কালীর অঙ্গেই লক্ষ্মীবসনা! দীপান্বিতায় কালীঘাটের ‘মা’ পূজিতা হন লক্ষ্মীরূপে
কালীঘাটের মা শুধুই ত্রিনয়নী কৃষ্ণবর্ণা দেবীমূর্তি নন, ভক্তজনের নিত্যদিনের মা ইনি। তিনি জীবনদায়ী ফলদায়ী মাতারূপেই বেশি পরিচিত। দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে কালীঘাটের মহাকালীকে পুজো করা হয় লক্ষ্মীরূপে। কালী নয়, লক্ষ্মীকেই মূর্তির মধ্যে প্রত্যক্ষ করার রীতি এই শক্তিপীঠে। সারারাত ধরে মা লক্ষ্মীর আরাধনা চলে। পুজোরে রাতে কালীমাতাকে বিশ্রাম দেওয়া হয় এক ঘন্টার জন্য।

একান্ন পীঠের একপীঠ এই কালীঘাট। ভক্তদের কারও কাছে তিনি 'কালীমাতা', ভক্তি ভরে কেউ ডাকেন 'কালীমাতা ঠাকুরানি', কারও মুখে শোনা যায় শুধু 'মা' ডাক। নিত্যপুজোর সঙ্গেই কালীপুজোর ঘোর অমানিশার রাতে রাজবেশে অপরূপা সাজে আবির্ভূতা হন কালীঘাটের দেবী কালিকা।
তা বলে দেবীর নিত্যপুজোর রোজনামচায় কোনও পরিবর্তন হয় না। ভোরে দেবীকে জাগিয়ে মঙ্গলারতি করা হয়। দুপুরবেলা দেবীকে রাজবেশে এনে আরতি করে ভোগ দেওয়া হয়। ভোগ হিসেবে থাকে- বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, থাকে ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের ঝোল বা মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস।

সন্ধ্যেবেলায় কালীমূর্তিতেই লক্ষ্মীপুজো করা হয় কালীঘাটে। অসংখ্য পাটকাঠি জ্বেলে মন্দিরকে তিনবার প্রদক্ষিণ করার পর শুরু হয় দীপান্বিতার রাতে মায়ের রাত্রিকালীন পুজো। রাতে কিন্তু আমিশ ভোগ হয় না, নিরামিশ ভোগ দেওয়া হয় মাকে। প্রথমে নারায়ণের ভোগ দিয়ে, মায়ের হাত মুছে লুচি, আলুভাজা, বেগুনভাজা, জ্বাল দেওয়া দুধ, ছানার সন্দেশ, রাজভোগ দেওয়া হয়।
বছরের অন্যান্য দিনের মতোই কালীমাতা দু'বার রাজবেশ ধারণ করেন। কিন্তু দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে মাকে 'রাজরাজেশ্বরী মাতা' বলে মনে হয়। এমন শাড়ি বাছাই করা হয় যা তাঁকে সমৃদ্ধ করে তোলে অঙ্গসজ্জায়। লাল বেনারসী, জরিপাড়ের শাড়িতে সিঁদুর পরিয়ে 'রাজবেশ' ধারণ করানোর পর মোহময়ী কালীমাতা। সোনার গয়নার ঐশ্বর্যশালী মায়ের মূর্তি এদিন আরও বেশি করে সেজে ওঠেন ফুলের সজ্জায়। ঝুমকো ফুলের মালায় সাজেন মা কালী। রূপের নাচন দেখা দেয় কালো মেয়ের পায়ের তলায়।