আলোর খেলা জগদ্ধাত্রী পূজোয়, বিপ্লব এসেছিল এর হাত ধরে
আলোর খেলা জগদ্ধাত্রী পূজোয়, বিপ্লব এসেছিল এর হাত ধরে
জগদ্ধাত্রী পূজো মানেই আলোর খেলা। এই আলোর সাজসজ্জা বেশীরভাগই আসছে ভাগিরথী-হুগলি নদীর ধারে অবস্থিত এক ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ শহর চন্দননগর থেকে। মুম্বাইয়ের গণেশ পুজো থেকে কলকাতা শারদোৎসব - প্রতি বছর নিত্যনতুন আলোকসজ্জায় চমক দেন এই চন্দননগরের শিল্পীরা। উল্লেখ্য, চন্দননগরে রেজিস্টার্ড ৮২৫ জন আলোক ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ যুক্ত।
এই আসাধরণ আলোক শিল্পের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন এক ১৩ বছরের কিশোর শিল্পী - শ্রীধর দাস। ১৯৫৩/৫৪ সাল। প্রথমে বালব, পরে টিউবলাইটে রঙিন কাগজ মুড়ে শুরু করেছিলেন রঙিন আলোর শিল্প। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয় নি। কলকাতার নামীদামী দুর্গাপুজার প্যান্ডেল - কলেজ স্কোয়ার থেকে মোহম্মদ আলি পার্ক - সাজাতে ডাক আসতে শুরু হল শ্রীধরের। তারপর গোটা ভারত হয়ে সুদূর আমেরিকা, রাশিয়া এবং শিল্প শহর ফ্রান্সেও তাঁর আলোক শিল্পের ছোঁয়া পাঠাতে থাকলেন তিনি। লন্ডনের থেমস নদীর ওপর সেতু আলোয় আলোকিত করে ছিলেন তিনিই।
এরপরে আসি আর এক প্রবাদপ্রতিম আলোকশিল্পীর কথায়। নাম বাবু পাল। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত লোহার পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে যখন আলোর ব্যবসায় নামেন, তখন পুঁজি বলতে ছিল মনের জোর আর মাত্র ১০ হাজার টাকা। পাশে পেয়েছিলেন পারিবারিক ঘনিষ্ঠ অশোক কুণ্ডুকে। চন্দননগরের আলো ব্যবসার পুরোধা শ্রীধর দাসের কাছে হাতে ধরে কাজ শিখেছিলেন।
১৯৯৯ সালে বিদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন বাবু পাল। সেই সময় দুবাইতে চলছিল শপিং ফেস্টিভ্যাল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর এই শহরে ওই ফেস্টিভ্যালে ৪০ ফুটের দুর্গ বানিয়েছিলেন বাবু পাল। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে শপিং ফেস্টিভ্যাল চললেও আলোর কেরামতিতে দর্শনার্থীদের মন জয় করে নেয় পাল ইলেকট্রিকের কাজ।
কৌতুহল মেটাতে খোদ দুবাইয়ের রাজা এসে জানতে চেয়েছিলেন এর স্রষ্টা কে। কয়েক বছর আগে রাশিয়ার মস্কো থেকে কিছুটা দূরে একটি রাধাকৃষ্ণ মন্দির সাজানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন বাবু পাল। শুধু মহারাষ্ট্র নয়, গুজরাত, ওড়িশা, রাজস্থান, দিল্লিতেও নাম পেয়েছে চন্দননগরের আলোর কাজ।
মুম্বই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে বাবু পালের আলোর কেরামতিতে দুর্গামূর্তি জায়গা পেয়েছে। ৩১ জানুয়ারি,২০২১ - দিল্লিস্থিত ইতালীয় দূতাবাসের সামনে ইতালীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইস্তিতুতো ইতালিয়ানো দি কুলতুরা (আইআইসি) করেন 'ইন্ডিয়া আর্ট ফেয়ার'।
সেখানের প্রধান আকর্ষণ বাবু পালের তৈরি মিলানের শিল্পী আন্দ্রেয়া গুচ্চি-র ডিজাইন এবং বাবু পালের আলোয় সাজানো এক আর্ট ইন্সস্টলেশন-এর যার নাম দেওয়া হয়েছে 'ব্রেকথ্রু' (লিভিং ইন দ্য আর্থ)।
মমতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে, হাওড়ায় কাশফুল থেকে বালিশ তৈরি চলছে জোরকদমে