মোদীর কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে মিলেছিল নেত্রীর তকমা, এখন তিনিই বিজেপির ‘তুরুপের তাস’
একদিন যে নাজিয়া ইলাহি খান গর্জে উঠেছিলেন বিজেপি বিরুদ্ধে, গর্জে উঠেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে, তিনিই এখন বিজেপির ‘তুরুপের তাস’।
ভোট বড় বালাই। একটা ভোট, কত কিছুই না পাল্টে দেয়! পাল্টে দেয় নেতা-নেত্রীর আন্দোলনের ভাষা। একদিন যে নাজিয়া ইলাহি খান গর্জে উঠেছিলেন বিজেপি বিরুদ্ধে, গর্জে উঠেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে, তিনিই এখন বিজেপির 'তুরুপের তাস'। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা 'নেত্রী' নাজিয়া এখন বিজেপিকে নিয়ে গর্বিত!
[আরও পড়ুন:মহারাষ্ট্রে হিংসা ও তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর নিয়ে মুখ খুলে যা বললেন জিগনেশ ]
'মোদী-বিরোধী' এমনই এক নেত্রীর হাতে বিজেপির গেরুয়া পতাকা তুলে দিলেন দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়রা। তিন তালাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইশরাত জাহান যখন খবরের শিরোনামে, তখন তাঁকে নাটকীয়ভা্বে দলে নিয়েছিল বিজেপি। এবার তাঁর আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খানও ভিড়লেন বিজেপিতে। লক্ষ্য কিন্তু সেই ভোট, লক্ষ্য সেই ভোটের রাজনীতি।
নাটকীয়ভাবে ইশরাত বিজেপিতে
নাটকীয়ভাগে ইশরাতকে দলে যোগদান করিয়েছে বিজেপি। প্রথমে হাওড়ার পার্টি অফিসে সংবর্ধনার নামে ডেকে তাঁর হাতে পতাকা তুলে দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই ধন্দ তৈরি হয়- ইশরাতকে সংবর্ধনা নাকি যোগদান করানো হল, তা নিয়ে। এরপর তাঁকে রাজ্য পার্টি অফিসে নিয়ে গিয়ে মিষ্টিমুখ করিয়ে দেন লকেট চট্টোপাধ্যায় নিজে। লকেট জানিয়ে দেন, ইশরাত বিজেপিতে যোগ দেননি, তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে অবশ্য ইশরাত নিজেই স্বীকার করেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বিজেপির পক্ষ থেকেও তা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
ইশরাতের পর নজরে আইনজীবী নাজিয়া
তিন তালাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইশরাতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন নাজিয়া। আর এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে মরিয়া বিজেপি। সেই কারণেই ভোট বঙ্গ বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব ইশরাতের পাশাপাশি নাজিয়াকে দলে ভেড়াতে তৎপর ছিল। এখনও উলুবেড়িয়া কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিজেপি। ৯ জানুয়ারির জন্য চমক দিতে তৈরি হচ্ছে বিজেপি। ইশরাত, নাজিয়া নাকি অনুপম মল্লিকের মতো কেউ প্রার্থী হবেন, তা জানতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে।
মুকুল-দিলীপের হাত ধরে নাজিয়ার বিজেপিতে যোগ
ইশরাতের পর বিজেপিতে যোগ দিলেন তাঁর আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খান। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছিলই- নাজিয়া শীঘ্রই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। সেইমতোই নাজিয়া মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেন। সেই ছবি তিনি ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড করে দেন। তিনি সংখ্যালঘু, পিছিয়ে পড়া মহিলাদের জন্য কাজ করতে চান বলে উল্লেখ করেন। এদিন তিনি বলেন, ‘বিজেপি সেই সুযোগ আমাকে দিয়েছে। সেই কারণেই আমি আজ বিজেপিতে।'
বিজেপি হটাও-এর ডাক দিয়েছিলেন নাজিয়া
নাজিয়া দীর্ঘদিন সমাজ উন্নয়নের কাজে যুক্ত। পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য, মুসলিম নারীদের জন্য তিনি লড়াই করেন। ফলে সংখ্যালঘু মুখ হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তারপর শাসক দলের সঙ্গেও তিনি দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। সেই নাজিয়াকে সংখ্যালঘু মুখ হিসেবে তুলে ধরে তৃণমূলকে জবরদস্ত ধাক্কা দেওয়াই বিজেপির মূল লক্ষ্য। নাজিয়াকে দলে টানতে পারলে তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়া যাবে এই কারণেই, নাজিয়ার সঙ্গে তৃণমূলের সখ্যতা ছিল। তবে তার পাশাপাশি এই পথে কাঁটাও বিছানো ছিল বিজেপির জন্য। কেননা, এই নাজিয়াই বিজেপি হটাও-এর ডাক দিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা নেত্রী এখন বিজেপিতে
শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকাও দাহ করেছিলেন এই নেত্রী। মোদীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। বিজেপিকে দেশ ছাড়া করার বার্তা দিয়েছিলেন। সংখ্যালঘু মহিলাদের নিয়ে মিছিল করে রাস্তার মোড়ে কুশপুত্তলিকায় জুতোর মালা পরিয়ে আগুন ধরিয়েছিলেন নিজে হাতেই। তবু আজ সেই নেত্রীকেই বিজেপিতে স্বাগত জানালেন মোদীর দলের বঙ্গ ব্রিগেডের নেতা মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষরা। এই সিদ্ধান্তে দলের ভাবমূর্তি আদৌ উজ্জ্বল থাকবে কি না, তা নিয়েও চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
নাজিয়ার ফেসবুকে আজও মমতার ছবি
দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকায় জুতোর মালা পরানো থেকে শুরু করে আগুন ধরানো- সেইসব ছবি এতদিন নাজিয়ার ফেসবুক পেজে জ্বলজ্বল করছিল। এখনও সেই ছবি রয়েছে তাঁর ফেসবুক পেজে, তবে তা সরে গিয়েছে পি্ছনের সারিতে। শুধু তাই নয়, এতদিন নাজিয়ার ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ছবি। রাতারাতি সেই ছবি অবশ্য প্রোফাইল পিকচার থেকে সরে গিয়েছে। তার স্থানে এখন মুকুল-দিলীপের হাতে থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেওয়ার ছবি রয়েছে। আর মমতার সঙ্গে ছবিটি মুখ লুকিয়েছে আর পাঁচটা সাধারণ ছবির ভিড়ে।