পার্থর কথাই তাহলে সত্যি! মুকুল রায় কি তবে কাঁচরাবাবুই হয়ে যাবেন
বিজেপি-যোগেই তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন মুকুল রায়। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। একে একে তাঁর সমস্ত পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
বিজেপিতে মুকুল রা্য়ের যোগদানে ফের বিপত্তি। বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে দলে নিতে আগ্রহী হলেও আবারও বাধ সেধেছে আরএসএস। সেই কারণেই মঙ্গলবার বিজেপিতে মুকুলের অভিষেক প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত হয়ে গেল। মুকুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতেও পড়ে গেল ছোট্ট একটা জিজ্ঞাসা চিহ্ন। তবে কি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শ্লেষই ঠিক হবে মুকুল রায়ের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে? মুকুল রায়ের মাথায় চিন্তার ভাঁজ।
বিজেপি-যোগেই তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন মুকুল রায়। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। একে একে তাঁর সমস্ত পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শেষমেশ তিনি দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। দলও তাঁকে বহিষ্কার করেছে ছ'বছরের জন্য। তারপর তৃণমূলের প্রাক্তন সেকেন্ড ইন কমান্ডের বিজেপিতে যোগদান স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছিল রাজনৈতিক মহল।
শুধু একটি প্রশ্নই উঠছিল, মুকুল বিজেপিতে যাবেন, নাকি নিজের তৈরি দলে নাম লেখাবেন? পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মুকুল রায়ের গতিবিধি। যখন মুকুলের বিজেপিতে অভিষেক স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে হচ্ছিল, তখনই আরএসএস মোক্ষম চালটা দিল। বিজেপি নেতৃত্বকে ফতোয়া দিল আরএসএস- 'মুকুলকে দলে তখনই নেওয়া যাবে, যদি মুকুল রায় লিখিত আবেদন করেন।' বিজেপি নেতৃত্ব মুকুল রায়কে সেই নির্দেশ পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মুকুল রায় লিখিত আবেদন করতে রাজি নন। সেখানেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। মুকুলের গেরুয়াশিবিরে যোগ দেওয়ার পথে জল ঢেলে দিয়ে যায় আরএসএস-এর এই ফতোয়া।
তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড থাকাকালীন মুকুল রায়ই সবথেকে বেশি খড়্গহস্ত ছিলেন বিজেপির সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুতে। রাজনীতির কঠিন আবর্তে সেই মুকুল রায়ই এখন বিজেপির শরণাপন্ন। তাই বিজেপি তথা আরএসএস চাইছে আটঘাট বেঁধে মুকুল রায়কে দলে নিতে। আরএসএস ভাবধা্রা থেকে তিনি যাতে সহজেই অবস্থান বদল করতে না পারেন, সেই কারণেই তাঁকে লিখিত আবেদনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর তাতেই মুকুল রায় বেঁকে বসেছেন।
তাহলে কী হবে মুকুল রায়ের? তিনি কি বিজেপি-র পথ ছেড়ে এবার অন্য কোন পথ বাছবেন? সে পথও যে কণাকাকীর্ণ হবে না, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না। কেননা তাঁর নির্দেশে যে দল তৈরি হয়েছিল, তাও দু-ভাগ হয়ে রয়েছে। মুকুলের অবস্থানগত জটিলতার জন্য অনেকেই তাঁর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন।
মুকুল রায় যদি এখন জাতীয়তাবাদী তৃণমূল কংগ্রেসে যান, তা নিয়ে একটা পক্ষ আদালতে যেতে পারেন, এমন হুঁশিয়ারিও মিলেছে। আর কংগ্রেস যে তাঁকে এখনই এন্ট্রি দেবে না, তাও পরিষ্কার। কেননা কংগ্রেস আসন্ন নির্বাচনগুলিতে মমতাকে সঙ্গে নিয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করছে। রাহুল-সোনিয়ার তরফে তেমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসকেও।
এক বছর পরেই পঞ্চায়েত, তার পরের বছরেই লোকসভা- তাই এই সময়ের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী শক্তিকে কোনওমতেই জায়গা দিতে নারাজ কংগ্রেস। পড়ে রইল বামফ্রন্ট, সেখানে মুকুলের প্রবেশাধিকার না থাকারই কথা। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে মুকুল রায় সম্পর্কে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাই সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে। মুকুল রায় না কাঁচরাবাবুই হয়ে যান শেষপর্যন্ত।