তৃণমূল-বিজেপির সমীকরণ ঘেঁটে গিয়েছে, একমাত্র বামভোটই পারে ফারাক গড়ে দিতে
তৃণমূল-বিজেপির সমীকরণ ঘেঁটে গিয়েছে, একমাত্র বামভোটই পারে ফারাক গড়ে দিতে
বামদুর্গে থাবা বসালেও বিজেপির উত্তরণ চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। ২০০১ সাল থেকে তৃণমূলের আধিপত্য বিস্তার হলেও কিছু আসনে বাম ভোট রামে পরিণত হওয়ায় সংকট বেড়েছে শাসক দলের। এই অবস্থায় একমাত্র বাম ভোট নিজেদের বাক্সে ফিরলেই তৃণমূল জয় পেতে পারে। তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সমীকরণ ঘেঁটে গিয়েছে, এখন একমাত্র বামভোটই ফারাক গড়ে দিতে পারে।
ঘেঁটে গিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সমীকরণ
এমনই একটা কেন্দ্র হল নোয়াপাড়া। এই কেন্দ্রে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সমীকরণ ঘেঁটে গিয়েছে। ২০১৮-র উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জিতে আসা সুনীল সিং বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন এবার। আর তৃণমূল তাঁদের পুরনো সৈনিককে ফের একবার টিকিট দিয়েছে। এই অবস্থায় দুই তৃণমূলীর লড়াই নোয়াপাড়ায়।
তিন বছরে তৃণমূল ভেঙে ছত্রখান, পুরনো সৈনিকে আস্থা
২০০১ ও ২০১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন এবারের তৃণমূল প্রার্থী মঞ্জু বসু। তিনি মাঝে ২০০৬ ও ২০১৬-তে হেরে গিয়েছিলেন যথাক্রমে সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে। ২০১৮ সালে উপনির্বাচনে সুনীল সিং বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে এই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে নিয়ে আসেন। কিন্তু এরপর তিন বছরে তৃণমূল ভেঙে ছত্রখান হয়ে যায়।
তৃণমূলের হেভিওয়েটরা সবাই যখন বিজেপিতে
বিধায়ক সুনীল সিং বিজেপিয়ে যোগদান করেন। তার আগে যাঁর হাত ধরে তৃণমূলের বিধায়ক হওয়া সুনীল সিংয়ের, সেই অর্জুন সিং বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর একেবারে ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন ২০১৯-এর লোকসভায় অর্জুনের প্রতিদ্বন্দ্বী দীনেশ ত্রিবেদী। ফলে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের হেভিওয়েটরা সবাই বিজেপিতে।
বাম ভোট ফিরলেই রাম ভোট হাওয়া হয়ে যাবে
এই অবস্থায় পুরনো সৈনিক মঞ্জু বসুর উপরই ভরসা রেখেছে তৃণমূল। তৃণমূল মনে করছে, বাম ভোট যগি বামেই থাকে, তবে এই কেন্দ্রে তারাই জিতবেন। বিজেপি এখানে দাঁত ফোটাতে পারবে না। বাম ভোটেই ওরা শক্তি দেখাচ্ছে। কিন্তু ভোট বাক্সে বামেরা শক্তি ফেরালেই রাম ভোট হাওয়া হয়ে যাবে।
২০১৯-এর লোকসভা নিরিখে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে
২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও এই কেন্দ্রে বিজেপি ৫২৬ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূলের থেকে। অর্জুন সিংয়ের থেকে বেশি ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী। ২০১৯-এ বিজেপি পেয়েছিল ৭৮ হাজার ৪৩১ ভোট। আর তৃণমূল পেয়েছিল ৭৮ হাজার ৯৫৭ ভোট। সিপিএম পেয়েছিল ২৪ হাজার ৮৮৬ ভোট।
রাজনৈতিক সমীকররণ যতই উলট-পালট হয়ে যাক
তৃণমূল তাই আশা করছে বামেরা তাদের হারানো ভোট ফিরে পেলে বিজেপির হার নিশ্চিত। রাজনৈতিক সমীকররণ যতই উলট-পালট হয়ে যাক তৃণমূলের জয় আটকাবে না বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতে হারানো ভোট এলে। আর বিজেপি মনে করছে, এখানে তৃণমূলর সবাই এখন বিজেপিতে। তাই তৃণমূলের বিষদাঁত ভেঙে গিয়েছে। বিজেপির জয় আটকাবে না এই কেন্দ্রে।
একুশে তৃণমূল বিরোধী ভোট বামেদের দিকে!
