ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার মহার্ঘ্য সুযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে! একুশে বাংলা যখন বিজেপির টার্গেট
ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার মহার্ঘ্য সুযোগ মমতার কাছে! একুশে বাংলা যখন বিজেপির টার্গেট
দেশের রাজনীতি ক্রমেই ধর্মীয় মেরুকরণে বাঁধা পড়ছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে সর্বত্রই মেরুকরণের তাস খেলছে শাসকদল বিজেপি। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নরম হিন্দু্ত্বের ফাঁদে পা দিচ্ছে প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলই। দিল্লির ভোট হোক বা বাংলার, সর্বত্রই সেই খেলা। এবার তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে ফের ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার বিশাল সুযোগ।
ধর্মনিরপেক্ষ পথেই বিজেপিকে হারাতে পারবেন
এখন প্রশ্ন তিনি কি ধর্মনিরপেক্ষ পথেই বিজেপিকে হারাতে পারবেন, নাকি তিনিও নরম হিন্দুত্বকে আশ্রয় করে নির্বাচয় জয়ের চেষ্টা করবেন? সিএএ-র পর দেশ এমন দিকেই মোড় নিয়েছে যে, গোটা দেশে শয়ে শয়ে শাহিনবাগ গজিয়ে উঠেছে। দিল্লির শাহিনবাগের মতোই বাংলার পার্কসার্কাস রয়েছে। এর মধ্যে জোরালোভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি তোলা কঠিন।
ভোটে জিততে সবথেকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি
ভোটে জিততে সবথেকে বেশি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। নির্বাচনকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হিসাবেও বর্ণনা করতেও পিছপা হচ্ছে না। অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ায় দেশে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের ফলে দেশ এখন দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন কার্যকর করতে গিয়ে দেশে ধর্মীয় বিভাজন ঘটিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র।
এবার টার্গেট করেছে সবথেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গকে
এই অবস্থায় ভোট এবার পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে। ভোট আছে বিহার ও অসমেও। এই দুই রাজ্যে এখন ক্ষমতায় বিজেপি ও বিজেপি সমর্থিত শরিক দল। প্রথম তিন রাজ্যে বিজেপি কখনও জেতেনি। আর বিজেপি এবার টার্গেট করেছে সবথেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গকে। তাই পশ্চিমবঙ্গে মমতার ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা সবথেকে বেশি চ্যালেঞ্জের।
মুসলিম ভোটকে বজায় রেখে হিন্দু ভোটে নজর
এখন প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি নেতিবাচকতা প্রভাবগুলি কাটিয়ে উঠতে পারবেন? টানা তৃতীয়বার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা যেমন মমতার কাছে চ্যালেঞ্জ, তেমনই বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ মমতাকে হারিয়ে বাংলার পরিবর্তন আনা। রাজ্যজুড়ে যথেষ্ট পরিমাণে মুসলিম ভোটারের আধিপত্য রয়েছে। এই মুসলিম ভোটকে বজায় রেখে হিন্দু ভোটারদের মধ্যে তাঁর আবেদন বাড়াতে হবে। সে জন্য কঠোর ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি।
ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার মস্ত বড় সুযোগ মমতার
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ২০২১ সালের নির্বাচন ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার মস্ত বড় সুযোগ রয়েছে। বিজেপি তাদের মতো নির্বাচনী ইস্যু তৈরি করবে। কিন্তু নির্বাচনে জিততে এ রাজ্যে মমতাকে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কখনই তাঁকে ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হাঁটলে হবে না। আর হাঁটলেও অতি সন্তর্পণে হালকা হিন্দুত্ব আনতে হবে। তা না হলেই বিপদ।
মতুয়া ভোট ও আদিবাসী ভোটে নজর
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন উচ্চবর্ণের হিন্দুর ভোট রয়েছে, তেমনই নমশূদ্রদের ভোটও রয়েছে। সেই বিশেষ সম্প্রদায় মতুয়া ভোটে এখন পাখির চোখ করেছে বিজেপি। তা বজায় রাখতে হবে তৃণমূলকে। আবার আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কও রাখতে হবে। এখানেও থাবা বসাতে চাইছে বিজেপি। উভয়কেই সন্তুষ্ট রাখতে হবে। একইসঙ্গে মুসলমান ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রাখতে হবে।
সব সম্প্রদায়কে এক জায়গায় রাখা কঠিন কাজ
তাই ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া সমস্ত সম্প্রদায়কে এক জায়গায় রাখা কঠিন কাজ। বিজেপির বরং সহজ পন্থা ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটানো। মমতা অবশ্যই সেটাই চাইবেন। তা করতে গেলে ইস্যু করতে হবে উন্নয়নকে। ঠিক যেভাবে সাম্প্রতিক দিল্লি নির্বাচনে করতে সক্ষম হয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কৌশল প্রয়োগ করবেন বাংলায়।