
মমতার হাতে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের বাজেট বাড়ল অনেকটাই, আরও ৬ মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে কোথায়?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী, আবার তাঁরই হাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। এই বিভাগের বাজেট বরাদ্দ অনেকটাই বাড়ানো হলো ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য। করোনা মোকাবিলায় রাজ্যে বিপুল পরিকাঠামো গড়ে তোলা, ভ্যাকসিনের বন্দোবস্ত করা, সবমিলিয়ে করোনা-জয়ের লড়াইয়েও যে এগিয়ে বাংলা, তা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে বাজেট বিবৃতিতে।

স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বৃদ্ধি
গত বছরের ৭ জুলাই যে বাজেট পেশ করা হয়েছিল তাতে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ১৬,৩৬৮.৩৮ কোটি টাকা। আজ যে রাজ্য বাজেট অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পেশ করেছেন বিধানসভায়, তাতে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে ব্যয়বরাদ্দ বাড়়িয়ে করা হয়েছে ১৭,৫৭৬.৯০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, ২০১০-১১ সালে রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৩,৫৮৪ কোটি টাকা।

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা
বাজেট পেশের সময় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির চিত্রটিও তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্য সরকারের দাবি, বিগত ১০ বছরে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সূচকগুলির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব যেখানে ২০১১ সালে ছিল ৬৮.১ শতাংশ, তা ২০২০-২১ সালে বেড়ে হয়েছে ৯৮.২ শতাংশ। প্রসূতি মৃত্যুর হার সুস্থ শিশুর জন্মের নিরিখে ২০১১ সালে ছিল প্রতি লাখে ১১৩। ২০২১ সালে তা কমে হয়েছে ৯৮। ২০১১ সালে প্রতি হাজারে নবজাতকের মৃত্যুর হার ছিল ৩৪, চলতি বছরে তা কমে হয়েছে ২২, জাতীয়স্তরে যেটা এখনও ৩২।

করোনা মোকাবিলায়
রাজ্যে ১৬ হাজার ৭০৪ জন চিকিৎসক, এএনএম নার্স-সহ ৬৬ হাজার ৯৮৩ জন নার্স, ৭ হাজার ৮৮১ জন পার্শ্বচিকিৎসক, ৫৪ হাজার ৯০০ স্বাস্থ্যকর্মী স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার জন্য এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১,৯১৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ২০২১-২২ সালের ডিসেম্বর অবধি এই খাতে ব্যয় হয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য দফতরের দক্ষতার কারণেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বহু জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে দাবি রাজ্য সরকারের। সরকারি হাসপাতালে কোভিড শয্যা ৮৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কোভিড সিসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে ৯৫০ শতাংশ। কোভিড আক্রান্ত সদ্যোজাত শিশুদের জন্য সাড়ে তিনশো এসএনসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৮টি হাসপাতালে তর মেডিক্যাল অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ১৬টি প্লান্ট কাজ শুরু করেছে। ৭৭টি হাসপাতালে প্রেসার স্যুইং অ্যাডসর্পশন প্লান্ট বসানো হচ্ছে। রাজ্যে ১৩ কোটিরও বেশি মানুষের কোভিড টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। ৭ কোটি মানুষ প্রথম ও ৬ কোটি দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। আরও ১৭ লক্ষ ডোজ দেওয়া হয়েছে ৯ মাস পর নিয়মমাফিক।

নতুন দিগন্ত
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংযুক্ত হয়েছে ২.২ কোটি পরিবার। ২৪.৮৫ লক্ষ সুবিধাভোগী এই প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন। রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছে ৩,২১২.৭২ কোটি টাকা। চোখের আলো, টেলিমেডিসিন স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাস্থ্য ইঙ্গিত কেন্দ্র, ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ ছিল ১০টি, তা বর্তমানে ২৬টি। ৮টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজও হয়েছে। বারাসাত, আরামবাগ, ঝাড়গ্রাম, তমলুক, উলুবেড়িয়া ও জলপাইগুড়িতে আরও ৬টি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৬০০টি এমবিবিএস আসনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। ২০২১-২২ সালে ৯৯টি নার্সিং কলেজ চালু আছে। ৪২তম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চালু হতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায়। মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়ালের সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে কলকাতার আইপিজিএমইআর ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে উন্নতমানের ক্যানসার চিকিৎসা হাব হবে।