বাংলায় কী হবে ২০১৯ লোকসভার জোট সমীকরণ, সোমেনের কথা শুনেই সিদ্ধান্ত রাহুলের
অধীর চৌধুরী আউট, সোমেন ইন। রাহুলের এই সিদ্ধান্তের পর আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছিল, লোকসভার আগে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতেই রাহুল গান্ধী চরম সিদ্ধান্ত নিলেন।
অধীর চৌধুরী আউট, সোমেন ইন। রাহুলের এই সিদ্ধান্তের পর আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছিল, লোকসভার আগে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতেই রাহুল গান্ধী চরম সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সোমেন মিত্রের হাতে দলের ব্যাটন তুলে দেওয়ার পরও প্রদেশ কংগ্রেস চরিত্র বদল করছে না। প্রদেশ কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোটে এখনও অরাজি- রাহুলকে সেই বার্তাই দেবেন সোমেন।
সোমেন-কথা রাহুল-সকাশে
লোকসভার জোট সমীকরণ নিয়ে রাজ্যওয়াড়ি ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। সেইমতো শনিবার সোমেন মিত্রের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কংগ্রেস সভাপকি রাহুল গান্ধী। সেই বৈঠকে সোমেনের কথা শুনবেন রাহুল। শুনবেন বাংলার কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের চাওয়া-পাওয়ার কথা। শুনবেন প্রদেশ কংগ্রেসের ভবিষ্যতের কথা। তারপরই চরম সিদ্ধান্ত নেবেন রাহুল।
তৃণমূলের সঙ্গে জোট! নৈব নৈব চ
গো-বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস উজ্জীবিত হলেও, হঠাৎই দিল্লির রাজনীতিতে বেসুরো গাইতে চলেছে অনেক বিজেপি বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা। ফের ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে ফেডারেল ফ্রন্টের সম্ভাবনা। এই অবস্থায় বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী জোট হওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
প্রাক নির্বাচনী জোট প্রশ্নে
এখন প্রশ্ন এ রাজ্যে, কংগ্রেস কার সঙ্গে যাবে? কাকে বাছবে জোট সঙ্গী হিসেবে? তৃণমূল কংগ্রেস নাকি সিপিএম? পুরো বিষয়টিই নির্ভর করে রয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড, বিশেষ করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর উপর। দিল্লির রাজনীতিতে রাহুলের বেশি দরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। কিন্তু বাংলায় কংগ্রেস একেবারেই চাইছে না তৃণমূলকে। পক্ষান্তরে তৃণমূলও চাইছে না প্রাক নির্বাচনী জোট হোক কংগ্রেসের সঙ্গে। তাঁরা একা লড়তেই স্বচ্ছন্দ্য।
অধীর-গুরু সোমেন
এমতাবস্থায় সোমেন মিত্রও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনিও অধীর চৌধুরীর মতোই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরোধী। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মনের কথাই শুনতে চাইছেন, তাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে রাহুল-সকাশে তুলে ধরবেন সোমেন মিত্র। আসলে তিনি যে অধীরের গুরু প্রদেশ কংগ্রেসে, তাই প্রমাণ করছেন সোমেন।
সিপিএমই পছন্দ প্রদেশের
সোমেন মিত্রও মনে করেন, প্রাক নির্বাচনী জোট হওয়া উচিত সিপিএমের সঙ্গে। নির্বাচনের পরে দিল্লির রাজনীতিতে প্রয়োজন হলে কংগ্রেস তৃণমূলের সাহায্য নিতে পারে। সেটা একেবারেই ভিন্ন ইস্যু। সেখানে বিজেপির মতো শক্তিকে রোখাই কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে প্রাক নির্বাচনী জোটে গেলে কংগ্রেসেরই ক্ষতি। এ কথাই তিনি তুলে ধৎবেন রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে।
তৃণমূল ভীতি কংগ্রেসের
সোমেনের মতে, রাজ্য-রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসে ভীতি রয়েছে কংগ্রেসের। কারণ, তৃণমূলই কংগ্রেসকে ভেঙে ভেঙে শেষ করে দিয়েছে, ফের তৃণমূলের সঙ্গে গেলে বাকিটাও শেষ হয়ে যাবে, এমনটাই অভিমত প্রদেশ নেতৃত্বের। এতদিন অধীর চৌধুরী যা বলে এসেছেন, এখন একই কথা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সোমেন মিত্রের কণ্ঠেও।
আগের সাফল্যই হাতিয়ার
গত ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস সাফল্য পেয়েছিল। বামেদের ছাড়িয়ে কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছিল। যদিও তার পর থেকে একের পর এক ভাঙনে কংগ্রেস তা ধরে রাখতে পারেনি। তা সত্ত্বেও এখন সিপিএমের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়েই প্রদেশ নেতৃত্ব লোকসভায় লড়তে রাজি।
তৃণমূলের ব্রিগেড-বার্তা সোমেনের
সেইসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতির কাছে সোমেন মিত্র আর্জি রাখবেন, তৃণমূলের ব্রিগেড জনসভায় যেন দিল্লির কোনও শীর্ষ কংগ্রেস নেতা হাজির না থাকেন। উল্লেখ্য, ওই ব্রিগেড সমাবেশকে বিরোধী জোটের ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ করে তুলতে বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজেকে মোদী বিরোধী প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। কিন্তু মানতে চাইছে না কংগ্রেস ছাড়া দিল্লির রাজনীতেত বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব নেই। কংগ্রেসই প্রধানশক্তি। প্রধানমুখ রাহুল গান্ধীই।