ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের পর প্রথম সারির এখনও চারটি ঝড় অপেক্ষায়, একনজরে তালিকা
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের পর প্রথম সারির এখনও চারটি ঝড় অপেক্ষায়, একনজরে তালিকা
২০২০ সালের মে মাসে বাংলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল সুপার সাইক্লোন আম্ফান। এই আম্ফান ছিল ২০০৮ সালে তৈরি আট সারি তালিকার শেষ ঝড়। তারপর ২০২০ সালে প্রকাশিত ১৩ সারি তালিকার নাম ব্যবহার করে হচ্ছে। এই তালিকার ন'টি ঝড় ইতিমধ্যেই বয়ে গিয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের পর এবার অপেক্ষায় কোন কোন ঝড়। কে করল তার নামকরণ?
২০২০ সালে মোট পাঁচটি ঝড় বয়ে যায়
নতুন তালিকা ব্যবহারের পর ২০২০ সালে চারটি ঝড় বয়ে গিয়েছিল। সেগুলি হল- নিসর্গ, গতি, নিভার ও বুরেভি। নিসর্গ এসেছিল পুরনো তালিকার শেষ ঝড় আম্ফানের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। বাংলার বুকে যখন আম্ফান তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছে, নিসর্গ এসেছিল আরব সাগরে। অর্থাৎ ২০২০ সালে মোট পাঁচটি ঝড় বয়ে যায় ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলে।
২০২১ সালে এখন পর্যন্ত ক’টি ঝড় বয়ে গেল?
আর ২০২১ সালে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ঝড় বয়ে গেল। ২০২১ সালের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ছিল তাউটে বা তাউকটে। তারপর ইয়াস বা যশ, গুলাব, শাহিন, জাওয়াদ বয়ে গিয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশীয় অঞ্চলে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শঙ্কা বাড়িয়ে ওড়িশা হয়ে বাংলার উপকূল দিয়ে বাংলাদেশ অভিমুখে চলে যায়। জাওয়াদ ছিল এই তালিকায় নবম নাম।
প্রথম সারির এখনও চারটি ঝড় অপেক্ষায়
১৩ সারি নামের তালিকায় প্রথম সারির এখনও চারটি ঝড় রয়েছে। সম্প্রতি আবহবিদরা জানিয়েছেন, শীতের মরশুম শেষে গ্রীষ্মকাল এলেই অন্তত দু-তিনটি সাইক্লোন বাসা বাঁধবে বঙ্গোপসাগরের বুকে। এই সাইক্লোনগুলির সম্ভাব্য সময় মার্চ থেকে মে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। সেই ঝড়গুলির নামকরণ হবে প্রথম সারির বাকি তালিকা থেকে। এই তালিকায় বাকি চার নাম হল- অশনি, সিতরং, ম্যানডৌস ও মোচা।
জাওয়াদের পর যে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে
অর্থাৎ জাওয়াদের পর যে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে তার নাম হবে অশনি। এই নাম দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাকি তিন নাম যথাক্রমে থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেনের। তারপর ফের শুরু হবে দ্বিতীয় সারির নামের ব্যবহার। প্রথমেই বাংলাদেশ তারপর একে একে ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেনের পালা।
২০২১-এর প্রথম যে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছিল
ভারত মহাসাগর ক্রান্তীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম শুরু হয় মার্চ মাস থেকে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের মোক্ষম সময় এপ্রিল-মে মাসে। এবার এপ্রিলের শেষের দিকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্তর্বর্তী বঙ্গোপাসাগর বা আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। মে মাসে এ বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় তাউকটে বা তাউটে ধেয়ে আসে গুজরাত অভিমুখে।
২০২১ মরশুমের শেষ ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ
ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম প্রতি বছর মার্চ মাসে শুরু হওয়ার পর থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকে। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটল। এবার ডিসেম্বরেও ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে এল ভারতীয় উপকূলের দিকে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ নিয়ে শীতের আগে হুলুস্থুল পড়ে গেল বাংলা-ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকায়। সবশেষে রক্ষা। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ উপকূল স্পর্শ করে ফিরে গেল বাংলাদেশের দিকে। ঝড় না হলেও দুর্যোগ চলল তিন দিনভর।
কীভাবে হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ
জাওয়াদ চলে যাওয়ার পর এবার অপেক্ষায় রয়েছে অশনি, সিতরং, ম্যানডৌস, মোচা-সহ অনেক ঝড়। কিন্তু এইসব ঝড়ের নামকরণ হয় কীভাবে, কারাই বা দেন ঝড়ের নাম। আবহবিদরা উত্তর ভারত মহাসাগরের ৪৫ ডিগ্রি পূর্ব থেকে ১০০ ডিগ্রি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ করেন। যে সমস্ত ঘূর্ণিঝড় কমপক্ষে তিন মিনিট বাতাসে স্থায়ী হয় এবং গতিবেগ সর্বনিম্ন ঘন্টা প্রতি ৬৩ কিলোমিটার হয়, সেই ঝড়েরই নামকরণ করা হয়।
নতুন তালিকার দশম ঘূর্ণিঝড় অশনি ধেয়ে আসবে
২০০৪ সালে তৈরি নামের তালিকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ২০২০ সালে নতুন তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকায় ১৩ দেশ নামাঙ্কিত করে ঝড়ের। ১৩টি দেশ ১৩টি করে নাম দিয়ে ১৬৯টি নামের তালিকা তৈরি করেছে। সেইমতো পর্যায়ক্রমে নাম পেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়গুলি। সেই তালিকার নবম ঝড় ছিল জাওয়াদ। ২০২২-এ নতুন যে ঝড় আসবে, সেটা হবে দশম নাম- অশনি।
নামকরণের জন্য যে পর্যায়ে সাজানো হয়েছে ১৩ দেশকে
২০২০-তে নতুন যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে ঝড়ের নামকরণের তাতে পর্যায়ক্রমে ১৩টি দেশকে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আরব আমিরশাহী ও ইয়েমেন। এই পর্যায় অনুযায়ী প্রথম ১৩টি নাম হল- নিসর্গ, গতি, নিভার, বুরেভি, তাউটে, ইয়াস, গুলাব, শাহিন, জাওয়াদ, অশনি, সিতরং, ম্যানডৌস ও মোচা।
নয়া তালিকার দ্বিতীয় সারিতে যে ১৩ ঝড়ের নাম
১৩টি দেশের তৈরি করা তালিকার দ্বিতীয় সারিতে যে সমস্ত ঝড়ের নাম স্থান পেয়েছে, তা হল পর্যায়ক্রমে- বিপর্যয়, তেজ, হামুন, মিধিলি, মিগজাউম, রিমল, আসনা, ডানা, ফেঙ্গাল, শক্তি, মোনথা, সেন্যার ও দিত্বা। প্রথম সারির চারটি নামাঙ্কিত ঝড় বয়ে গেলে এই দ্বিতীয় সারির নাম ব্যবহার হবে।