন গাছ থেকে ডাল ভেঙে অবাধে ফল লুট করছে। নদী পেরিয়ে সেগুলি এনে অর্থের বিনিময়ে শহরে বিক্রি করছে ফোরে ও দালালদের কাছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকা
কুইন্টাল-কুইন্টাল কেওড়া ফল দালালদের কাজে অল্প দামে বিক্রি হলেও। দালালরা সেগুলি মোটা অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ছোট থেকে বড়, পুরুষ - মহিলারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নদী পেরিয়ে এই কাজ করছে। কখনও ঢুকে পড়ছে জঙ্গলের কোর এরিয়ায়। এছাড়াও রয়েছে চোরাচালানকারীদের দাপট। যা রুখতে একেবারেই ঠুঁটো জগন্নাথ প্রশাসন।
ভরসা জঙ্গলই
তবে গ্রামবাসীদের কথায়, 'কি করব? কোথায় যাব? কিভাবে জীবন কাটাব? ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। এখানে তো কেউ কাজ দেয় না। এক মাত্র জঙ্গলই ভরসা।' একশো দিনের কাজের নামই শোনেননি তারা। তাই পুরুষ ও মহিলারা তাদের পরিবার বাঁচানোর তাগিদে উধ্যত হন বনাঞ্চল ধ্বংসের।