ওনার বয়স হয়েছে, তাই ভুল বকছেন : রতন টাটা প্রসঙ্গে অমিত মিত্র
এদিন সাংবাদিকদের অমিত মিত্র বলেন, রাজ্যে কত শিল্প এসেছে তার তালিকা দিলে সারাদিন লেগে যাবে বলে জানালেন অমিত মিত্র। একইসঙ্গে জানালেন টাটা মেটালিকসও পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের সম্প্রসারণ করতে চায়। ৪০,০০০ একর জমি নতুন করে শিল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। আম্বানি গোষ্ঠী বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে, তা গৃহীতও হয়েছে। ইমামি বিনিয়োগ করতে চাইছে। আমার অবাক লাগছে ভেবে যে ওনার অফিস ওনাকেই এই খবর দেয়নি? ওনার বরং যা শখ বিমান ওড়ানো, ঘুরে বেড়ানো তাই করুন।
রতন টাটা যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে খুব ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন না তা কারোরই অজানা নয়। তাই সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানার সময় থেকেই মমতার বিরোধ রতন টাটার সঙ্গে। ২ বছর পর কলকাতায় এসে টাটা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্যে বাণিজ্যিক স্বার্থে উন্নয়নে কর্মকাণ্ড চললেও শিল্পের কোনও অগ্রগতিই হয়নি। তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন রতন টাটাকে আক্রমণ করেন অমি মিত্র।
মোদীকে দেখে শিখুন: বাংলাকে পরামর্শ রতন টাটার, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শুনছেন কি?
কলকাতা, ৭ অগস্ট : প্রস্তুত বা বিপণনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা ছিল না, কিন্তু সিঙ্গুরের আন্দোলনের কারণেই ন্যানো বাজার ধরতে পারল না। আবারও একবার আক্ষেপ রতন টাটার। একইসঙ্গে জানালেন রাজ্যের যা বর্তমান পরিস্থিতি তাতে শিল্পে অগ্রগতির অবকাশ খুব কম বলেই উদ্বেগ প্রকাশ করলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা।
একসময়ে শহুরে গতিশীল জীবনে সংবেদনশীল ভবিষ্যত হিসাবে দেখা হয়েছিল। তারপরে ন্যানো বাজারে এলেও সেভাবে বাজার ধরতে পারেনি এই গাড়িটি। ন্যানোর বিক্রি ক্রমশ কমতে থাকে। ন্যানোর বিক্রি বাড়াতে টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষ এখনও লড়াই করে চলেছে।
যদিও ন্যানোর এই অসাফল্যের কারণ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোয়ের নেতৃত্বে কৃষকদের আন্দোলনকেই তুলে ধরেছেন শিল্পপতি রতন টাটা। ২০০৮ সালে ওই আন্দোলনের চাপে পড়েই বাংলা থেকে গুজরাতের সানন্দে প্রকল্পটি স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হয়েছিল টাটা মোটরস।
সিঙ্গুরের আন্দোলনই মেরে ফেলেছে 'ন্যানো'কে, মত রতন টাটার
শহরের একটি শিল্পপতিতের সম্মেলনে রতন টাটা ন্যানো নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, "পুরো প্রকল্পটিকে স্থানান্তরিত করার জন্য আমাদের বহুল পরিমাণে নেতিবাচক ব্যয় হয়েছে। যখন আমরা ন্যানো বাজারে আনার কথা ঘোষণা করলাম বাজারে এই গাড়ি নিয়ে একটা আলাদা উন্মাদনা তৈরি হয়েছিলয আমরা ৩ লক্ষ গাড়ির পুরো দাম সহ বুকিংও পেয়ঠিলান। কিন্তু যে বছর আমরা সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প নিয়ে বেরিয়ে যাই তখনই সেই উন্মাদনার অনেকটা চাপা পড়ে গিয়েছিল। বিরোধী শিবিরিগুলোই সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল, বাজারে ন্য়ানোর অনুপস্থিতি নিয়ে ভুল বোঝাতে শুরু করল। মানুষের বিশ্বাসও ভেঙে গেল যে এত সস্তায় যখন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে তার মান ভাল হবে না। সেখানেই প্রথম ধাক্কা খেয়েছিল ন্যানো প্রকল্প।"
৬ বছরের পুরনো ক্ষত যে আজও দগদগে হয়ে রয়েছে তা এদিন টাটর কথায় স্পষ্ট। তবে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সোজাসুজি না বিঁধলেও রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রতন টাটা। তাঁর কথায়, "রাজ্যের যা পরিস্থিতি তাতে নতুন শিল্পের অবকাশ অত্যন্ত ক্ষীণ। বিমানবন্দর থেকে আসার পথেও আমি কোও শিল্পের উন্নয়ন দেখতে পেলাম না। যা দেখলাম তা অনেকটা গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের মতো দেখাচ্ছে। অনেক নতুন বহুতল দেখলাম, নতুন অফিস দেখলাম, কিন্তু কারখানা দেখতে পেলাম না।" এই প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ইতিবাচক তুলনা টেনে রতন টাটা বলেন, "দেখুন গুজরাত নিয়ে কী করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কোথায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন গুজরাতকে।" নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশ যে অগ্রগতির পথেই এগোবে সে আশাই রয়েছেন টাটার।
এই কারণেই রতন টাটার মন্তব্য, শিল্পগোষ্ঠীর প্রতি রাজ্য সরকারের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। কখনওই কারোর প্রতি পক্ষপাত করা উচিত নয়।