মমতার উদ্দেশ্যে মুকুলের সাত-কাহন, যা পড়লে চমকে যাবেন আপনিও
রাজনৈতিক গুরুত্বের খোঁজে বিরোধী শিবিরে গিয়ে মুকুল রায় কী বললেন তাঁর প্রাক্তন দলের উদ্দেশ্যে? তা এখন কাঁটার মতোই বিঁধবে তৃণমূলের গলায়।
মাস খানেক আগেই মুকুল প্রাক্তন হয়েছিলেন তৃণমূলে। এবার একেবারেই পর হয়ে গেলেন তিনি। জোড়াফুল ফেলে পদ্ম হাতে তুলে নিয়েই একদা দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড নয়া পরিবর্তনের ডাক দিয়ে দিলেন। নাম না করেই 'দিদি'-র উদ্দেশ্য হানলেন বাক্যবাণ। রাজনৈতিক গুরুত্বের খোঁজে বিরোধী শিবিরে গিয়ে কী বললেন তাঁর প্রাক্তন দলের উদ্দেশ্যে? তা এখন কাঁটার মতোই বিঁধবে তৃণমূলের গলায়।
প্রথম স্বাক্ষরকারী আমিই, 'খেদ' মুকুলের
১৯৯৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর পথ চলা শুরু হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সংসর্গ ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করেছিল। নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত সেই দলের প্রথম স্বাক্ষরকারী আমিই। আমিই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সেই আমারই আজ ঠাঁই নেই দলে। দল আজ এমন জায়গায়, সংসর্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম।
বিজেপি-র সাহায্য ছাড়া প্রতিষ্ঠা পেত না তৃণমূল
গেরুয়া উত্তরীয় গলায় চড়িয়ে মুকুল রায় আক্রমণ হানলেন, বিজেপির সাহায্য ছাড়া তৃণমূল আদৌ প্রতিষ্ঠা পেত না। যেদিন সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলার বুকে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হয়েছিল, সেদিন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এই বিজেপি। বিজেপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। তৃণমূলের উত্থানের পিছনে বিজেপির অবদান ভোলার নয়। আজ অস্বীকার করলে হবে না। বাজপেয়ীজির অবদান ছিল বলেই আজ রাজ্যে ক্ষমতায় তৃণমূল।
বিজেপি সাম্প্রদায়িক নয়, ধর্মনিরপেক্ষ দল
এতদিন বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা থেকে শুরু করে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা যে বদনাম দিয়ে এসেছেন, তা সমূলের খারিজ করে দিলেন মুকুল রায়। যে মুকুল রায় তৃণমূলে থাকাকালীন বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে সবথেকে বেশি আক্রমণ হেনেছেন, তাঁরই মুখে বিজেপির জয়গান। মুকুল বললেন, বিজেপি সাম্প্রদায়িক শক্তি নয়, বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ একটি দল। আমি মনে করিনা না বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক বলা ঠিক। ফলে স্বাভাবিকভাবেই একদা দু-নম্বরের এই ব্যাখ্যায় অস্বস্তিতে তৃণমূল।
১৩ রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, চার রাজ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী
কথা প্রসঙ্গেই মুকুল রায় ফলাও করে ঘোষণা করলেন, তিনি এমন একটা দলে যোগ দিচ্ছেন, যে দল ১৩ রাজ্যে সরাসরি ক্ষমতায়। ১৩টি রাজ্যে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী। আর চার রাজ্যে উপমুখ্যমন্ত্রী রয়েছে বিজেপিরই। অর্থাৎ ১৭টি রাজ্যে ক্ষমতার অলিন্দে রয়েছে বিজেপি। মুখে না বললেও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন য়ো, তৃণমূল একেবারেই আঞ্চলিক দল। আর বিজেপি সর্বভারতীয় দল। সেই আঙ্গিকেই এ কথার অবতারণা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বাংলার মানুষ হাঁফিয়ে উঠেছেন, তাই চান প্রকৃত পরিবর্তন
শুক্রবার বিজেপির সদর দফতরে পদ্মফুল হাতে নিয়েই বাংলায় ফের পরিবর্তনের ডাক দিলেন মুকুল রায়। তিনি বলেন, 'বাংলার মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছেন। ছ-বছরের মধ্যেই রাজ্যের মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে তৃণমূলের প্রতি। তাঁরা বিকল্প খুঁজছেন। একমাত্র বিজেপিই তাঁদের দিতে পারেন বিকল্প সরকার। তাঁর বিশ্বাস, রাজ্যে সত্যিকারের পরিবর্তন দেবে বিজেপিই। সেদিন আর বেশি দূরে নয়।
২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যেই রাজ্যে বিজেপির সরকার
২০২১-এর মধ্যেই বাংলার মানুষকে সত্যিকারের পরিবর্তনের স্বাদ দেবে। ২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। বিজেপির নেতৃত্বে প্রকৃত পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন। এর আগে অমিত শাহ-দিলীপ ঘোষদের মুখে যে কথা শোনা যেত, বিজেপিতে যোগ দিয়েই সেই কথার প্রতিধ্বনি মুকুল রায়ের কণ্ঠেও। এখন থেকেই ২০২১-এর জন্য তৈরি হতে হবে বলে তিনি নিশানা স্থির করেছেন।
বিজেপি নয়, নতুন সরকার চাইছেন বাংলার মানুষ
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপি তাঁকে বরণ করে নিতেই মুকুল রায় ডাক দিয়ে দিলেন বাংলায় পরিবর্তনের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র নাম একবারের জন্যও নেননি মুকুল রায়। তবে তৃণমূলের আমলে বাংলার মানুষ যে ভালো নেই, সে কথা উল্লেখ করতে ভুললেন না। তিনি বলেন, বাংলার মানুষ এখন পরিবর্তন চাইছেন। এ চাওয়া বিজেপির নয়, সত্যিকারের পরিবর্তনের দাবি তুলছেন বাংলার মানুষ। বাংলায় বিজেপির নেতৃত্ব নতুন সরকারই পারে সেই অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ করতে।