‘বাংলা যেন ভাগ না হয়, তাহলেই শান্তি পাবে অমিতাভের আত্মা’, বিদায়ক্ষণে প্রার্থনা
মধ্যমগ্রামের বাড়িতে শেষবার এলেন দার্জিলিং জেলা পুলিশের এস আই অমিতাভ মালিক। তাঁর আসার কথা ছিল সোমবার। কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস, দুদিন আগেই কফিনবন্দি হয়ে নিথর দেহ ফিরল বাড়িতে। গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানো হল শহিদ অমিতাভকে। তবু তাঁর নিথর দেহ আগলে রইলেন বাবা-মা-স্ত্রী। শেষ বিদায় লগ্নে একটা কথাই যেন প্রতিধ্বনিত হল- 'বাংলা যেন কোনওভাবেই ভাগ না হয়, তাহলেই শান্তি পাবে অমিতাভের আত্মা।'

মধ্যমগ্রামের শরৎপল্লির বাড়িতে তখন থিকথিক করছে লোক। পুরো পাড়া ঝাঁপিয়ে পড়েছে অমিতাভের নিথর দেহকে একবার চোখের দেখা দেখতে। কান্না বাঁধ মানছে কারওরই। সবার চোখেই জল। কেউই চাননি দীপাবলিতে ঘর অন্ধকার করে বাড়ি ফিরুক অমিতাভ। আলোর উৎসবে যে তাঁর কাটানোর কথা ছিল শরৎপল্লির বাড়িতেই। কিন্তু একটা ঘটনাই দীপাবলি উৎসবের সব আলো ম্লান করে দিয়ে গেল।
যে পাড়ার মাঠেই তাঁর হেসেখেলে বড় হয়ে ওঠা। সেখানেই তাঁকে শায়িত রেখে গান স্যালুট দেওয়া হল। মিশুকে স্বভাবের অমিতাভকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নামল সেখানেই। চোখের জলে তাঁকে বিদায় জানালেন সবাই। বাবা, মা, স্ত্রী আগলে পড়ে রইলেন অমিতাভের নিথর দেহ। কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করে না প্রিয় মানুষটাকে। কিন্তু নিয়তির এমনই পরিহাস, তাঁকে চলে যেতেই হবে। দূর থেকে বহুদূরে।

এদিন নিহত এসআই অমিতাভ মালিকের গান স্যালুটে বিদায় জানানোর মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁরাও অমিতাভের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিমনবন্দর থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যমগ্রামে বাড়িতে। দুই মন্ত্রীই সমস্ত কিছু তত্ত্বাবধান করেন। রাজ্য পুলিশের বড় কর্তারা উপস্থিত ছিলেন গান স্যালুটে। এর আগে অমিতাভের মরদেহে দার্জিলিং পুলিশের পক্ষ থেকে কালিম্পংয়েও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সমাজসেবার ব্রত নিয়েছিলেন অমিতাভ। ব্যাঙ্কের মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়ে তিনি তাই গায়ে তুলে নিয়েছিলেন খাঁকি উর্দি। সেই উর্দির মান রাখতে গিয়েই অখণ্ড বাংলার লড়াইয়ে প্রাণ দিলেন বীর অমিতাভ। তাঁর সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে এদিন হাজির হয়েছিলেন অগণিত মানুষ। সকলের চোখের জলকে পাথেয় করেই তিনি চললেন অনন্তলোকে। সবাইকে জানিয়ে গেলেন চিরবিদায়।