তৃণমূল কংগ্রেস ক্লোজড চ্যাপ্টার! বিজেপিতে সক্রিয় হওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে রাখলেন শোভন
তৃণমূল ক্লোজড চ্যাপ্টার! বিজেপিতে সক্রিয় হওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে রাখলেন শোভন
শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও মনস্থির করতে পারছিলেন না। অবশেষে অন্তরাল থেকে বেরিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলায় সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার। কিন্তু কোথায় সক্রিয় হবেন শোভন? তা নিয়ে ধন্দ পুরোপুরি কাটেনি। তবে বিজেপির পালেই যে হাওয়া ভারী, তা তাঁর বাকচাতুর্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন শোভন!
শোভন কি সক্রিয় হবেন করোনা কাটলেই
হাত থেকে একে একে তিন মন্ত্রক, কলকাতা পুরসভার মেয়র, তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি-সহ বিভিন্ন পদ ও কমিটি হাতছাড়া হওয়ার পর তিনি ৯ মাস তৃণমূলে ছিলেন। সেই অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন। সেটাও এক বছর আগে। এতদিনে শোভন সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করেছেন তিনি সক্রিয় হবেন করোনা কাটলেই।
কিন্তু কোথায় সক্রিয় হবেন তিনি?
কোথায় সক্রিয় হবেন শোভন, সে ব্যাপারেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। শোভন জানিয়েছেন তৃণমূলে ফিরতে তাঁরা বাধা কোথায়। সেই বাধা যে এই এক বছরে কাটেনি, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শোভন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকেছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ডেকেছেন, তবু স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। তাই তাঁর তৃণমূলে ফেরার পথ বন্ধ। বিজেপিতেই তিনি সক্রিয় হবেন, মুখে না বললেও ইঙ্গিত সেটাই।
তৃণমূলে ফেরার পথে বাধা সরেনি শোভনের
শোভন বলেন, বিজেপির পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননের সঙ্গে বৈঠকের পরই তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যোগাযোগ করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পার্থকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কেন তাঁর তৃণমূলে ফেরা হচ্ছে না, এখনও কোথায় বাধা। তিনি কী করবেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর আবেগ জানাতে তিনি পিছপা হননি।
ফেরার শর্ত যখন স্পষ্ট, পার্থকে শোভন
শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে মুখেই তৃণমূল মহাসচিবকে জানিয়েছেন, বৈশাখীকে যেভাবে সরানো হয়েছে তাঁর চাকরি থেকে। যেভাবে তাঁর মর্যাদার হানি করা হয়েছে দিনের পর দিন, তারপর বৈশাখীর সম্মান ফেরানো ছাড়া তাঁর কোনও সিদ্ধান্ নেওয়ার জায়গা নেই। শোভন বলেন, কেবল আমার জন্য বৈশাখীকে যা সহ্য করতে হয়েছে, সেটা অনভিপ্রেত। আমার ফেরার শর্তে বৈশাখী সব ফিরে পাবে, তা চাইনি কখনও।
কেন শোভন তৃণমূলের প্রতি বৈরাগ্য
এভাবেই জনপ্রিয় এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে শোভন স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন তাঁর তৃণমূলের প্রতি বৈরাগ্য। তারপরও অবশ্য জোর দিয়ে তিনি বলেননি তিনি বিজেপিতেই থাকছেন এবং সক্রিয় হচ্ছেন। তবে আকারে-ইঙ্গিতে, তাঁর কথা-বার্তায় বিজেপিতে তাঁর সক্রিয় হওয়ারই পূর্বাভাস দেয়।
আগে নিঃশর্তে তৃণমূলের পতাকা ধরুক শোভন!
এরপর তৃণমূল বার্তা দিয়েছে, শোভন আগে নিঃশর্তে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিক, তারপর যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এবং তাঁর শর্ত নিয়েও ভাবা হবে। শর্ত পূরণের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে প্রকারান্তরে। তবে আগে নয়, শোভন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরই তৃণমূল এই যাবতীয় আলোচনায় রাজি। অন্যথায় শোভনের এন্ট্রি চায় না তৃণমূল।
শোভনের শর্ত নিয়ে ভ্রু-কুঁচকেছে তৃণমূল
তৃণমূল কংগ্রেস এর আগে শোভনের শর্ত নিয়ে ভ্রু-কুঁচকেছিল। তৃণমূলের একটা বড় অংশ চায় না, রত্নাকে সরানোর শর্তে শোভনকে ফেরাতে। শোভনকে তৃণমূলে ফিরতে হলে রত্নাকে মেনে নিয়েই ফিরতে হবে। রত্না তৃণমূল পরিবারের একটা অংশ, তাঁকে বসিয়ে শোভনকে আনার প্রশ্নে সায় নেই প্রশান্ত কিশোরেরও।
সব মুখোশ খুলে দেবেন শোভন
আর শোভন এতদিন পর মুখ খুলে জানিয়ে দিয়েছেন করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে সব মুখোশ খুলে দেবেন। আবার এমনটাও জানিয়েছেন, বিজেপি দলের সঙ্গে আমার কোনও বৈঠক হয়নি, বৈঠক হয়েছে একান্তই ব্যক্তিগত পর্যায়ে। সৌজন্য সাক্ষাৎকার ছিল এটা। অরবিন্দ মেনন রাজ্যে এলেই আমার বাড়িতে আসেন। আগেও বহুবার এসেছেন। সেদিনও আসেন। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।
প্রসঙ্গ পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন!
পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন? এ প্রসঙ্গে শোভন বলেন, শেষ বিচার করবে মানুষ। আমার কোথায় অবস্থান সময় এলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। বিজেপির কর্মসূচি্তে হাজির হওয়ার অবকাশ হয়নি। তবে প্রকাশ্য কর্মসূচিতে ছিলাম না বলে যে রাজনৈতিক পর্যালোচনা করিনি এমন নয়।
সবুরে মেওয়া ফলে, বলছেন শোভন
শোভন এছাড়াও বলেন, এখন রাজ্যে ৪০ শতাংশ বিজেপির। এটাও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। তারপর রাজ্যে সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে, তা বাংলার রাজনীতিতে সমীচিন নয়। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে মানুষ। করোনা থেকে ঘূর্ণিঝড় এসেছে। সবই বিবেচানাধীন। সঠিক সময় এলেই মানুষ উত্তর দেবে। এই কথাবার্তাই আভাস দেয় শোভন বিজেপিতে সক্রিয় হওয়াই শ্রেয় মনে করছেন।
তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাল বিজেপি, দলে দলে যোগ গেরুয়া শিবিরে