পদ্মশ্রী পাচ্ছেন হিউম্যানিটি হাসপাতালের 'বুড়িমা'
এ রাজ্য থেকে পদ্মশ্রী পাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষিণী মিস্ত্রি। হিউম্যানিটি হাসপাতাল নিয়ে অসাধারণ কাজের জন্য পদ্মশ্রী প্রাপক হিসেবে তাঁর মনোনীত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
এ রাজ্য থেকে পদ্মশ্রী পাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষিণী মিস্ত্রি। হিউম্যানিটি হাসপাতাল নিয়ে অসাধারণ কাজের জন্য পদ্মশ্রী প্রাপক হিসেবে তাঁর মনোনীত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হাঁসপুকুরে হিউম্যানিটি হাসপাতালে এসেছিল ফোন। ও এ প্রান্তে ছিলেন হিউম্যানিটি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা অজয় মিস্ত্রি। অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সুভাষিণী মিস্ত্রিকে পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এরপরেই সন্ধেয় পদ্মশ্রী প্রাপকদের নাম জানানো হয় কেন্দ্রে তরফে।
পুরস্কার পাওয়ার খবরে খুশি অজয় মিস্ত্রি। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছেন অজয় মিস্ত্রি। পুরস্কার পাওয়ায় জন্য গ্রামবাসী-সহ চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মীদের ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি।
সুভাষিণী মিস্ত্রি। বয়স প্রায় ৭৫ বছর। অল্প বয়সেই স্বামীকে সাধন মিস্ত্রিকে হারান। ১৯৭১ সালে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছিল সাধন মিস্ত্রির। এরপরেই দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ হন, যত সামান্য রোজগারই হোক না কেন, কাউকে তাঁর স্বামীর মতো বিনা চিকিৎসায় মরতে দেবেন না। সেই মতো আয়ের একটি অংশ তুলে রাখতেন তাঁর স্বপ্ন পূরণের জন্য। স্বপ্নের প্রথম ধাপ পূরণ হয় যখন ছেলে অজয় মিস্ত্রি ডাক্তারি পাশ করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে ঠাকুরপুকুরের কাছে হাঁসপুকুরে জমি কিনে অস্থায়ী ছাউনি গড়ে শুরু হয় রোগীদের চিকিৎসা। ১৯৯৫ সালে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। আর ১৯৯৬ থেকে দোতলা হাসপাতালে দরজা খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য।
এই মুহূর্তে হিউম্যানিটি হাসপাতালে রয়েছে আধুনিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত। রয়েছে ৪৫ টি বেড। ১০ বেডের আইসিইউ-ও রয়েছে সেখানে। চিকিৎসক হিসেবে ছেলে অজয় মিস্ত্রি ছাড়াও রয়েছেন শহরের নামী চিকিৎসকরা। এখানে গরিম মানুষ অনেক কম খরচে চিকিৎসা করাতে পারেন।
জীবনের লড়াইটা সুভাষিণী মিস্ত্রির পক্ষে সহজ ছিল না। ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় ঠিকে শ্রমিক সাধন মিস্ত্রির সঙ্গে। এগারো বছর ঘর করার পর স্বামী মারা যান বিনা চিকিৎসায়। বলে যেতে পারে অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। এরপর সন্তানদের নিয়ে জীবনের সংগ্রাম চলতে থাকে। জীবিকা নির্বাহের জন্য সবজির দোকান দেন সুভাষিণী দেবী। এরই মধ্যে যখনই সময় পেয়েছেন বাড়ি বাড়িতে কাজ করেছেন, করেছেন পুকুর পরিষ্কারও। সন্তানদের পড়ানোর মতো সামর্থ ছিল না বলে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অনাথ আশ্রমে। সেখানে পড়াশোনা করেই এক ছেলে এখন চিকিৎসক এবং একমাত্র মেয়ে নার্স। দুজনেই যুক্ত এই হাসপাতালের সঙ্গেই।
হাসপাতাল শুরু করার পর থেকে প্রতিদিনই নিজে খোঁজ খবর নিতেন সুভাষিণী মিস্ত্রি। কিন্তু এখন বয়সের ভারে হাসপাতালে রোজ যেতে পারেন না হাসপাতালে। তবে পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে জানান, খুশি তিনি।