শুধু এই কেন্দ্রেই নয়, বিজেপির চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে সিপিএম তথা বামেরা। বিজেপি নিশ্চিত হতে পারছে না তৃণমূল বিরোধী ভোট সব তাঁদের বাক্সে আসছে কি না। তারা মনে করছে, বেশকিছু আসনে তৃণমূল বিরোধী ভোট বামেদের দিকে গিয়েছে। বামেদের দিকে সেই ভোট যাওয়া মানে ফলাফল অন্যরকম হয়ে যেতে পারে।
বিজেপির পাশাপাশি বামেরা পেয়েছে বিরোধী ভোট
বিজেপি একপ্রকাশ নিশ্চিত এবার তৃণমূল বিরোধী ভোট পড়ছে ব্যাপকভাবে। এখন এই অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি বা সরকারবিরোধী ভোট বিজেপিতেই পড়ছে নাকি তা ভাগ হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। বেশ কিছু আসনে যে তা হয়েছে, অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস-বিরোধী ভোট বিজেপির পাশাপাশি একটা বড় অংশ বামেরা পেয়েছে, তা নিশ্চিত।
হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামও রয়েছে এই তালিকায়
বিজেপির একাংশ মনে করছে, তৃণমূল বিরোধী ভোটের একটা বড় অংশ সিপিএম বা বামেরা পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে যাদবপুর, টালিগঞ্জ, কসবা, পান্ডুয়া, চণ্ডীতলা, উত্তরপাড়া, দক্ষিণ হাওড়া প্রভৃতি আসন। এমনকী এই তালিকায় রয়েছে এবার বাংলার সবথেকে হাইভোল্টেজ বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামও।
বিজেপির আশঙ্কায় বামেদের সম্ভাবনার বার্তা
বিজেপি আবার কতকগুলি আসলে তেমন লড়াই দিতে পারেনি, তাও কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছে বিজেপির একাংশ। ভাঙড়, ক্যানিং পূর্ব, ক্যানিং পশ্চিম, ফলতা প্রভৃতি আসনে তাই তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি লড়াই হতে পারে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত বাম-কংগ্রেস বা আইএসএফ প্রার্থীদের। বিজেপির আশঙ্কাই এবার বামেদের সম্ভাবনার বার্তা দিয়েছে।
বাংলায় যদি তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগ হয়
বিজেপির আশঙ্কা, তৃণমূল বিরোধী ভোটের একটা বড় অংশ যদি বামেদের দিকে চলে যায়, তবে তাদের মিশন একুশের স্বপ্ন ধাক্কা খাবে। ২০১২ সালের উত্তরপ্রদেশের মতো হতে পারে পরিস্থিতি। সেবার চার ভাগে ভাগ হয়েছিল ভোট। ফলে বিজেপিকে হারতে হয়েছিল। এবারও বাংলায় যদি তৃণমূল-বিরোধী ভোট ভাগ হয়, তবে বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত।
সরকার-বিরোধী ভোটে ভাগ বসাতে পারে বামেরাও
তৃণমূল ১০ বছর বাংলায় ক্ষমতায় রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর তৈরি হয়েছে। তৃণমূল বিরোধী সেইসব ভোট তাদের দিকেই প্রায় আসবে বলে মনে করেছিল বিজেপি। কিন্তু অর্ধেক ভোট হয়ে যাওয়ার পর বিজেপির উপলব্ধি হয়েছে, সরকার-বিরোধী ভোটে ভাগ বসাতে পারে বামেরাও। তাহলে তৃণমূলের ক্ষমতায় ফেরা সহজ হবে।
বামেরা ২০১৯-এর তুলনায় ভোট বাড়াবে একুশে
স্থানীয় মণ্ডল কমিটি থেকে বিজেপি যে রিপোর্ট পেয়েছে বাংলার চার দফা ভোটের, তাতে স্পষ্ট বামেরা ২০১৯-এর তুলনায় বেশ খানিকটা ভোট বাড়াতে সম্ভবপর হচ্ছে। তা সত্ত্বেও বিজেপি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। বিজেপি একাংশ মনে করছে, বামেদের ভোট বাড়বে ঠিকই, তারা বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলের ভোটও কাটবে।
বড় দালাল সিপিএম-কংগ্রেস, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে বিজেপি, জিয়াগঞ্জে বিস্ফোরক মমতা