জাতীয় পতাকার অবমাননায় প্রতিবাদীই পেলেন 'শাস্তি'! পুলিশকে ভর্ৎসনা, কবিতায় প্রতিবাদ
সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। অম্বিকেশ মহাপাত্রকে দিয়ে শুরু হয়েছিল যে ঘটনার, তা আজও বহমান। অম্বিকেশের পর মালবাজারের রোহিত পাশি, এবার বর্ধমানের ভাতারের মেধাবী ছাত্র অমিত ঘোষ।
সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। অম্বিকেশ মহাপাত্রকে দিয়ে শুরু হয়েছিল যে ঘটনার, তা আজও বহমান। অম্বিকেশের পর মালবাজারের রোহিত পাশি, এবার বর্ধমানের ভাতারের মেধাবী ছাত্র অমিত ঘোষ। তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে উল্টো পতাকা তোলা হয়েছিল স্বাধীনতা দিবসের দিন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় শাসকের রোষানলে পড়লেন প্যারা মেডিকেলের ছাত্র অমিত ঘোষ।
তার জেরে এক রাত হাজতবাসের পর অমিতকে তোলা হল বর্ধমান আদালতে। সেখানে বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল পুলিশকে। সরকারি আইনজীবীও কথা হারালেন। রবিবার বর্ধমানের ভাতারের মেধাবী ছাত্র অমিত ঘোষের জামিন মঞ্জুর করলেন বিচারক।
আর তার প্রেক্ষিতেই সুজন চক্রবর্তী টুইট করলেন- জাতীয় পতাকার অবমাননা করল শাসক দল। আর শাস্তি পেল প্রতিবাদী ছাত্র। যে ছাত্রকে পুরষ্কৃত করা উচিত ছিল, পরিবর্তে তাকে দেওয়া হল শাস্তি, হাজতবাস করতে হল তাকে। ফের এক দুর্ভাগ্যজনক ও বিদ্বেষপূর্ণ এক ঘটনার সাক্ষী থাকতে হল। এই ঘটনা প্রমাণ করে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে রাজ্যে। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ফের একবার প্রমাণ হল, পুলিশ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে প্রতিবাদীর কন্ঠরোধ করতে পারে না।
ঘটনার সূত্রপাত, ১৫ আগস্ট। পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে মাহাচান্দা পঞ্চায়েতের খুরুল গ্রামের তৃণমূল কার্যালয়ে উল্টো করে টাঙানো হয়েছিল জাতীয় পতাকা। সেই ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তাতে কমেন্ট করেছিলেন বর্ধমান প্যারা মেডিকেলের ছাত্র অমিত ঘোষ। তিনি লেখেন, এই তৃণমূলের কাছ থেকে দেশাত্মবোধ আর কী শিখব! তবে, তাঁর লেখার মধ্যে এক-আধটি কু-কথাও যুক্ত ছিল। ব্যস, সেটাই হয়ে গেল অপরাধ। সটান পুলিশ চলে এল অমিতের বাড়িতে। রাত ১২টার পর দরজা ভেঙে অমিতকে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, অমিত ঘোষের পরিবার বাম সমর্থক। সেই কারণেই তাঁকে গ্রেফতার হতে হল। এবং তাঁকে পুরো একটা দিন থানায় আটকে রাখার পর তবেই আদালতে তোলা হয়। প্রতিবেশী গোলকপতি ঘোষ বলেন, আমরা থানায় বারবার দরবার করেছি, অমিতকে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি। পুলিশ অযথা আমাদের হয়রান করিয়েছে। কিন্তু অমিতকে ছাড়েনি। শেষমেশ তাকে আদালতে তোলার পরই আমরা জামিন করাই।
রবিবার আদালতে যুক্তিপূর্ণ কোনও কারণ দর্শাতে পারেনি পুলিশ। সরকারি আইনজীবীও যুক্তি খাঁড়া করতে পারেনি অমিতকে কেন গ্রেফতার করা হল, কী তাঁর অপরাধ ছিল। তারপরই বিচারক পুলিশকে ভর্ৎসনা করে অমিতের জামিন মঞ্জুর করেন। শুধু অমিতকেই নয়, অমিতের বাবা পেশায় কৃষক রাধামোগহন ঘোষ ও দাদা অপূর্ব ঘোষের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়। এদিন তাঁরা জামিনের আবেদন করেছেন আদালতে।
এই ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চিঠি করবে 'আক্রান্ত আমরা', এমনটাই জানা গিয়েছে। আর জাতীয় পতাকার অবমননার প্রতিবাদ করে শাসকের রোষানলে পড়া অমিতের গ্রেফতারি প্রসঙ্গেই একটি কবিতা লিখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কবি মন্দাক্রান্তা সেন। সেই কবিতার নাম 'অনর্থ'। আর কবিতারটি হল-
ওরা
নাকি
ভারি
দেশপ্রেমিক
ফুটিয়েছে
ঘাসফুলটি
জাতীয়
পতাকা
কেমনটি
ঠিক
তাতেই
করল
ভুলটি!
নিজের
দেশের
পতাকা
চেনে
না
উলটো
গেরুয়া
সবুজই----
যেখানে
থাকগে
থাকুক,
কেননা
দুটি
রঙ
একই,
তা
বুঝি!
জাতীয়
পতাকা
এ
অবমাননা
ছেলেটি
করল
প্রতিবাদ
এ
প্রতিবাদের
ফল
কী
জানো
না?
পুলিশ,
কোমরে
দড়ি
বাঁধ!
অশিক্ষিতের
স্বাধীনতা
পুজো
ভুল
ধরে
দিলে
শাস্তি
প্রতিবাদী
সেই
ছেলেটিকে
খুঁজো
বুঝবে
সর্বনাশটি
ওরা
সন্তান
ভারতমাতার
হায়
রে
স্বদেশ
হায়
ওদের
হাতেই
স্বাধীনতা,
তার
মানেই
উল্টে
যায়!