উধাও মাল্টিজিমের বরাদ্দ সরকারি অর্থ, চঞ্চলাময়ীকে নোটিস দিল সরকার, কী বলছেন টিআইসি
মিড ডে মিল-এর পর এবার সামনে এল নামখানার দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের মাল্টিজিম কেলেঙ্কারি। কী ভাবে মাল্টিজিমের-এর জন্য বরাদ্দ ৩ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গেল তার কোনও সদুত্তর মিলছে না।
মিড ডে মিল-এর পর এবার সামনে এল নামখানার দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের মাল্টিজিম কেলেঙ্কারি। কী ভাবে মাল্টিজিমের-এর জন্য বরাদ্দ ৩ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গেল তার কোনও সদুত্তর মিলছে না। বিষয়টি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে স্কুলে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে যায় রাজ যুব কল্যাণ দফতর।
২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষে স্কুলে স্কুল ও কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের শরীরচর্চায় অনুপ্রেরণা দিতে মাল্টিজিম তৈরির প্রকল্প নেয় রাজ্য যুব কল্যাণ দফতর। এই মর্মে কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছিল। এইি প্রকল্পেই নামখানার দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠকে ৩ লক্ষ টাকার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সেই মাল্টিজিম আজও দিনের আলো দেখেনি।
এই বিষয়ে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ রাজ্য যুব ও ক্রীড়া কল্যাণ দফতর। ৪ সেপ্টেম্বর এই মর্মে ডালহৌসিতে রাজ্য যুব ও ক্রীড়া কল্য়াণ দফতর থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা যুব কল্যাণ আধিকারিকের দফতরে। এই চিঠিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ৫টি স্কুলের নাম ছিল যারা অর্থ গ্রহণ করলেও মাল্টিজিম রূপায়ণের বিষয়ে রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখেছে।
চিঠিতে দেখা গিয়েছে মাল্টিজিম তৈরির জন্য ৩ লক্ষ টাকার চেক দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠকে মার্চ মাসের ১৭ তারিখে চেক ইস্যু করা হয়েছিল। রাজ্য সরকারের শর্ত ছিল বরাদ্দ অর্থ দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া এজেন্সির কাছ থেকেই মাল্টিজিম-এর সামগ্রী কিনতে হবে। কিন্তু, দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য সেই অর্থ স্কুলের অ্যাকাউন্টে জমা করলেও নির্দিষ্ট এজেন্সির কাছে পাল্টা আবার চেক পৌঁছে দেননি। ফলে মাল্টিজিম-এর সামগ্রী কেনা হয়নি। যে সব স্কুল অর্থ নিয়েও নির্দিষ্ট এজেন্সির কাছ থেকে সামগ্রী কেনেনি তা নিয়ে সম্প্রতি রাজ্য যুব ও ক্রীড়া কল্যাণ দফতরের কাছে একটি রিপোর্ট জমা পড়ে। তাতে নাম ছিল নামখানার দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের।
রাজ্য সরকারের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী জিকে স্পোর্টস-এর কাছ থেকে মাল্টি জিমের সামগ্রী কিনতে হত চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠকে। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই জেলা যুব কল্যাণ আধিকারিক চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠে গিয়ে রাজ্য যুব ও ক্রীড়া কল্যাণ দফতরের চিঠিটি দিয়ে আসেন। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য না থাকায় তিনি চিঠি স্কুলের অন্য কর্মীদের হাতে দিয়ে আসেন।
৩ লক্ষ টাকার চেক ভাঙানো হল। অথচ, সেই টাকায় মাল্টিজিম তৈরি হল না কেন? ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, মাল্টিজিমের সামগ্রী কেনা হয়নি। এটা ঠিক। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই তা কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু, এই ৩ লক্ষ টাকা কোন খাতে খরচ করা হয়েছিল? প্রশ্নের উত্তরে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতির দিকে আঙুল তুলেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, খোলা বাজারের স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অসংখ্য ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে রেখেছিলেন সভাপতি তাপস পণ্ডা। এই সব ব্ল্যাঙ্কের চেকের মাধ্যমে অর্থ অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আর এভাবেই গায়েব হয়ে গিয়েছে রাজ্য যুব ও ক্রীড়া কল্যাণ দফতরের দেওয়া সরকারি অর্থ।
এর প্রেক্ষিতে টিআইসি হিসাবে তিনি কেন পদক্ষেপ নেননি? এমন প্রশ্নের কোনও জবাবই দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পক্ষ থেকে স্কুল পরিচালন কমিটির তাপস পণ্ডার সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। প্রথমে ব্ল্যাঙ্ক চেক ইস্যু করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। পরে চাপের মুখে তিনি জানান, টিআইসি-কে কাজের প্রয়োজনে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছিলেন। বিষয়টি আপাতত ডিআই দেখছেন। এই নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। কিন্তু, ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে ব্যাঙ্ককে কেন সেই চেকের পেমেন্ট আটকানোর আবেদন করেছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তাপস পণ্ডা।
মাল্টিজিমের বরাদ্দ সরকারি অর্থ নয়ছয়ে যে একাধিক ব্যক্তি জড়িত তা পরিষ্কার। আর তাই এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিরা একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে নিস্তার পেতে চাইছেন। গোটা ঘটনায় ভীষণই ক্ষুব্ধ রাজ্য যুব ও ক্রীড়া কল্যাণ দফতর। জেলা যুব কল্যাণ আধিকারিককে পাঠানো চিঠিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে নির্দিষ্ট এজেন্সির কাছ থেকেই মাল্টিজিমের সামগ্রী কিনতে হবে। কেউ যদি অন্য কোনও এজেন্সির কাছে এই সামগ্রী কিনে থাকে তাহলে তাদের দেওয়া ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট গ্রহণ করা হবে না। এমনকী, অর্থ নয়ছয় হলে বা অন্যত্র খরচ করলে স্কুল বা কলেজগুলির কাছে তা সুদ সমেত ফেরত চাওয়া হবে। সেইসঙ্গে শোকজ নোটিসও পাঠানো হবে।
[আরও পড়ুন:কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস হতেই রহস্যময় লোকেদের আনাগোনা, চঞ্চলাময়ীর সামনে ওরা কে]