মমতার প্রথম পরিকল্পনা 'একলা চলো', দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে 'রাজতন্ত্র' ও 'দাঙ্গা'-র বিরুদ্ধে নিন্দাবাণ ছুড়েছেন। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এটা যথাক্রমে কংগ্রেস ও বিজেপি-র উদ্দেশে বলা। তিনি বলেছেন, "বিজেপি কংগ্রেসের বিকল্প নয়" অথবা "বিজেপি হিন্দু-মুসলিমে বিভেদ সৃষ্টি করে"। কিন্তু, এটা কি সত্যিই বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণ?
না। অন্তত বাস্তববাদী রাজনীতির দিক থেকে দেখলে। মমতার তৃণমূল কংগ্রেস আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ভালো ফল করবে বলে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। ফলে তাঁর রণকৌশলের অন্তর্গত হল দু'টি পরিকল্পনা।
মমতার দু'টি পরিকল্পনা: প্রথম হল 'একলা চলো' নীতি
প্রথম পরিকল্পনা হল 'একলা চলো' নীতি। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন 'জনবিরোধী' নীতির কারণে। এ ফলে নিশ্চিতভাবে নীতিগত ভিতটা শক্ত করতে পেরেছেন।
বাংলার চরম আর্থিক সঙ্কটের সুযোগে মমতা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে খুঁচিয়ে তুলেছেন। বারবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনে এই বার্তা দিয়েছেন যে, দরকারে কেন্দ্রে বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রাজ্যগুলি প্রত্যয়ী হতে পারে। এ সবই হল লোকসভা নির্বাচনে একা লড়ার কৌশল। আর যদি দল ভালো ফল করে, তা হলে কোনও তৃতীয় মোর্চাকে নেতৃত্ব দেওয়া যেতে পারে।
এই কৌশল আরও একটা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। বিহার, ওড়িশা, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীদের মতো তিনিও চান নিজের রাজ্যে আধিপত্য ধরে রাখতে।
বৃহস্পতিবার তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, রাজ্যের ৪২টি আসনেই আপনারা তৃণমূলকে জেতান। আরও জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটে দলের প্রচারে তিনি অন্যান্য রাজ্যগুলিতে যাবেন। বোঝা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটে বড়সড় ফায়দা তুলতে কতটা মুখিয়ে আছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-র পিছুপিছু চলা মমতার পক্ষে লাভজনক হবে না। তবে, তৃণমূল কংগ্রেস যদি ৪২টি আসনেও জেতে, তা হলে অকংগ্রেসি, অ-বিজেপি সরকার গড়তে আরও ২৩০টি আসন দরকার। সেটা জোগাড় করতে পারবেন? মনে হয় না।
প্রথম পরিকল্পনা কাজ না করলে রইলেন নরেন্দ্র মোদী
এছাড়া রইল দ্বিতীয় পরিকল্পনা। সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ যদি ২১০-২৩০টি আসন পায়, তা হলে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান হয়তো তাঁর রণনীতি বদলাবেন।
যদি নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হন, তাঁর দল ভালো মতো মুসলিম ভোট পায় এবং বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের ভোটের হার বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়, তা হলে তৃণমূল কংগ্রেস জোট গঠনের ব্যাপারে চাপে পড়ে যাবে। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও হয়তো জোট গড়বে।
রাজ্যগুলির দরকার কেন্দ্রের সাহায্য, মমতাও ব্যতিক্রম নন
আর্থিকভাবে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মমতার দরকার কেন্দ্রের সাহায্য। ইউপিএ-কে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারটা বোধগম্য। কিন্তু নতুন সরকারকে উপেক্ষা করা সহজ নয়।
মমতা বৃহস্পতিবার আরও বলেছেন, যারা দাঙ্গা বাধায়, তাদের সমর্থন নয়। কিন্তু, অর্ণব গোস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাহুল গান্ধী ১৯৮৪ সালের দাঙ্গা নিয়ে যা বলেছেন, তার পর ২০০২ সালের দাঙ্গাই একমাত্র শিরোনামে আছে বলে মনে হয় না। দাঙ্গা নিয়ে বললেও, কোন সালের দাঙ্গা, তা কিন্তু মমতা তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেননি।