তৃণমূলকে হারানোর ‘সাধ্য’ নেই বিজেপির! কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি
তৃণমূলকে হারিয়ে বাংলার ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছিল বিজেপি। ত্রিপুরায় বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা আসার পর অতি উৎসাহী বিজেপি বাংলায় মমতার শাসনের অবসান ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তা যে দুঃসাধ্য ছিল, তা এতদিন পর স্বীকার করে নিল বিজেপি। খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি নিজের মুখেই তা স্বীকার করে নিলেন কার্যত।

কল্পনার চূড়া থেকে একেবারে মাটিতে পড়েছে ধপাস করে
মেদিনীপুরে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, বিজেপি বাংলার ক্ষমতায় আসার যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি ২০২১-এ। বিজেপিতে অবনেক খামতি রয়ে গিয়েছিল। আমরা ২০২১-এ বাংলার ভোটে বেশি চেয়ে ফেলেছিলাম। তাই আমরা কল্পনার চূড়া থেকে একেবারে মাটিতে পড়েছি ধপাস করে।

২০০-তো দূর অস্ত, ১০০-র গণ্ডিই পেরোতে পারেনি বিজেপি
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বাংলায় সাফল্যের পর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল। স্লোগান তুলেছিলেন ঊনিশে হাই, একুশে সাফ। বাংলা-জয়ের লক্ষ্যে ২০০ আসনে জয়ের টার্গেট খাঁড়া করছিল বিজেপি। কিন্তু ২০০-তো দূর অস্ত, ১০০-র গণ্ডিই পেরোতে পারেনি তারা। ফলে যা হবার তাই হয়েছেও, বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল।

বিজেপি ক্ষমতায় থেকে বেশি চেয়ে ফেলেছিল, তাই পতন
বিজেপি মাত্র ৭৭টি আসনেই আটকে গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গেই বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বিজেপি ক্ষমতায় থেকে বেশি চেয়ে ফেলেছিল। তাই বেশি স্বপ্ন দেখে ফেলেছিল। তাই ধপাস করে নীচে পড়েছে বিজেপি। ২০২১-এর নির্বাচনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও বিজেপি জিততে পারেনি।

স্বপ্নের জাল বুনেছে বিজেপি, ফের একবার চূড়ান্ত ব্যর্থ
তার অর্থ, বিজেপির ক্ষমতা চাওয়ার থেকে কম ছিল। সুকান্ত মজুমদার তাঁর এই আত্ম সমালোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নেতৃত্বের ভাবনা-চিন্তায় গলদ ছিল। বিজেপি ক্ষমতার বাইরে গিয়ে মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল বলে মন্তব্য তাঁর। বিজেপি বেশি চেয়ে ফেলেছিল বাংলায়। ২০০ আসন পাওয়ার ক্ষমতা ছিল না, তবু সেই স্বপ্নের জাল বুনেছে বিজেপি। বিজেপি ফের একবার চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

সুকান্ত মজুমদার আত্মসমালোচনায় প্রশ্নে বিজেপির ক্ষমতা
বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার আত্মসমালোচনা করে জানিয়েছেন, শুধু হাইপ তুললেই হবে না। নিজেদের ক্ষমতাকে সেই স্তরে নিয়ে যেতে হবে। আমরা বাংলায় ক্ষমতায় আসার যোগ্যই হইনি। তবু আমরা দুশোর স্বপ্নে বিভোর থাকলাম। আমাদের ক্ষমতা কতটা, তা নিয়ে ভাবলাম না। সরকার গড়ছি, সরকার গড়ছি- হাইপ তুলেই নির্বাচনে নেমে পড়লাম।

মানসিকতা পরিবর্তনের দাওয়াই দিলেন সুকান্ত মজুমদার
এ ব্যাপারে তিনি দায়ী করলেন দলের অনৈক্যেকেও। সুকান্ত মজুমদার এদিন বলেন, বিজেপির নেতা-কর্মীরা যদি মানসিকতার বদল না করেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা আসা দুঃস্বপ্নই রয়ে যাবে। একজন টিকিট পেলেই অন্য দুজন তার পিছনে লেগে যায় বিজেপিতে। তাঁকে হারাতে তৎপর হয়ে ওঠে। এই মানসিকতা পরিবর্তন করে দল যদি কোন্দলমুক্ত না হতে পারে, তাহলে আমরা কোনওদিনই এগিয়ে যেতে পারব না আমরা।

তৃণমূলের কাছ থেকে যা শিক্ষণীয় বিজেপির, বললেন সুকান্ত
বিজেপি রাজ্য সভাপতি এ ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা সারা বছর ভারত মাতা কি জয় বলে একসঙ্গে থাকছি। ভোট এলেই আমরা মারমারি শুরু করে দিচ্ছি। যা ক্ষতি করছে আমাদের। আর তৃণমূলকে দেখুন, গোটা বছর ওরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। যখনই ভোট আসছে, তখনই সব চোর এক জায়গায় হয়ে যাচ্ছে। কারণ ওরা জানে ভোটটা যদি না জিততে পারি, আর তোলাটা তুলতে পারব না।

মুকুল রায়ের সঙ্গে বঙ্গ নেতৃত্বের মনোমালিন্য এ বিষয়েই
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, একুশের ভোটের আগে বিজেপির তৎকালীন সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গে বঙ্গ নেতৃত্বের মনোমালিন্য হয়েছিল নির্বাচনী টার্গেট নিয়ে। মুকল রায় বলেছিলেন, বিজেপির ক্ষমতা সম্বন্ধে অনেক বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। বেশিরভাগ বুথেই বিজেপির শক্তি ততটা বেশি নয়, যতটা হলে তৃণমূলকে হারানো সম্ভব। মুকুলের কথায় ৫০-৬০টি ওয়ার্ডে বিজেপি শক্তিশালী। কিন্তু যেভাবে দল ২০০ আসনে জিতবে বলে দাবি করছেন এবং বঙ্গ বিজেপির পক্ষে ভুল রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তার সমালোচনা করেন তিনি। এখন সুকান্ত মজুমদারের মুখে সেই শোনা গেল সেই কথা।

সুকান্তের আত্মসমালোচনা শাহের পরিকল্পনার পরিপন্থী
উল্লেখ্য, একুশের নির্বাচনে মুকুল রায়কে সাইড করে টিম সাজান অমিত শাহ। নিজের হাতে রাখেন পুরো ব্যাটন। অমিত শাহ নিজে নির্বাচন পরিচালনা করেন। কিন্তু তারপরও বিজেপি কাঙ্খিত সাফল্য লাভ করতে পারেনি। বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়ে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। ফলে বিজেপির এমন অবস্থার জন্য তিনি দায় এড়াতে পারেন না। সুকান্ত মজুমদারের আত্ম সমালোচনা অমিত শাহের পরিকল্পনার পরিপন্থী বলেই বিশেষজ্ঞমহলের ধারণা।
বেশি স্বপ্ন দেখাই কি কাল হল বিজেপির! সুকান্তের তাৎপর্যপূর্ণ বার্তায় জোর জল্পনা