ঠ্যালার নাম বিজেপি! সিঙ্গুর প্রসঙ্গে মমতা এখন চাষীদের উপরে দায় চাপাচ্ছেন?
কয়েক বছর আগে যখন সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে সিঙ্গুরের জমি ইচ্ছুক, অনিচ্ছুক চাষী নির্বিশেষে ফিরিয়ে দিতে হবে, আহ্লাদে গদ গদ হয়ে মমতার সরকার তা পালন করতে নেমে পড়েন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এ কী উলটপুরাণ! কয়েক বছর আগে যখন সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে সিঙ্গুরের জমি ইচ্ছুক, অনিচ্ছুক চাষী নির্বিশেষে ফিরিয়ে দিতে হবে, আহ্লাদে গদ গদ হয়ে মমতার সরকার তা পালন করতে নেমে পড়েন। এমনকী, শুধু জমি ফেরত দেওয়াই নয়, ওই জমি চাষযোগ্য করে কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও তিনি বলেন।নিজের হাতে সর্ষের বীজ জমিতে ছড়িয়ে সেবারে তিনি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেন যে সিঙ্গুরে যা হয়েছে, তা একদিন দুনিয়াতেও হবে। অর্থাৎ, শিল্পের জমি তিনি চাষের জন্যে ফের 'তৈরী' করে দিতে পেরে ইতিহাসকেই প্রায় পিছন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখাতে পেরেছিলেন।
কিন্তু মমতার সেই আত্মবিশ্বাস যে আজ অনেকটাই তলানিতে ঠেকেছে, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না যখন তিনি বিধানসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের জবাবে বলেন যে সম্ভবত সিঙ্গুরের ওই জমিতে চাষীরা লাঙল চালাতে খুব আগ্রহী না। তিনি এও বলেন যে সেখানে এখন চাষের জমির পরিমাণও কম এবং সরকার হাজারো চেষ্টা করলেও কাউকে জোর করে চাষ করানো যায় না।
এখন নেত্রীর মনে হচ্ছে চাষীদের মতেরও দাম রয়েছে? আগে কেন মনে হয়নি?
মমতাদেবীর এই কথা শুনে চমৎকৃত হতে হয়। এখন যদি ওনার মনে হয়ে থাকে চাষীদের মতের গুরুত্ব রয়েছে, তাহলে আগে সেটা মনে হয়নি কেন? অনেক চাষীই তো মনে করেন যে সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি কারখানা হওয়া দরকার ছিল। নাকি এখন মমতা বুঝছেন যে ঠ্যালার নাম বিজেপি?
ইতিহাসকে সেদিন পিছনে হাঁটিয়ে দিয়েছিলেন নেত্রী!
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর ইতিহাসকে পিছন দিকে হাঁটানোর স্পর্ধা তাঁর অনুগতদের খুশি করলেও আদতে তা যে ছেলেমানুষি এবং ইতিহাস যে এই স্পর্ধাকে ক্ষমা করে না, তা আজকে প্রমাণিত হচ্ছে। এক দশক আগে সিঙ্গুরের বসে স্রেফ রাজনৈতিক ফসল ঘরে তোলার জন্যে মমতা দিনের পর দিন সিঙ্গুরে বসে অনশন রাজনীতি করেছেন। জাতীয় সড়ক বন্ধ করে রাজ্যের অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধনের সেই রাজনীতি শেষ পর্যন্ত টাটাদেরও রাজ্যছাড়া করেছে। মমতার তখন একটিই লক্ষ; বামেদের কল্কে কেড়ে নিয়ে নিজেকে এক নম্বর নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। সিঙ্গুরে কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথে যায়নি তাঁর সরকার; উল্টে জমিতে হাত দিলে যদি ক্ষমতা যায়, সেই ভয়ে কোনও শিল্পনীতিই তৈরী করেননি তিনি। শিল্পের কথা উঠলেই কুমির ছানার মতো 'ল্যান্ডব্যাঙ্কের' মন্ত্র শুনিয়েছেন।
বিজেপি কিন্তু ব্যবসা-বান্ধব দল
কিন্তু এখন তাঁর প্রধান বৈরী বাম নয়, বিজেপি। এবং বিজেপি এমন একটি দল যাদের অর্থনৈতিক স্থবিরতার প্রশ্নে হারানো যাবে না। বাণিজ্য-বন্ধু হিসেবে বিজেপির সুনাম বরাবরই। টাটারা সিঙ্গুর ছেড়ে যে গুজরাতের সানন্দে চলে যায় এক দশক আগে, সেখানেও ক্ষমতায় বিজেপি; তখন তার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী এবং তিনি সিঙ্গুরকাণ্ডের প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে একটি চিঠিও লেখেন।
আজকে সিঙ্গুর লোকসভা কেন্দ্রে জিতেই বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় সিঙ্গুরের হারানো শিল্প সম্ভাবনা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বেগতিক দেখে তাই মুখ্যমন্ত্রীও সুর বদল করে পুরো ব্যাপারটাই চাষীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দায় সারতে চাইছেন।
অথচ, সেদিন যদি অযথা আন্দোলন না করে মমতা সিঙ্গুর প্রকল্পের পাশে দাঁড়াতেন, আজকে এইভাবে ইতিহাস তাঁর দিকে তেড়ে আসত না। সিঙ্গুরের মানুষের মন তিনি পপুলিস্ট রাজনীতি দিয়ে মোহিত করে রাখতে চেয়েছিলেন চিরদফায় কিন্তু তা মনে হচ্ছে সফল হবে না আর বেশিদিন।
[আরও পড়ুন:মমতার কথায় কংগ্রেসকে হারাতে তৃণমূলকে সমর্থন বিজেপির! মুকুলের দাবি ঘিরে জল্পনা ]