একদিনেই হঠাৎ বন্ধ 'একদিন', বাড়ল কর্মহীন মিডিয়াকর্মীদের ভিড়
লাটে ওঠা কাগজের তালিকায় এবার 'একদিন' হল নবতম সংযোজন । গত ১৫ জানুয়ারি থেকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে গেল এই জনপ্রিয় দৈনিকটি। এর জেরে কর্মহীন হয়ে পড়লেন সেখানকার অন্তত ১২০ জন কর্মী।
শুরুটা হয়েছিল গত বছরের এপ্রিলে। সারদা গোষ্ঠীর দু'টি পরিচিত দৈনিক সংবাদপত্র 'সকালবেলা' ও 'বেঙ্গল পোস্ট' বন্ধ হয়ে যায় আর্থিক কেলেঙ্কারির জেরে। সাংবাদিক-অসাংবাদিক মিলিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন অন্তত ২৫০ জন কর্মী। সংবাদপত্রের দুনিয়ায় মড়কের সেই শুরু। লক্ষণীয়, সঙ্কটে জর্জরিত বাংলা টিভি চ্যানেলগুলি কিন্তু ধুঁকেধুঁকে হলেও চলছে। অথচ ঝপাঝপ ঝাঁপ ফেলছে খবরের কাগজগুলি।
'একদিন' তৈরি করেছিলেন সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি 'একদিন' ছাড়েন। কিছু বিশ্বস্ত সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দেন টাইমস অফ ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর বাংলা কাগজ 'এই সময়'-এ। বাদবাকি কর্মীরা পড়ে থাকেন 'একদিন'-এ। তখন দৈনিক সংবাদপত্রটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় চক্র গোষ্ঠী। কিন্তু, আর্থিক অনিয়মের জেরে অচিরে সঙ্কট ঘনিয়ে আসে। কর্মীদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। গত বছরের ১ অক্টোবর 'একদিন' হস্তান্তরিত হয়। এবার দর্পণ গোষ্ঠী মালিকানা বুঝে নেয়।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, মালিকানা হাতে পেয়ে অনেক রঙিন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন দর্পণ গোষ্ঠীর মালিক সন্দীপ চৌধুরি। তিনি বলেছিলেন, 'একদিন' বন্ধ হবে না কোনও পরিস্থিতিতে। কেউ চাকরি হারাবে না। পত্রিকাটি সম্পাদনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় বর্ষীয়ান সাংবাদিক অঞ্জন বসুর হাতে।
অথচ এ বছরের শুরুতেও কেউ বুঝতে পারেনি কী ঘটতে চলেছে! ১৩ জানুয়ারি সন্দীপবাবু একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন। সেখানে কর্মীদের বলেন, দর্পণ গোষ্ঠী তীব্র আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। 'একদিন' চালিয়ে রোজ বাড়ছে লোকসানের বহর। তাই পত্রিকাটির শিলিগুড়ি সংস্করণ বন্ধ করে দেওয়া হল।
কিন্তু, ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোয় ঠিক দু'দিন পর। মানে বেড়ালকে বেরোতেই হয়! বিকেলে যখন কর্মীরা কাজে ডুবে আছেন, হঠাৎ আবির্ভাব সন্দীপবাবুর। তিনি জানান, আর একদিনও 'একদিন' চালানোর সামর্থ্য নেই তাঁর। মার্চ মাস পর্যন্ত বেতন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। অবশ্য সেটা আদৌ মিলবে কি না, তা নিয়ে এখন সংশয়ে রয়েছেন সদ্য চাকরি হারানো কর্মীরা। কর্মীদের একাংশ প্রথমে সমবায় তৈরি করে পত্রিকাটি চালানোর কথা ভেবেছিলেন। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত তাঁরা পিছিয়ে আসেন।
এখন প্রশ্ন হল, কর্মহীন মানুষগুলোর কী হবে? বিকল্প কর্মসংস্থান কোথায় হবে? সারদা গোষ্ঠীর পতনের জেরে যে কয়েকশো সাংবাদিক, অসাংবাদিক কর্মী কাজ হারিয়েছিলেন, তাঁদের সিংহভাগই এখনও কাজ জোগাড় করতে পারেননি। আদৌ কবে কোথায় সম্মানজনক কাজ পাবেন, সেটা স্বয়ং ঈশ্বরও বোধ হয় জানেন না। এই অবস্থায় 'একদিন' বন্ধ হওয়া গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সমতুল। তাই হতাশা ছাড়া আপাতত আর কিছু রইল না।