পাহাড়ে শনিবারের সংঘর্ষে প্রশাসনের অবস্থানগত এবং কৌশলগত প্রস্তুতিতে কি কোনও ভুল ছিল?
পাহাড়ে কি গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেছে মোর্চা? সেখানে কী কারণে মোর্চার এই দাপাদাপি? জানলে চমকে যাবেন।
দার্জিলিং জুড়েই যেন যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় টহল দিচ্ছে সেনা-আধাসেনা পুলিশ। মোড়ে মোড়ে সঙ্গে রয়েছে পুলিশও। তবুও সিংমারি ও ঘুমে শনিবারের সংঘর্ষে যেন এগিয়ে ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার গেরিলা বাহিনীই। অবস্থানগত কারণ তো বটেই কৌশলগত কারণেও এগিয়ে ছিল মোর্চা। সেই জন্যই হয়তো মুখ্যমন্ত্রীকে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা বলতে হয়েছে।
সংঘর্ষ থামাতে দার্জিলিং-এ যেসব পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছে,তাঁদেরকে সমতল থেকে পাঠানো হয়েছে মাত্র কিছুদিন আগে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ছয়হাজার ফুট ওপরে কাজ করার ব্যাপারে মানিয়ে নিতে আরও কিছুটা সময় লাগবে তাদের। দার্জিলিং কিংবা কলকাতায় থাকা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা স্বীকার করে নিচ্ছেন, তাদের কাছে মোর্চার কাজ-কর্মের বিষয়ে পুরো তথ্য ছিল না। মোর্চা নেতৃত্ব এইভাবে বিচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর সাধারণ মানুষকেও লড়াইয়ে নামতে আহ্বান করেছে। শেষবার পাহাড়ে হিংসার ঘটনা ঘটেছিল দুহাজার তেরো সালে। সেই সময়ের থেকেও এবারে লড়াইয়ে জন্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ভাল ভাবে তৈরি হয়েই ছিল বলে মনে করছেন বর্তমান কিংবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরা।
পাহাড়ের অবস্থানগত সুবিধাটা পুরো মাত্রায় ব্যবহার করেছে মোর্চা। হাতের তালুর মতো এলাকা চেনার কারণে পাহাড়ের বাঁক কিংবা ওপর-নিচ করে পুলিশকে তারা বিব্রত করেছে বারে বারে। বিচ্ছিন্ন লড়াইয়ের বেশিরভাগটাই হয়েছে পাহাড়ে বাঁকগুলিতে যেখান থেকে রাস্তা ওপরের দিকে উঠে গিয়েছে। কেননা ওপর থেকেও নজরদারির ব্যাপারে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল মোর্চার বাহিনী। বলা যেতে পারে গেরিলা যুদ্ধের জন্য একেবারে আদর্শজনক অবস্থানে ছিল মোর্চা। একইভাবে গুলতির ব্যবহারও ভাল করেই জানত মোর্চা ক্যাডাররা। সেই কারণেই মাথায় হেলমেট থাকলেও, গুলতির আঘাতেই কপালে গুরুতর চোট পান এক পুলিশকর্মী। এমনটাই জানিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিক।
অবস্থানগত কারণেই সিংমারিতে মোর্চার যেসব সমর্থক পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়ছিল, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়লেও, তা কোনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজে আসেনি। কেননা, মুহুর্তে মধ্যে পাহাড়ে আড়ালে অবস্থান বদল করে নিয়েছে মোর্চা সমর্থকরা। যেখানে পাহাড়ের খাঁড়া সিঁড়ি নিয়ে ওঠা-নামা করেছে মোর্চা ক্যাডাররা, সেখানে পুলিশকর্মীরা উঠেছেন রাস্তা দিয়েই। অন্যদিকে, জলকামান ব্যবহার করতে গিয়েও ফাঁপড়ে পড়েছে প্রশাসন। ট্যাঙ্কের জল শেষ হয়ে গেলে জলের সূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ।
ভৌগলিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা এবং এলাকায় প্রশাসনের আধিপত্য বাড়াতে আরও বেশি সংখ্যায় পুলিশকর্মীর দরকার ছিল। শুধু পালতেবাসের জন্যই দরকার ছিল তিন কোম্পানি পুলিশকর্মী। অন্যদিকে, দার্জিলিং এবং কালিম্পং সাবডিভিশনের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র আট কোম্পানি আধাসেনা। পুলিশ আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পাহাড়ে আইপিএস যথেষ্ট সংখ্যায় থাকলেও, সেখানে সাধারণ পুলিশকর্মী আরও বেশি সংখ্যায় প্রয়োজন।