মিথ্যে ধরা পড়ার ভয়েই আকাঙ্ক্ষাকে নির্মমভাবে খুন করে উদয়ন! বলছে বাঁকুড়া পুলিশ
মিথ্যা ধরা পড়ার ভয়ে বাধ্য হয়েই আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে উদয়ন। টানা আটদিন ধরে দফায় দফায় জেরায় আকাঙ্ক্ষা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে এই ধারণায় উপনীত হয়েছে বাঁকুড়া পুলিশ।
বাঁকুড়া, ১৪ ফেব্রুয়ারি : মিথ্যা ধরা পড়ার ভয়ে বাধ্য হয়েই আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে উদয়ন। টানা আটদিন ধরে দফায় দফায় জেরায় আকাঙ্ক্ষা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিয়ে এই ধারণায় উপনীত হয়েছে বাঁকুড়া পুলিশ। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে আকাঙ্ক্ষা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ স্পষ্ট করলেন পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা। এই মর্মে বুধবার সিরিয়াল কিলার উদয়ন দাসের গোপন জবানবন্দির আবেদনও জানাবে বাঁকুড়া পুলিশ।[উদয়ন ত্রিকোণ প্রেমের তত্ত্বে অনড় থাকলেও, আকাঙ্ক্ষা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ টাকার নেশাই]
আকাঙ্ক্ষা খুনে ত্রিকোণ প্রেম থেকে শুরু করে টাকার লোভ- এরকম নানা তথ্য উঠে এলেও বাঁকুড়া পুলিশ কিন্তু মনে করছে এই খুনের পিছনে সেরকম কোনও কারণ নেই। শুধুমাত্র মিথ্যে ধরা পড়ার ভয়েই প্রেমিকা আকাঙ্ক্ষাকে খুন করে। আকাঙ্ক্ষা উদয়েনর সমস্ত মিথ্যে ধরে ফেলেছিল। সে যে কোনওদিনও আমেরিকা যায়নি, আমেরিকার গল্প যে সম্পূর্ণ বানানো- সব কিছু। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল।
তারপর আকাঙ্ক্ষাকে মেরে নিজেই বাড়ির উঠোন বেদি তৈরি করে উদয়ন। আর আকাঙ্ক্ষা যে জীবিত রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে, আকাঙ্ক্ষার মোবাইল থেকে হোয়াটস অ্যাপ, এসএমএস করত সে। সুখেন্দু হীরা জানান, বাঁকুড়া পুলিশ আকাঙ্ক্ষার খোঁজে ভোপালে রওনা দেন। সেখানে গিয়ে প্রথমেই উদয়নের খোঁজ পেয়ে যায় পুলিশ। তাকে জেরা করেই একে একে সমস্ত ঘটনা সামনে চলে আসে।
আকাঙ্ক্ষা আমেরিকায় আছে এই গল্প বোঝানের চেষ্টা করে উদয়ন। উদয়নের ঘর থেকেই উদ্ধার হয় আকাঙ্ক্ষার ফোন। তখনই সত্য সামনে এসে যায়। জেরার মুখে আকাঙ্ক্ষা হত্যার কথা স্বীকার করে সে। উদয়ন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, ছোটবেলা থেকে তার কোনও বন্ধুবান্ধব ছিল না। তার জেদ চেপে গিয়েছিল তাকে বড়লোক হতে হবে। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা তার ভালো লাগত না। মা-বাবার চাপেই তাকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয়েছে।
এরপর সে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সেকেন্ড সেমিস্টারে ফেল করে। কিন্তু বাড়িতে জানায়নি এই সত্য। বাড়ি থেকে পড়াশোনার খরচ নিতে থাকে। এদিকে বাবা-মা চাকরির জন্য চাপ দিতে। এতে বিরক্ত হয়ে সে পরিকল্পনা করে বাবা-মাকে সরিয়ে দিয়ে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বস্তগত করার। সেইমতো ২০১০-এর ২৭ জুলাই বাবা-মাকে খুন করে বাড়ির মেঝেতে পুতে দেয়। তারপরই মহিলা সংসর্গে পড়ে সে। গাড়ির নেশা পেয়ে বসে। সম্পত্তি বিক্রি করে, বাবা-মায়ের টাকা হস্তগত করে আমেরিকার গল্প ফেঁদে মেয়েদের ব্ল্যাকমেলিংয়ের খেলায় মেতে ওঠে।