'হামসে জো...': মমতার স্লোগানের ছয়লাপ দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে উনি ২৩ মে-তেই আটকে রয়েছেন
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোধহয় এখনও মেনে নিতে পারছেন না। অথবা মেনে নিলেও বুঝি বা আতঙ্কিত বোধ করছেন ২০২১ সালের কথা ভেবে।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোধহয় এখনও মেনে নিতে পারছেন না। অথবা মেনে নিলেও বুঝি বা আতঙ্কিত বোধ করছেন ২০২১ সালের কথা ভেবে। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মমতা জানেন যে অতীতে পশ্চিমবঙ্গের দোর্দণ্ডপ্রতাপ বামেরাও ঠিক এইভাবেই ফাঁদে পড়েছিলেন ২০০৯ সালে এবং ঠিক তার দু'বছর পরেই তাঁদের চৌত্রিশ বছরের গণেশ ওল্টায়। মমতার তো সেখানে মাত্র আট বছরের গণেশ এই মুহূর্তে।
হরেক মেজাজে মমতা, তবে চাইছেন কী?
আর তাই নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বেড়ে গিয়েছে। কখনও তিনি নিজের দলের ঘরছাড়াদের প্রত্যাবর্তনের দাবিতে রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বা কখনও গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে যাচ্ছেন "জয় শ্রীরাম" স্লোগান দেওয়া লোকজনের দিকে। গত বুধবার, ৫ জুন, কলকাতার রেড রোডে ঈদের অনুষ্ঠানে গিয়ে মমতা ফের আরেকবার রাজনৈতিক বক্তব্য রাখলেন, নিশানায় ছিল সেই বিজেপি।
সংখ্যালঘুদের মসিহা হিসেবে মমতা বিকল্প কেন্দ্রবিন্দু হতে চাইছেন
সংখ্যালঘু অনুষ্ঠানে দেওয়া মমতার রাজনৈতিক বক্তব্যের তাৎপর্য রয়েছে। একদিকে যেমন এবারের নির্বাচনে তৃণমূল অনেক আসন বিজেপির কাছে খুইয়েছে, অন্যদিকে কংগ্রেস-বামেদের দীর্ঘদিনের গড় মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুর কেন্দ্রদুটিকেও জিতেছে প্রথমবার। আর যেহেতু মুর্শিদাবাদ জেলা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত, তাই সেখানে আসন জিতে মমতা সাধারণভাবেই তৃপ্ত। একদিকে কংগ্রেস-বামেদের তাদের গড়েই উৎখাত করা এবং অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের মসিহা হিসেবে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের রাজনীতির বিকল্প কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা, দু'টিই মমতার কাছে এক নৈতিক জয়।
কিন্তু তাই বলে "হামসে জো টাকরায়েগা, চুর চুর হো জায়েগা"?
নতুন কর্মোদ্যোগের কথা বলুন মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়া, স্লোগান দিয়ে কী হবে?
মমতা একজন আবেগপ্রবণ রাজনীতিবিদ সেকথা সর্বজনবিদিত কিন্তু তিনি যেভাবে হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন এখনও, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে তিনি নির্বাচনের ফল মনেপ্রাণে মানতে রাজি নন। একটি 'হাল্লা চলেছে যুদ্ধে' জাতীয় জিগির তুলে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে ক্রমাগত নৈতিক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু শুধু নৈতিকতা দিয়ে তো রাজনীতির লড়াই তো জেতা যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিন্তু একটিবারও শোনা বা দেখা যাচ্ছে না উন্নয়নের নতুন উদ্যোগের কথা বলতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও যেখানে বিপুল জনাদেশ পেয়েও প্রথমদিন থেকেই কাজে লেগে পড়েছেন, সেখানে মমতা এখনও ২৩ মে-র আগে এগোতে পারেননি। দলীয় আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের রাজনীতিতে আটকে রয়েছেন তিনি নিজে, তাঁর দল। যদি নেত্রী মনে করেন যে শুধু স্লোগান, পাল্টা স্লোগান আর চমকানো-ধমকানো দিয়েই তিনি একুশের নির্বাচনের আগের বাকি পথটুকু কাটিয়ে দেবেন, তাহলে তা বামেদের ঐতিহাসিক ভুলের চেয়েও বড় ভুল হবে।
ভুল শোধরানোর এবং সংস্কারের কাজে কবে মন দেবেন মুখ্যমন্ত্রী? হৈ-হৈ, রৈ-রৈ তো অনেক হল।
[আরও পড়ুন: দিনহাটায় তৃণমূল কর্মী খুনে চাঞ্চল্য, মারধরের পর গলা টিপে খুনের অভিযোগ ]
[আরও পড়ুন: নিমতায় আজ অগ্নিকন্যা মমতা, তৃণমূল নেতা খুনের প্রতিবাদ মিছিল ]